বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার ভাঙচুর, যা জানা গেল

শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : সম্প্রতি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শহীদ মিনার ভাঙচুর করার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিওতে দেখা গেছে স্কুলের শিক্ষার্থীরা মিলে শহীদ মিনার ভাঙচুর করছে। ভিডিওতে ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা না জানিয়ে উল্টো শহীদ মিনার ভাঙচুর করা হচ্ছে এমন দাবি করা হয়। এছাড়া ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর সেখানে অনেককে মন্তব্য করতে দেখা যায়। ভিডিওটিতে ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাঙচুরের ঘটনা বলা হলেও ঘটনা গত ১২ই ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টার। ভাইরাল ভিডিওটি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার টিকারী বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা ও জানা যায়, টিকারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও টিকারী বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয় দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একই সাথে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনেই সুন্দর টাইলস করা একটি শহীদ মিনার। তার পাশেই পুরাতন শহীদ মিনারটি ছিল। মূলত বিদ্যালয়ের সামনে পাশাপাশি দুটি শহীদ মিনার ছিল। বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ সংকট থাকা এবং একইসাথে একটি নতুন শহিদ মিনার ও একটি জরাজীর্ণ শহীদ মিনার থাকায় তা অপসারণ করা হয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত হয় গত ১২ই ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ের পুরাতন শহীদ মিনার অপসারণ করার সময় নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন ভাঙচুরের ভিডিও ধারণ করে তার টিকটক আইডিতে পোস্ট করলে। পরবর্তীতে ওই ভিডিও ডাউনলোড করে বিভিন্ন ফেসবুক ছড়িয়ে পড়ে।
টিকারী বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক মোঃ শিহাব হোসেন বলেন, 'বিদ্যালয়ে নতুন একটি শহীদ মিনার তৈরি করা হয়েছে। তার পাশেই পুরাতন শহীদ মিনার যেটা জরাজীর্ণ ছিল। এছাড়া বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ স্বল্পতা এবং পাশাপাশি দুটি শহীদ মিনার থাকার কারণে পুরাতন শহীদ মিনার অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়। এ কারণে গত ১২ই ফেব্রুয়ারি ওই শহীদ মিনার ভাঙ্গা হয়। এ সময় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাব্বির শহীদ মিনার ভাঙার ভিডিও ধারণ করে। সাব্বির ওই ভিডিওটি তার টিকটক আইডিতে ছাড়ে। মূলত ভিডিওটি সেখান থেকেই ভাইরাল হয়।'
টিকারী বাজারে ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম উজ্জ্বল জানান, 'স্কুলের সামনে তার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন ধরে এই বাজারে ব্যবসা করেন। স্কুলের সামনে পুরাতন শহীদ মিনার ছিল। তার পাশেই নতুন করে আরেকটি শহীদ মিনার স্থাপন করে। এ কারণে পুরাতন শহীদ মিনারটি ভেঙ্গে দিয়েছে।'
ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান বলেন, '২১শে ফেব্রুয়ারির দিন বাচ্চার সাথে স্কুলের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছি। শহীদ মিনার ভাংচুর করা হয়েছে এটা মিথ্যা।'
টিকারী বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোঃ সাব্বির হোসেন বলেন, 'প্রথমত ভিডিওটি টিকটকে আপলোড করা ভুল হয়েছে আমার। ভাবতেই পারিনি ভিডিওটি এমন ভাবে ভাইরাল হবে। তবে এটা উদ্দেশ্যপ্রনোদিত না।তিনি আরও বলেন,স্কুলের সামনে নতুন একটি শহীদ মিনার করা হয়েছে। এ কারণে পুরাতন শহীদ মিনার ভেঙে ফেলা হয়। আমি ফেসবুকে কন্টেন্ট তৈরি করি। এই ভিডিওটি ফেসবুকে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ভিডিও করি। ফেসবুকে ভিডিও টা না আপলোড করে টিকটক আইডিতে আপলোড করি। সেখান থেকেই ভিডিওটি ডাউনলোড করে ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমার ভিডিওর ক্যাপশন ছিল, পাশেই নতুন শহীদ মিনার তৈরি করা হয়েছে এজন্য পুরাতন শহীদ মিনার ভেঙে ফেলা হয়েছে। এটা নিয়ে কেউ সমালোচনা করবেন না। তার পরেও ফেসবুকে ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে গেছে।'
টিকারী বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নওশের আলী বলেন, 'বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক খেলা করানো হয়। এসময় পাশাপাশি দুটি শহীদ মিনার থাকায় শিক্ষার্থীদের খেলতে অসুবিধা হচ্ছিল। যার কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা মিলে পুরাতন জরাজীর্ণ শহীদ মিনারটি অপসারণ করার সিদ্ধান্ত হয়। তারপর শিক্ষার্থীরা নিজেরাই শহীদ মিনারটি অপসারণ করে। তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার ভাঙচুর হয়েছে বলে অপপ্রচার করা হয়েছে সেটি সঠিক নয়।'
(এসআই/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫)