শ্যামনগরে দুই বিএনপি নেতার নেতৃত্বে সরকারি দীঘির মাছ লুট
রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : দুই বিএনপি নেতার নেতৃত্বে ১৪ বিঘা আয়তনের কালিঞ্চি সরকারি দীঘি থেকে লক্ষাধিক টাকা মুল্যের মাছ লুটের অভিযোগ উঠেছে। আব্দুল মজিদ ও সোহরাব আলী নামের ঐ দুইজন যথাক্রমে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার রমজাননগর ইউনিয়ন বিএনপি সাধারণ সম্পাদক ও অর্থ সম্পাদক পদে রয়েছেন।
শনিবার সকাল ছয়টার দিকে তাদের নির্দেশে উপজেলার কালিঞ্চি গ্রামের প্রশান্ত, শাহিনুর ও সুকুমার নামের তিন ব্যক্তি জাল টেনে উক্ত মাছ লুটে নেয় বলে অভিযোগ।
লুটকৃত মাছের মধ্যে প্রায় ২২ কেজি ওজনের ভেটকিসহ রুই, মৃগেল, পাঙাশ ও কাতল মাছ রয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। বাঁধা দেয়া হলেও এসব মাছ পাঁচ বছর আগে উক্ত দীঘি লিজ নেয়ার সুযোগে তারা সেখানে ছাড়ার দাবি করেন বলেও জানান স্থানীয়রা।
কালিঞ্চি গ্রামের আব্দুল হামিদ লাল্টু জানান শনিবার খুব ভোর থেকে ১০/১২ জন জেলেকে নিয়ে কালিঞ্চি সরকারি দীঘিতে জাল টানতে শুরু করে প্রশান্ত, সুকুমার ও শাহিন। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যেয়ে মাছ ধরতে নিষেধ করা সত্ত্বেও তারা বিএনপি নেতা সোহরাব হোসেনের নির্দেশে মাছ ধরার কথা জানান।
সকাল থেকে উক্ত দীঘি থেকে ধরা প্রায় সাত বস্তা মাছ তারা স্থানীয় সোনারমোড় মৎস্য আড়তে বিক্রি করে বলেও জানান তিনি।
একই এলাকার ৯ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আজগর আলী বুলু জানান বহিরাগত জেলেদের নিয়ে সকাল থেকে মাছ লুট করা হয়। তিনটি মটর সাইকেলযোগে ছয়টিরও বেশী বস্তায় করে এসব মাছ সোনারমোড় আড়তে নিয়ে গেছে তারা। কয়েকটি ভেটকটি মাছ ২০ কেজিরও উপরে বলেও তিনি দাবি করেন।
আশপাশের ছয় গ্রামের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ উক্ত দীঘির পানি পান করে- জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এভাবে জাল টেনে মাছ শিকারের ফলে স্থানীয়রা উক্ত দীঘি থেকে খাবার উপযোগী পানি নিতে পারছে না।
মাছ লুটের বিষয়ে জানতে চাইলে সুকুমার মন্ডল বলেন, সোহরাব মেম্বরের নির্দেশে তারা মাছ ধরেছেন। প্রায় পাঁচ বছর আগে তিনি এসব মাছ ছেড়েচিলেন বলেও জানায় সুকুমার।
অভিযোগের বিষয়ে সোহরাব আলী জানান, অসুস্থতার কারনে বাড়িতে অবস্থান করছেন। তবে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের উক্ত দীঘি লিজ নেয়া জনৈক রাকিব হোসেন ও ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আব্দুল মজিদ আগে এসব মাছ সেখানে ছেড়েছিলেন বলে তিনি দাবি করেন।
আব্দুল মজিদ জানান মাছ ধরার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা রাকিব তাকে মাছ ধরার কথা জানিয়েছিলেন।
নিজেকে জেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা পরিচয় দিয়ে রাকিব হোসেন জানান প্রাক্তন আ’লীগ নেতা গোলাম মোস্তফা মুকুল জেলা পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তার ডাকের দীঘির মাছ লুটে নিয়েছিল। বাধ্য হয়ে তিনি তার ছাড়া মাছ এতদিন পর তুলে নিতে বাধ্য হয়েছেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) মোঃ খলিল হোসেন জানান এভাবে মাছ ধরার কথা না। কাউকে ইজারা দেয়ার প্রশ্ন উঠে না। এখনই তত্ত্বাবধায়ককে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
(আরকে/এএস/ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২৫)