টাঙ্গাইলে আ’লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলার রায় কাল
স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল : আওয়ামীলীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার রায় হবে আগামীকাল রবিবার। বহুল আলোচিত এ মামলায় খান পরিবারের চার সন্তান টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান ওরফে রানা, টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান ওরফে মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান ওরফে কাঁকন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান ওরফে বাপ্পা আসামি। এই চার ভাই ছাড়াও ফারুক হত্যা মামলায় আরও ১২ জন আসামি রয়েছেন। এই প্রথম খান পরিবারের বিরুদ্ধে করা কোনো মামলার রায় হচ্ছে। এ নিয়ে টাঙ্গাইলে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা।ওই হত্যা মামলায় এঁদের মধ্যে বিচার চলাকালে দুই আসামি আনিছুর রহমান ওরফে রাজা ও মোহাম্মদ সমির কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছেন। চলতি বছর ২৬ জানুয়ারি ফারুক হত্যা মামলার বাদী ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে শেষ হয়েছে। বিচারক মো. মাহমুদুল হাসান রবিবার মামলার রায় ঘোষণার তারিখ দিয়েছেন।
খান পরিবারের এই চার সন্তানের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি, দখল, সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে মামলা হয়েছে। আমানুর রহমানের বিরুদ্ধে অন্তত পাঁচটি হত্যা মামলাসহ অর্ধশতাধিক মামলা হয়। সহিদুর রহমানের বিরুদ্ধেও পাঁচটি হত্যাসহ মামলা হয়েছে প্রায় ৪০টি। জাহিদুরের বিরুদ্ধে তিনটি হত্যাসহ, সানিয়াতের বিরুদ্ধে চারটি হত্যাসহ ডজনখানেক মামলা হয়েছে। এত মামলা হলেও তাঁদের কখনো বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি। কখনো তাঁদের বিরুদ্ধে করা মামলা রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার হয়েছে, কখনো বাদীপক্ষকে চাপ দিয়ে মামলা তুলে নিতে বাধ্য করেছেন। আবার কখনো ভয়ে কেউ সাক্ষ্য দিতে যাননি। ফলে এর আগে তাদের বিরুদ্ধে করা কোনো মামলার বিচার হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ তাঁর কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর তাঁর স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ২০১৪ সালের আগস্টে এই হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আনিসুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আলী নামের দুজনকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাঁরা আদালতে জবানবন্দি দেন। তাঁদের জবানবন্দিতে আমানুর রহমান, সহিদুর রহমান, জাহিদুর রহমান ও সানিয়াতের নাম বের হয়ে আসে। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওয়াহেদ, আবদুল খালেক ও সনি আদালতে জবানবন্দি দেন। তাঁদের জবানবন্দিতেও হত্যার বর্ণনা উঠে আসে। এরপর চার ভাই আত্মগোপনে চলে যান। আমানুর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তিন বছর হাজতে থাকার পর জামিন লাভ করেন। ৫ আগস্টের পর তিনি আবার আত্মগোপনে চলে যান। অপর দুই ভাই ২০১৪ সাল থেকে বিদেশে অবস্থান করছেন বলে তাঁদের ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন। গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মাহফীজুর রহমান ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারী আমানুররা চার ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। গত ২৬ জানুয়ারি ফারুক হত্যা মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি মোহাম্মদ সাইদুর রহমান ওরফে স্বপন বলেন, যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে ২৭ জন সাক্ষীর জবানবন্দি, জেরা, কয়েকজন আসামি ও সাক্ষীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনা করে আদালতকে শোনানো হয়েছে। আমরা যুক্তিতর্ক দিয়ে প্রমাণে সক্ষম হয়েছেন যে আসামিরা দোষী। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশা করি।
নিহতের পরিবার জানায়, ‘মামলা থেকে তদন্ত, আদালতে অভিযোগ গঠন, সাক্ষী গ্রহণসহ বিভিন্ন পর্যায়ে আসামিরা বিচারপ্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করেছেন। আইন সঠিক পথে চললে আসামিদের শাস্তি হবে বলে আশা করছি।’
(এসএম/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২৫)