একে আজাদ, রাজবাড়ী : সেতু নির্মাণ (সিআইবিআরআর) প্রকল্পের আওতায় ২০২০ সালের ৩ জুন রাজবাড়ী,মাগুরা ও ঝিনাইদহ জেলার সীমান্তবর্তী  গড়াই নদীর নাদুরিয়া ঘাটে ব্রীজ নির্মাণের উদ্যেগ নেয় এলজিইডি বিভাগ। ৬৩ কোটি ৯১ লক্ষ ৬৮ হাজার ১৭০ টাকা ব্যায়ে কাজ শুরু করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মীর হাবিবুল আলম (জেভি) এর এমএম বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারিং। ২০২৩ সালের ৩ জুন কাজের মেয়াদ শেষ হলেও ব্রীজ নির্মাণ শেষ হয়নি। পরবর্তীতে ২ দফা কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। দিনক্ষেপন হওয়ায় কমেনি দুর্ভোগ। দ্রুত ব্রীজটির নির্মাণকাজ শেষ করার দাবি চলাচলকারীদের।

স্থানীয়রা জানায়, ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের পিএসসি গার্ডার সেতুটি নির্মিত হলে রাজবাড়ী জেলা হয়ে ঝিনাইদহ, নড়াইল, যশোর, সাতক্ষীরা, মাগুরা,খুলনা ও রাজবাড়ীর মানুষের যোগাযোগের সুবিধা বৈপ্লবিক প্রসার ঘটবে। এছাড়া ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতে এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে। সেতুটি চালু হলে এ জেলাগুলোর যাত্রীদের যাতায়াতে ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার পথ হ্রাস পাবে। সেই সাথে সময় ও অর্থ দুই-ই বাঁচবে মানুষের। তবে কাজের ধীরগতির কারণে হতাশা বাড়িয়েছে এ রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের। ২ দফা কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে কাজ ২০২০ সালের জুনে শুরু হলেও এ পর্যন্ত ৭৫ ভাগ শেষ হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হওয়ার আশা করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

সরেজমিন নাদুরিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ইঞ্জিন চালিত খেয়া নৌকায় যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। পাশেই সেতু নির্মাণ কাজ চলছে। ২০-৩০ জন শ্রমিক ধীরে ধীরে কাজ করছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মালামাল সরবরাহ না করায় কাজের ধীরগতি হচ্ছে। সেতুর পাশে এ্যাপোচ সড়ক নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ না করায় কাজ থমকে আছে।

চলাচলরত যাত্রী ও স্থানীয়রা বলেন, কয়েক বছর ধরে এ সেতুটির কাজ চলছে। সেতুটি নির্মাণ কাজ শেষ হলে আমাদের এক জেলা থেকে আরেক জেলায় যেতে ভেগান্তি কমবে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় যেতে ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার পথ কমে যাবে। জরুরি প্রয়োজনে নদীর এপার থেকে ওপারে যেতে নৌকায় অনেক সময় লাগে। সেতুটি হলে অনেক সুবিধা হবে। সেতুটি চালু হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। নতুন করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলার মধ্যকার বাণিজ্য প্রসার লাভ করবে। সেতুটি নির্মাণের ফলে আগামীতে এখানকার অর্থনীতিতে অপার সম্ভাবনা দেখছেন।

তারা বলছেন,এ সেতু বাস্তবায়ন হলে রাজবাড়ী, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া,ফরিদপুর পাবনাসহ আরো বেশ কয়েকটি জেলা সরাসরি সুফল পাবে। এছাড়াও লাঙ্গলবাঁধের এ সেতুর মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষ সরাসরি তিন ধরনের সুবিধা পাবে। প্রথমত, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের অগ্রগতির সাথে সাথে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় পরিবহন পথে সময় লাঘব হবে। দ্বিতীয়ত, বাণিজ্যিকভিত্তিক বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সম্ভাবনা আসবে। চারটি জেলার সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে। এতে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য বিস্তার লাভ করবে। রাজবাড়ী-মাগুরায় একে অপরের বিনিয়োগ বাড়বে। এছাড়াও, রাজবাড়ীর কৃষক সরাসরি উপকৃত হবেন। তাদের উৎপাদিত পচনশীল পণ্য সরাসরি খুলনা, মাগুরা ও অন্যান্য স্থানে পাঠাতে পারবেন। এতে পণ্যের ভালো দাম পাওয়া যাবে।

স্থানীয়রা বলেন, এ সেতু চালু হওয়ার পর রাজবাড়ীর সাথে মাগুরা ও ঝিনাইদহের সরাসরি পরিবহনে যোগাযোগ হবে এ লাঙ্গলবাঁধ সড়ক দিয়ে। রাজবাড়ী থেকে মাগুরা যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় ট্রলার ঘাটের বিড়ম্বনা এড়াতে সিংহভাগ গাড়ির গন্তব্য হবে এ সেতু। এতে সময় ও শ্রম দুটোই বাঁচবে। সেতু নির্মাণ কাজ চলমান থাকলেও ধীরগতি। কয়েকজন লোক দিয়ে এখানে কাজ করা হচ্ছে। এতে আরও কয়েক বছর লাগবে।

এমএম বিল্ডার্সের সুপার ভাইজার কাওসার হোসেন বলেন, কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল আরও আগেই। আমাদের মালিক বলেছেন আগামী ডিসেম্বর নাগাদ কাজটি শেষ করবো। এ সেতুটি ৩টি জেলার মানুষের উপকারে আসবে। দুই পাশে জমি অধিগ্রহণ কাজ শেষ হয়নি। এ কারণে মাটির কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।

পাংশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম আবু দারদা বলেন, এ সেতুর মাধ্যমে রাজবাড়ী ও মাগুরাসহ আরো বেশ কয়েকটি জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। মাগুরা, রাজবাড়ী ও ঝিনাইদহ জেলার মানুষ খুব সহজে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে নিতে পারবে। সবমিলিয়ে এটি রাজবাড়ীকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। সব সময় খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। নতুন জেলা প্রশাসক যোগদান করেছেন। দ্রুত জমি অধিগ্রহণ কাজ সম্পন্ন করা হবে।

রাজবাড়ী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ইউসুফ হোসেন বলেন, মাগুরা, রাজবাড়ী ও ঝিনাইদহ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় এ সেতুটি মানুষের উপকারে আসছে। সংযোগ সড়কের জন্য দ্রুত জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এ মৌসুমেই নির্মাণ কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।

(একে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২৫)