স্টাফ রিপোর্টার : এবার ‘মহাকবি মাইকেল মধুসূদন পদক’ পাননি কেউ। সৃষ্টিশীল সাহিত্য ও গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০৯ সাল থেকে এ পদক দিয়ে আসছে যশোরের জেলা প্রশাসন।

আয়োজকরা বলেছেন, যারা পদকের জন্য এবার আবেদন করেছিলেন তাদের জমা দেওয়া কোনো বই মানসম্মত মনে হয়নি। সে কারণে এবার কোনো পদক দেওয়া যায়নি।

পদক না দিলেও এবার মধুমেলা ছিল খুবই আড়ম্বরপূর্ণ।

মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতিবিজড়িত যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়িতে প্রতি বছরের মতো এবারও বসে মধুমেলা। জেলা প্রশাসন আয়োজিত মেলাটি ২৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ৩০ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী স্থায়ী। হয়।

শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মধুমেলা হলেও মহাকবির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ২০০৯ সাল থেকে নিয়মিতভাবে প্রদান করা হয় ‘মহাকবি মাইকেল মধুসূদন পদক’। দুটি ক্যাটাগরিতে এ পদক দেওয়া হয়। তবে, বিশেষ ক্ষেত্রে কখনো কাউকে ‘বিশেষ সম্মাননা’ও প্রদান করা হয়েছে। যারা যে বছর পদক লাভ করেন ওই বছরে তাদের প্রকাশিত বই-ই পদকের জন্য বিবেচিত হয়।

পদকের জন্য মনোনীতরা একটি মেডেল ও এক লাখ টাকার চেক পান।

২০২৩ ও ২০২৪ সালেও পদক দেওয়া হয়েছিল। কবি সুহিতা সুলতানা নামে এক কবি সর্বশেষ পদক পান।

এবার কোনো পদক না দেওয়ার বিষয়ে যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) খান মাসুম বিল্লাহ সাংবাদিকদের বলেছেন, এ বছর জুরিবোর্ডে যেসব বই জমা পড়েছে তার মধ্যে মানসম্মত কোনো বই পাওয়া যায়নি। সে কারণে এবার পদক দেওয়া হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে সাগরদাঁড়ির মধুসূদন একাডেমির পরিচালক ও মহাকবি মাইকেল মধুসূদন পদক পাওয়া সাহিত্যিক খসরু পারভেজ বাংলানিউজকে বলেছেন, যদি কোনো ভালো বই না পাওয়া যায় তাহলে পদক দেবে কেন? বেঙ্গল ফাউন্ডেশনও কয়েকবার ভালো বইয়ের অভাবে তাদের দেওয়া পদক দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে। এটিই হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার সমাপ্তি ঘোষণা করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ। সভাপতিত্ব করেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার। ধন্যবাদ জানান যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম।

স্থানীয়রা বলেছেন, এবারের মেলা অন্য যেকোনো বারের তুলনায় জমজমাট। গত সাতদিনে মেলাকে কেন্দ্রে করে সাগরদাঁড়িতে লাখ লাখ মানুষের পদচারণা ঘটেছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আবালবৃদ্ধবণিতার উপস্থিতিতে মেলা ও এর আশপাশের এলাকা হয়ে উঠেছে সরগরম। সবাই মহাকবির স্মৃতিবিজড়িত নানা স্থান পরিদর্শন করেছেন। দেখেছেন কবির ব্যবহারের জিনিসপত্র। প্রাণখুলে উপভোগ করেছেন আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

শীত উপেক্ষা করে জমজমাট এই মেলা উৎসবে রূপ নেয়। কবির জন্মভূমির স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষ নদ পাড়, জমিদার বাড়ির আম্রকানন, বুড়ো কাঠবাদাম গাছতলা, বিদায় ঘাট, মধুপল্লীসহ মেলা প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীদের ছিল উপচেপড়া ভিড়। এবারের মধুমেলার ভেতর কৃষি মেলা মন কেড়েছে সকলের। মেলা ঘিরে এ এলাকার মানুষের বাড়িতে মেয়ে-জামাই, বন্ধু-বান্ধবসহ অতিথিদের উপস্থিতিতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে।

মেলা উপলক্ষে মধুমঞ্চে সপ্তাহব্যাপী কেশবপুর ও যশোরের শিল্পীগোষ্ঠীর পাশাপাশি দেশবরেণ্য শিল্পীদের পরিবেশনাসহ, সার্কাস, যাদু প্রদর্শনী, ভূতের বাড়ি ও মৃত্যুকূপ মুগ্ধ করে তোলে দর্শকদের। নাগরদোলা, ড্রাগন ট্রেনসহ বিভিন্ন আয়োজন শিশুদের বিনোদিত করেছে। কুটির শিল্পসহ পাঁচ শতাধিক বিভিন্ন পণ্যের স্টল বসে মেলায়। এবারের মধুমেলার অন্যতম আকর্ষণ কৃষি মেলা। কৃষকদের আনা বিশাল আকৃতির মেটে আলুসহ বড় বড় মিষ্টি কুমড়া, মান কচু, স্কোয়াশ, হাজারী কলার কাঁদি, লাউ, মুলা, ওলকপি, রঙিন বাঁধাকপি, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, ক্যাপসিকাম, ব্রোকলি, বারোমাসি কাঁঠাল, পেঁপেসহ শতাধিক কৃষি পণ্য দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে।

বালিশ মিষ্টি, মটকা চা ও আগুন পান রসনা বিলাসীদের কাছে এবারের মেলার বিশেষ আকর্ষণ হয়ে আসে।

(ওএস/এএস/ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২৫)