সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : ভৈরবে ১৫ দিনের ব্যবধানে পাগলা কুকুরের কামড়ে আবারো শিশু বৃদ্ধাসহ ৫০ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পাগলা কুকুরটি তাদেরকে কামড় দেয়। আহতদের মধ্যে ৩৩ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেয়। এ ছাড়াও অন্যান্য আহতরা বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এর আগে ১৭ জানুয়ারি ও ১৮ জানুয়ারি ভৈরবে শিক্ষা প্রকৌশলীসহ ২৫ জন পাগলা কুকুরের কামড়ে আহত হয়েছিল।

কুকুরের কামড়ে আহতরা হলো, পৌর শহরের চণ্ডিবের এলাকার আব্দুর রহমান (১১), আসমা (৪৮), ৫ বছরের শিশু জান্নাত, বৃদ্ধা সাহেরা (৮০), ইয়ামিন (১২), ঈশান (১৪), আমলাপাড়া এলাকার ৬ বছরের শিশু হুসাইন, ভৈরবপুর এলাকার শাহারা বেগম (৫০), রামশংকরপুর এলাকার নারায়ণ চন্দ্র দাস (৪৫), মাজেদা (৪২), দীপ (১১), ৭ বছরের শিশু ফরিহা ইসলাম, মৌসুমি (৯), ৬ বছরের শিশু আব্দুর রহমান, তানজিনা (১০), রফিয়া (২৭), রাতুল (২০), মারুফা (১৭), রাজন (১৭), ইতি (২৫), ৪ বছরের শিশু আলেয়া, সাড়ে ৪ বছরের শিশু গাফফার ও রায় (১২), উপজেলার গোছামারা গ্রামের সুইটি (১৬), সখিনা (৩০), রাবিয়া (১৩), চাঁনপুর গ্রামের ফরিদা বেগম (৫৫), রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা বাচ্চু মিয়া (৫০), শিমুলকান্দি গ্রামের আয়েশা (৩৫), জামালপুর এলাকার ৩ বছরের শিশু আদিল, রিয়াদ (১০), শিবপুর গ্রামের মুনতাহা (২৭)। এদের মধ্যে ৫ বছরের শিশু জান্নাত ও আসমাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য মহাখালীতে প্রেরণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে স্থানীয়রা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ৩ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টা থেকে শহরের কালিপুরের রামশংকরপুর এলাকা থেকে পাগলা কুকুরটি কামড়ানো শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে শহরের চ-িবের, গাছতলাঘাট এলাকায়, ভৈরবপুর এলাকায় ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকার সামনে পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দা শিশু, বৃদ্ধাসহ বেশ কয়েকজন নারী পুরুষকে রাত পর্যন্ত কামড় দিয়ে আহত করে।
এ বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী শফিক মিয়া বলেন, রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ একটি কালো পাগলা কুকুর যাকে পাচ্ছে তাকেই কামড় দিচ্ছে দেখে কোন রকম দৌড়ে প্রাণে বেঁচে যায়।

এ বিষয়ে আহত পথচারী বাচ্চু মিয়া বলেন, আমি রসুলপুর নিজ বাড়িতে যেতে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম হঠাৎ একটি পাগলা কুকুর আমিসহ বেশ কয়েকজনকে কামড় দেয়। পরে আমি দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে এসে দেখি অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছে।

এ বিষয়ে রামশংকরপুর এলাকার আহত রাজন মিয়া বলেন, আমি বাড়ির সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ পাগলা কুকুরটি এসে আমাকে কামড় দেয়। আমি পড়ে গেলে দ্বিতীয় দফায় আমাকে কামড়ায়। আমার সাথে আরো ১০/১৫ জনকে কামড়িয়ে আহত করে। আমরা কুকুরটিকে আটকানোর অনেক চেষ্টা করেছি। কুকুরটি আমার এলাকাতে থাকতো।

এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহম্মদ বলেন, সোমবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত পাগলা কুকুরের কামড়ে ৩৩ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। এদের মধ্যে দুইজনকে ঢাকা মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। কুকুরটি শনাক্ত করতে পারলে বোঝা যাবে হাইড্রোফোবিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে কিনা। কুকুরটি যদি জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয় দ্রুত ভ্যাকসিন দিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, গত ১৫ দিন আগে দুইদিনে বেশ কয়েকজনকে পাগলা কুকুরে কামড়িয়েছে। আহত ১৫ জন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছিল।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শবনম শারমিন বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি কুকুরটি পাগল হওয়ার কারণ নিশ্চিত করে তারপর কুকুরটি দ্রুত শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(এসএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২৫)