ফরিদপুরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সূর্যমুখীর হাসি
![](https://www.u71news.com/article_images/2025/02/05/_20250205_170511.png)
দিলীপ চন্দ, ফরিদপুর : সূর্যের দিকে তাকিয়ে হাসিমাখা এক ফুলের নাম সূর্যমুখী। আর তা যদি হয় দিগন্ত বিস্তৃত হাজার হাজার এ ফুলের সমাহার। সূর্যমুখী হলুদের আভায় চারদিকে যেন ছড়িয়ে আছে অপার মুগ্ধতায়। ফুলের পাপড়িগুলো বাতাসে দোল খেয়ে খেয়ে দর্শনার্থীদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে এক অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগে। এমনই এক মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যের দেখা মিলেছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ফরিদপুরে। এই ফুলের বাগানে অসংখ্য প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ ভির করছে প্রতিদিন। মানুষ যেন ফুলের রাজ্যে হারিয়ে যেতে পারে বাগানটি সাজানো হয়েছে এমনই এক অপরূপ নান্দনিক সাজে।
ফরিদপুর শহরের কাছেই ডোমরাকান্দি গ্রাম। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ধার ঘেঁষেই বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)। এর মধ্যেই তৈরি করা হয়েছে নজরকাড়া সূর্যমুখী ফুলের হলুদ আঙিনা। শীতের কুয়াশা ভেদ করে সূর্য উঁকি দিতেই আড়মোড়া ভেঙে এই সূর্যমুখী ফুলেরা জেগে ওঠে। আর সেই হলুদ ফুলের হাসিতে নিজেদের বৈকালীন সময় কাটাতে এখানে ছুটে আসেন শতশত প্রকৃতিপ্রেমী।
ফরিদপুরের সদর উপজেলার গঙ্গাবর্দী এলাকায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) খামারে কয়েক বছরের মতো এবারও চাষ করা হয়েছে সূর্যমুখীর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদপুরে দিনেদিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সূর্যমুখীর চাষ। স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে আবাদ। বিএডিসি খামারের বিশাল এলাকাজুড়ে রোপণ করা হয়েছে সূর্যমুখী ফুলের বীজ। এখন প্রতিটি গাছে ফুল ফুটেছে, যা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসছেন। দুপুরের পর থেকেই সূর্যমুখী বাগান নানা বয়সী মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। সূর্যমুখী ফুলের এ বাগানটি এখন সৌন্দর্যপ্রেমীদের কাছে দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।
পরিবার নিয়ে বাগান দেখতে আশা শহর ও আশেপাশের বাসিন্দা বলেন, সূর্যমুখী ফুলের বাগান ঘুরে দেখতে এসেছি । ভালো সময় কাটলো। বাগানে প্রবেশ করলেই মনে হবে, হলুদের আভায় চারিদিকেই যেন ছড়িয়ে আছে অপার মুগ্ধতা। সবুজ মাঠ আর হলুদ ফুলের ওপর মৌমাছি আর পাখির আনাগোনা চোখে পড়ার মতো।
ফরিদপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে খাবার তেল। এই ভোজ্য তেলের বেশিরভাগ চাহিদাই পূরণ করে সয়াবিন তেল থেকে। আর বাকি যেটুকু সেটুকু হচ্ছে সরিষা সূর্যমুখী ও অন্যান্য তেল থেকে পাওয়া যায়। যে তেল গুলা বাজারে বিদ্যমান রয়েছে এরমধ্যে সূর্যমুখী তেলটা অতি উত্তম বলা চলে। আমাদের ফরিদপুর সদর উপজেলায় গতবছর ৭ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছিল এবছর সে সংখ্যাটা ৯ হেক্টরে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।সূর্যমুখী চাষের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে কারণ সূর্যমুখী ফলন সরিষা থেকে একটু বেশি। অপরদিকে সরিষা থেকে তেলের পরিমাণ বেশি থাকে এবং গুণগত মানের দিক থেকেও সরিষার তেল থেকে সূর্যমুখী তেলের গুণগত মানটাও অনেক উত্তম।ফলে সূর্যমুখী চাষটা যদি আরও সম্প্রসারিত হয় তাহলে আমাদের বাংলাদেশের তেলের ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিএডিসি ফরিদপুরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মাহমুদুল ইসলাম খান জিয়া বলেন, ফরিদপুর ডাল তেল উৎপাদন খামারে এবছর পাঁচ একর জমিতে বারি ৩ জাতের সূর্যমুখী উৎপাদনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এর থেকে প্রায় চার টন বীজ উৎপাদন করা হবে যা আগামীতে কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হবে। সূর্যমুখী তেল মানব দেহের জন্য উপকারী। বাংলাদেশে সূর্যমুখী ব্যাপক হারে চাষ করা হলে আমাদের একদিকে তেলের চাহিদা পূরণ হবে অন্যদিকে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে তেলে। সূর্যমুখী তেলের পরিমাণ ৪০ থেকে ৪৫ ভাগ এ তেল ব্যবহার করা হলে মানুষের কিডনি রোগ, ক্যান্সার সহ অনেক রোগের কাজ করে থাকে। আমাদের এই খামারে ১২ থেকে ১৩ বছর ধরে সূর্যমুখী চাষ করে আসছি। প্রতিদিন এই সূর্যমুখীর মৌসুমে দূরদূরান্ত থেকে প্রকৃতিপ্রেমী এ ফুলের সৌন্দর্য দেখতে আসেন। পরবর্তীতে আমাদের উৎপাদিত এই গুণগত মানসম্পন্ন বীজই চাষী ভাইদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
(ডিসি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২৫)