আশাশুনিতে নিহত অনিমেষ মন্ডলের বাড়িতে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ
রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের লাঙ্গলদাড়িয়া গ্রামের নিরাঞ্জন সরকারের ছেলে নিহত সাইকেল মিস্ত্রী অনিমেষ সরকারের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
শুক্রবার বিকেলে বাড়িতে যেয়ে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) মনিন্দ্র কুমার নাথ এর নেতৃত্বে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ অনিমেষ সরকারের বাবা নিরঞ্জন সরকার, মাতা শেফালী রাণী সরকার, স্ত্রী সঞ্জিতা সরকারের সাথে কথা বলেন।
এ সময় মণীন্দ্র কুমারন নাথ বলেন, হত্যাকারি যেই হউক না কেন তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। সন্ত্রাসীদের কোন জাত নেই, ধর্ম নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ও মুসলিম সকলে একই সাথে বেড়ে উঠেছি। অথচ সেই প্রতিবেশীর হাতেই অনিমেষের খুন হতে হলো।
নিহতের বাবাকে আর্থিক সহযোগতিার হাত বাড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ন্যয় বিচার পেতে অসহায় পরিবারকে সবধরণের আইনি সহায়তা দেওয়া হবে।
এসময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির গণসংযোগ সম্পাদক, ব্রজগোপাল দেবনাথ, সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার শীল, বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি শিমুল সাহা, সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ সাহা, আশাশুনি উপজেলা ঐক্য পরিষদের আহবায়ক সাংবাদিক গোপাল কুমার মন্ডল, ছাত্র ঐক্য পরিষদের সভাপতি সুজন বিশ্বাস প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, জমির সীমানা নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে গত ২১ জানুয়ারি অনিমেষকে মারপিট করেন প্রতিবেশি অহিদ মল্লিক ও তার ভাই ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক মালেক মল্লিক।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানানোয় গত ২৪ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় অহিদ মল্লিকের বাড়িতে এক শালিসি বৈঠক হয়। সেখানে শালিসদাররা শালিসের ভার মালেক মল্লিকের উপর চাপিয়ে দিয়ে তার কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য বলেন। একপর্যায়ে অনিমেষের মুখে ঘুষি মেরে পার্শ্ববর্তী পুকুরে ফেলে দেন অহিদ মল্লিক। এরপর তার বোন তন্দ্রার হাতে থাকা অনিমেষের মোবাইল ফোনটি কেড়ে নিয়ে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর অনিমষেকে খুন করার হুমকি দেন মালেক ও অহিদ।
বিকেলে অনিমেষ নিজের জীবন বাঁচাতে ঢাকায় কাজ করতে যাওয়ার কথা বলে মাকে। রাতে দোকান থেকে ঘের থেকে বাড়ি ফেরার সময় অনিমেষকে রাত ১০টার দিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ গাছে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার প্রচার দেওয়া হয়। নিহতের মা শেফালী রানী সরকার ছেলেকে হত্যার ঘটনায় মালেক অজ্ঞাতনামা কয়েকজকে আসামী করে থানায় এজাহার দেন।
শনিবার সকাল ১১টায় নাকতাড়া কালিবাড়ি বাজার থেকে মালেক মল্লিক ও বিকেলে বাবুল আক্তার মোল্লাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। বাবুল আক্তার মোল্লা সোমবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। একই দিনে মালেক মল্লিকের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর শেষে থানায় আনা হয়। পরদিন মালেককে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে অনিমেষ হত্যার সময় ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র অহিদ মল্লিকের ধানের গোলায় থাকার বিষয়টি অবহিত করা হলেও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ নোমান হোসেন অস্ত্র উদ্ধারে কোন ভূমিকা রাখেন নি। সেকারণে পলাতক আসামীরা গ্রেপ্তার হবেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে নিহতের স্বজন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে।
(আরকে/এএস/জানুয়ারি ৩১, ২০২৫)