‘নির্বাচিত সরকার আসার আগে মূল্যস্ফীতির পূর্ণ সমাধান কঠিন’
স্টাফ রিপোর্টার : নির্বাচিত সরকার আসার আগে মূল্যস্ফীতির পূর্ণ সমাধান কঠিন বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। একইসঙ্গে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পেছনে চাঁদাবাজিকে বড় কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন তিনি। আজ রবিবার বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানান অর্থ উপদেষ্টা।
সাক্ষাৎকারে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আগে যারা চাঁদাবাজি করতো তাদের পাশাপাশি রাজনীতিতে যারা জায়গা দখলের চেষ্টায় আছে তাদের লোকজন চাঁদাবাজি করছে এবং স্থানীয় পর্যায়ের অন্যান্য চাঁদাবাজরাও সক্রিয় আছে। নির্বাচিত সরকার আসার আগে এটির পুরোপুরি সমাধান কঠিন।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি এখানে লিগ্যাসি প্রবলেম। গত দুই-তিন বছর ধরে মূল্যস্ফীতির এ রকম অবস্থা হয় নাই। প্রচুর আয়-উপার্জন হয়েছে, অনেকে টাকা উড়িয়েছে। কোটি কোটি টাকার মেগা প্রজেক্টস (আরেকটি সমস্যা)। মেগা প্রজেক্টের সমস্যা হলো, রিটার্ন আর আউটপুট দ্রুত আসে না। ব্রিজ হলো, সরবরাহ চেইনে তো দ্রুত কোনো প্রভাব নাই। একই সময়ে রেমিট্যান্স অনেকটা কমে গেলো।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, মূল্যস্ফীতি আমরা একেবারে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি নাই, তা না। কিছুটা করেছি। খাদ্যে মূল্যস্ফীতি একটু বেড়েছে। কিন্তু নন-ফুডে আবার কিছুটা কমেছে। সামগ্রিকভাবে বেড়েছে। আমরা সরবরাহ ঠিক রাখার চেষ্টা করছি যতটা সম্ভব।
তিনি বলেন, সাপ্লাই চেইন ভেঙে গেছে। মধ্যসত্বভোগী অনেক। মহাস্থানগড় থেকে একটি ট্রাক ঢাকায় আসবে। পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চাঁদাবাজির কারণে ভাড়া পড়ে ১২ হাজার টাকা। চাঁদাবাজি তো কমে নাই।
এ সময় চাঁদাবাজি কমানো নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক সরকারের সুবিধা হলো, তার পলিটিক্যাল আর্মস ছিল। আমাদের তো সেরকম নাই। ইউ নো দ্য লিমিটিশেন। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, একজন দুজন ম্যাজিস্ট্রেট এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
তিনি বলেন, চাঁদাবাজিতে এখন তিনটি বড় দল জড়িত। এক, আগে যারা ছিল তারাও আছে; দুই, যারা এখন পলিটিক্যালি ইমার্জিং… মাঠপর্যায়ে আছে, তারাও চাঁদাবাজি করছে। তিন, স্থানীয় জনগণ। এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
রাজনৈতিক দলের ইস্যুতে প্রশ্ন করা হলে উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক দলের তো ভোটের দিকে নজর থাকে। তারা ক্ষমতায় যেতে চায়। বড় রাজনৈতিক দল যাদের একেবারে মাঠ পর্যায়ে কর্মী আছে, তাদের তো নিয়ন্ত্রণ করা এখন অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য একটু কঠিন হয়ে পড়ছে। দ্বিতীয়ত দুর্যোগের বিষয়টিও, কুমিল্লায় যেমন বন্যা হলো, শেরপুর-ময়মনসিংহে অতিবৃষ্টি হলো। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সমস্যার সম্মুখীন তো হয়েছি। তাই এখনো মুল্যস্ফীতি অনেক বেশি।
সমস্যাটা সমাধান হবে কি না, এমন প্রশ্নে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। আমরা আশা করছি, জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ এর নিচে নিয়ে আসতে পারবো। একেবারে পাঁচ-ছয়-চারে চলে যাওয়া অসম্ভব। পাঁচ তো আদর্শিক অবস্থান।
পরে সিন্ডিকেট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিন্ডিকেট ভাঙতে চেষ্টা করছি। আমাদের এখন সরকারি কয়েকটি সংস্থার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে, যারা কিনা পর্যাপ্ত নয়। টিসিবি কার্ড দিয়ে বা ডেপুটি কমিশনার, ইউএনও দিয়ে তো মার্কেট কনট্রোল করা যাচ্ছে না। তারা একবার গেল, পরে চলে এলো। পুলিশও আগের মতো সক্রিয় না। মূল বিষয় হচ্ছে, জনগণকে সচেতন হতে হবে।
(ওএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২৫)