ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


শুরু হলো ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। শুরু হলো ছোট্ট সোনামণির মুখে আধো আধো বুলিতে ‘অ আ ক খ’ বলার ইতিহাসের গল্প। জুলাই গণঅভ্যুত্থান নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ—মূল প্রতিপাদ্য নিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে অমর একুশে বই মেলা। ওই দিন বিকেল ৩টায় বই মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে যারা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তাদের অমলিন স্মৃতি স্মরণের মাস ফেব্রুয়ারি।

আজ শনিবার সকালে যে সূর্যের উদয় হবে, তাতে মিশে থাকবে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি’র করুণ সুর।

বাঙালির কাছে এই মাস ভাষার মাস, দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হওয়ার মাস। তাই তো বাঙালি জাতি পুরো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে ভালোবাসা জানাবে ভাষা শহীদদের প্রতি।

‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’ পাকিস্তান সরকারের এমন ঘোষণার প্রেক্ষাপটে পূর্ব বাংলায় অবস্থানকারী বাংলাভাষী সাধারণ জনগণের মধ্যে গভীর ক্ষোভের জন্ম হয়। জাগে বিরূপ প্রতিক্রিয়া।

পূর্ব বাংলার বাংলাভাষী মানুষ আকস্মিক ও অন্যায্য এ সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি। তাই বাংলাভাষার সমমর্যাদার দাবিতে পূর্ব বাংলায় আন্দোলন দ্রুত দানা বেঁধে ওঠে। আন্দোলন দমনে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে ঢাকা শহরে মিছিল, সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এই আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মী মিলে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে নিহত হন সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকসহ নাম না জানা আরও অনেকে।

এরপর পথ পরিক্রমায় রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি পায় মাতৃভাষার মর্যাদা এবং আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেরণা। সেই পথ ধরে শুরু হয় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন এবং একাত্তরে নয় মাসব্যাপী স্বাধীনতা যুদ্ধ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

ভাষার জন্য বাংলার দামাল সন্তানদের আত্মত্যাগ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর। এদিন ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ঘোষণা করে। এর মধ্য দিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালন করা হয়। কেননা পৃথিবীর একমাত্র জাতি হিসেবে বাঙালিই ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিল।

ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকেই শুরু হচ্ছে নানা কর্মসূচি। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার আবার হয়ে উঠবে জমজমাট। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এ মাসে আয়োজন করবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের। মেলার পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. সরকার আমিন মেলা প্রসঙ্গে বলেন, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত (৮ ফেব্রুয়ারি ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্যতীত)। এছাড়া ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহিদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টা এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।

>৫৫৫টি সৃজনশীল প্রকাশনী পাচ্ছে ৯০১ ইউনিট

প্রতিষ্ঠানকে ৯০১ ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫৪টি প্রতিষ্ঠান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৮৯৯ ইউনিট বরাদ্দ পেয়েছে। নতুন প্রকাশনী হিসেবে সুযোগ পাচ্ছে ৮৫টি নতুন প্রতিষ্ঠান। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে এক ইউনিটের স্টল বরাদ্দ পেয়েছে ২৪২টি প্রতিষ্ঠান, দুই ইউনিট পেয়েছে ২৮৪টি, তিন ইউনিট পেয়েছে ১৪৭টি, চার ইউনিট পেয়েছে ১০৪টি প্রতিষ্ঠান। ২০/২০ সাইজের প্যাভিলিয়ন পেয়েছে ১২টি প্রতিষ্ঠান, ২৪/২৪ সাইজের প্যাভিলিয়ন পেয়েছে ১৪টি প্রতিষ্ঠান। বাংলা একাডেমি চত্বরে ২৪/২৪ সাইজের একটি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ রয়েছে খোদ বাংলা একাডেমির জন্য। শিশু চত্বরে এক ইউনিট পেয়েছে ২৯টি প্রতিষ্ঠান, দুই ইউনিট পেয়েছে ৪৬টি, তিন ইউনিট পেয়েছে ২১টি প্রতিষ্ঠান। এবার শিশু চত্বরে কোনো প্রতিষ্ঠানকে প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।

