রাজন্য রুহানি, জামালপুর : জামালপুরে জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি মশিউর রহমান বাবুর ছেলে রুবাঈদ রহমান মুগ্ধর বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ এবং পরে ভুয়া বিয়ে করে নিয়মিত ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন মুন্সিগঞ্জ জেলার সুমি আক্তার নামে এক যুবতী। মামলায় ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়া ওই যুবতীকে চেম্বারে ডেকে এনে নির্যাতন করে গর্ভপাত ঘটানো এবং আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধা প্রদান করায় জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী ও জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মশিউর রহমান বাবুকেও আসামি করা হয়েছে। অভিযুক্তরা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় ঘটনার সময় ওই যুবতীকে থানায় ও কোর্টে মামলা করতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। 

ধর্ষণের শিকার ওই নারীর নাম সুমি আক্তার। তিনি মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার পয়সা পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত রুবেল মিয়ার মেয়ে। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জামালপুর সদর থানায় তিনি এ মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, ২০২১ সালের দিকে জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মশিউর রহমান বাবুর ছেলে রুবাঈদ রহমান মুগ্ধর সাথে সুমির ফেসবুকে পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। সম্পর্কের অধিকারে সুমিকে জামালপুর বাণিজ্য মেলায় আসার অনুরোধ করেন মুগ্ধ। সুমি সরল বিশ্বাসে জামালপুর আসেন। মুগ্ধ তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শহরের জিগাতলা এলাকায় একটি বাসায় নিয়ে জোর করে ধর্ষণ করেন এবং মোবাইলে সেই দৃশ্য ধারণ করে রেখে দেন। ওই ঘটনার পর ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে তাঁকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন মুগ্ধ।

এসব কার্যকলাপে সুমি অনীহা প্রকাশ করলে ২০২২ সালের ২৩ মার্চ এফিডেভিটের মাধ্যমে তাকে ভুয়া বিয়ে করেন মুগ্ধ। সুমি ২০২২ সালে মে মাসে বুঝতে পারেন তিনি অন্তঃস্বত্বা। বিষয়টি মুগ্ধকে জানানো হলে মুগ্ধ যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। সুমি উপায়ন্তর না পেয়ে জামালপুর এসে মুগ্ধর বাবা মশিউর রহমান বাবুকে জানান বিষয়টি। বাবু প্রথমে ৪ লাখ টাকার মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসার প্রস্তাব দেন। এতে সুমি রাজি না হলে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরীর বাসায় ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে বাচ্চা নষ্ট করার জন্য প্রস্তাব দেন বাবু। এতেও রাজি না হলে মশিউর রহমান বাবু সুমিকে বেদম মারধর করেন। ফলে সুমির গর্ভের বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায়।

এ ঘটনায় সুমি থানায় মামলা করতে গেলে মামলার আসামিরা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর ব্যক্তি হওয়ায় সদর থানার তৎকালীন ওসি সেই মামলা গ্রহণ করেননি। পরে তিনি জামালপুর জজ কোর্টে মামলা দায়ের করতে গেলে সেখানে জামালপুর জেলা আওয়ামী সভাপতি এডভোকেট বাকী বিল্লাহ সেই মামলায় বাধা সৃষ্টি করে মামলা রুজু করতে দেননি।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ও সরকার পতনের পর পলাতক জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মশিউর রহমান বাবু ও তাঁর ছেলে রুবাঈদ রহমান মুগ্ধর মোবাইলে ফোন দিয়ে বন্ধ পাওয়া গেছে।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ফয়সাল মো. আতিক জানান, মামলায় ৩ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া এ মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছে আরও ৪ জন। আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।

(আরআর/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২৫)