ইতিহাসের পাতায় বই মেলা

অমর একুশে গ্রন্থমেলা আমাদের কাছে ব্যাপকভাবে একুশে বইমেলা নামেই পরিচিত। স্বাধীন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম এই মেলার ইতিহাস স্বাধীন বাংলাদেশের মতোই প্রাচীন।

যতদূর জানা যায়, ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি শ্রী চিত্তরঞ্জন সাহা বাংলা একাডেমীর বর্ধমান হাউসের সামনের বটতলায় এক টুকরো চটের ওপর কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই সাজিয়ে বইমেলার শুরু করেন। এই ৩২টি বই ছিলো চিত্তরঞ্জন সাহা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ (বর্তমানে মুক্তধারা প্রকাশনী) থেকে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে অবস্থানকারী বাংলাদেশি শরণার্থী লেখকদের লেখা বই।

১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমী মহান একুশে মেলা উপলক্ষে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশেষ হ্রাসকৃত মূল্যে একাডেমী প্রকাশিত বই বিক্রির ব্যবস্থা করে। এর পাশাপাশি মুক্তধারা, স্টান্ডার্ড পাবলিশার্স এবং এদের দেখাদেখি আরও কেউ কেউ বাংলা একাডেমীর মাঠে নিজেদের বই বিক্রির ব্যবস্থা করে।

১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমী ১৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করে। এ উপলক্ষে বাংলা একাডেমী তার নিজস্ব প্রকাশিত বই প্রদর্শন ও ম্যুরাল প্রদর্শনীর আয়োজন করে। বই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন প্রফেসর আবু মহাম্মেদ হবীবুল্লাহ।

ঐ গণজমায়েতকে সামনে রেখে ঢাকার বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান একাডেমীর পূর্বদিকের দেয়াল বরাবর নিজেদের পছন্দমতো জায়গায় যে যার মতো কিছু স্টল নির্মাণ করে বই বিক্রির ব্যবস্থা করে। এতে বাংলা একাডেমীর কোনো ভূমিকা ছিলো না শুধু মাঠের জায়গাটুকু দেওয়া ছাড়া।

১৯৭৫ সালে একাডেমী মাঠের কিছু জায়গা চুনের দাগ দিয়ে প্রকাশকদের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়। প্রকাশকরা যে যার মতো স্টল তৈরি করে বই বিক্রির ব্যবস্থা করে। এ অবস্থা চলতে থাকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত। এ সময় পর্যন্ত এই আয়োজনের কোনো স্বীকৃতি ছিলো না। কোনো নামও দেওয়া হয়নি। সংবাদপত্রের প্রতিবেদনেও এর কোনো উল্লেখ থাকতো না।

১৯৭২ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমীর অনুষ্ঠানসূচিতেও এই কার্যক্রমের কোনো উল্লেখ করা হয়নি।

১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমীর তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমীকে মেলার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত করেন।

১৯৭৯ সালে মেলার সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি। এই সংস্থাটিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা। ঐ সময় অমর একুশে উপলক্ষে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বইমেলা অনুষ্ঠিত হতো। মেলার তখন নাম ছিলো একুশে গ্রন্থমেলা।

১৯৮১ সালের একুশে বইমেলার মেয়াদ কমিয়ে ২১ দিনের পরিবর্তে ১৪ দিন করা হয়। কিন্তু প্রকাশকদের দাবির মুখে ১৯৮২ সালে মেলার মেয়াদ পুনরায় বৃদ্ধি করে করা হয় ২১ দিন। মেলার উদ্যোক্তা বাংলা একাডেমী। সহযোগিতায় ছিলো জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি।

১৯৮৩ সালে মেলার সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রকে বাদ দেওয়া হয়। ১৯৮৪ সাল থেকে এই মেলা মেলার নতুন নামকরণ করা হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’।

প্রকাশকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বাড়ানো হয় মেলার পরিসর। সেই ৩২টি বইয়ের ক্ষুদ্র মেলা কালানুক্রমে বাঙালির প্রাণের বইমেলায় পরিণত হয়েছে। পরিণত হয়েছে লেখক প্রকাশক পাঠকদের মহামিলন তীর্থে।

আগে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিন থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হতো। এরপর ক্রেতা, দর্শক ও বিক্রেতাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮৪ সাল থেকে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে এই মেলা নিয়মিতভাবে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

বইমেলা : বইমেলা’ কিংবা ‘গ্রন্থমেলা’ শব্দ দু’টির যেকোনো একটি শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে বাংলা একাডেমী আয়োজিত একুশে বইমেলা। যে মেলা বইপ্রেমী মানুষের প্রাণে দোলা দেয়।

মনুষ্যত্ব বিকাশের মাধ্যম : শিক্ষিত মানুষের বেঁচে থাকার অন্যতম রসদ হল বই। বই হল আয়নার মতাে, যাতে আমাদের মনের প্রতিবিম্ব ধরা পড়ে। বইয়ের মতাে অন্তরঙ্গ সহচর পৃথিবীতে আর কিছু নেই। আমাদের নিঃসঙ্গ মুহূর্তগুলিকে বই ভরিয়ে তােলে। শিশু-কিশােরের কাছে বই দিগদর্শনের কাজ করে। তবে বইমেলা সাধারণভাবে অনুষ্ঠিত রথের মেলা, গাজন মেলা প্রভৃতি মেলাগুলি থেকে একটু স্বতন্ত্র। এটা বইপ্রেমী মানুষের মিলনতীর্থ।

মিলনমেলা : বইকে কেন্দ্র করে বইমেলা প্রাঙ্গণে এক হৃদ্য পরিবেশে সামাজিক মেলবন্ধন গড়ে উঠতে দেখা যায়। বইমেলায় প্রকাশক এবং পুস্তক বিক্রেতারা বিশ্বের নানা প্রান্তের নানা বিষয়ের বই এনে বিভিন্ন রুচির মানুষের সামনে হাজির করেন। সাধ আছে সাধ্য নেই, এমন বইপ্রেমী মানুষ বইমেলায় এসে বিভিন্ন বইয়ের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযােগ পেয়ে যায়। বইমেলা জ্ঞানের অসীম ভাণ্ডারকে আমাদের সামনে উন্মুক্ত করে দেয়। বইমেলার উপযােগিতা দ্বিবিধ। বইমেলায় পাঠক বিপুলসংখ্যক বইয়ের সান্নিধ্যে এসে যেমন আনন্দ পায়, তেমনি প্রকাশক ও বিক্রেতারা বাণিজ্য করার সুযােগে সামগ্রিকভাবে লাভবান হয়।

পরিশেষে বলতে চাই, অমর একুশে বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা। বাংলাদেশে হাজারো মেলার মাঝে বইমেলার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের সাহিত্য ও বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঘটছে মূলত এ মেলাকে কেন্দ্র করে। বাঙালীর ভাষা, সংস্কৃতি বোধ ও ঐতিহ্য হলো অমর একুশে বইমেলার ভিত্তি। লেখক, পাঠক এবং প্রকাশকদের কাছে অমর একুশে বইমেলা এক সেরা উৎসব। সবারই মিলনমেলা বাংলা একাডেমির বইমেলা। এদেশের সকল শ্রেণীর পাঠক সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে কখন বসবে অমর একুশে বইমেলা কবে বসবে বাঙালীর মিলনমেলা। ভাষা আন্দোলন, বাংলা একাডেমি আর একুশের বইমেলা একই সূত্রে গাথা। একুশের ভাষা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান ফসল বাংলা একাডেমি। একুশে বইমেলা বিকশিত হয়েছে বাংলা একাডেমিকে কেন্দ্র করে। নবগঠিত বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক সাহিত্যিক জাগরণের প্রথম প্রকাশ ‘অমর একুশে বইমেলা’। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বইমেলার আয়োজন করা হয়। ভাষা আন্দোলনের গৌরবের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতেই বইমেলার নামকরণ করা হয় ‘অমর একুশে বইমেলা’

লেখক : কলাম লেখক ও গবেষক, প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।