তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার অভিযোগ উঠেছে এক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে। প্রভাবশালী ওই ব্যক্তির নাম দিদার হোসেন। তিনি কাশিয়ানী উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের পারুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমানের বেয়াই। খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কাশিয়ানী উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের মাহমুদপুর গ্রামের  ৩ শতাধিক কৃষক। সেচের অভাবে ২০০ একর জমিতে বোরো আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত খালের বাঁধ অপসারণের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মাহমুদপুর গ্রামের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত এলজিইডির খালে দুটি স্থানে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন প্রভাবশালী দিদার হোসেন। খালের আওতায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)র ৪ টি সেচ প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে প্রায় ২০০ একর বোরো ধানের জমি পড়েছে। বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় খালের স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বোরো আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। ক্ষতির মুখে পড়েছেন ৩ শতাধিক কৃষক। জমি চাষ দিয়ে পানির অভাবে বোরোধান রোপন করতে পারছেন না কৃষক। রোপনের সময় অতিবাহিত হওয়ায় কেউ বোরো আবাদ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। ধানের উৎপাদন কমে যাওয়ার আশংকায় কৃষকদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

মাহমুদপুর গ্রামের কৃষক গোপাল বিশ্বাস বলেন, দুই সপ্তাহ আগে জমি চাষ করে রেখেছি। কিন্তু খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় পানি পাওয়া যাচ্ছে না। পানির অভাবে জমিতে ধান রোপন করতে পারছি না। এতে বোরো আবাদে পিছিয়ে পড়েছে। ফলন কম হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক সুধীর বিশ্বাস বলেন, প্রভাবশালী দিদার হোসেন সরকারি খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় পানি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পানির অভাবে জমিতে ধান রোপন করতে পারছি না। আমাদের সময় চলে যাচ্ছে। তাই জমি অনাবাদীর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভয়ে আমরা কিছু বলতে পারছি না। এ ব্যাপারে আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

অভিযুক্ত দিদার হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। এ কারণে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকি তার ফোনে ক্ষুদ্র বার্তা পাঠালেও তিনি কোন সাড়া দেন নি।

কাশিয়ানী উপজেলা বিএডিসির (ক্ষুদ্রসেচ) সহকারী প্রকৌশলী মো. ইমরান হোসেন বলেন, ‘ওই খালে আমাদের চারটি সেচ প্রকল্প রয়েছে। যার আওতায় প্রায় ২শ’ একর জমি পড়েছে । আমি সরেজমিনে খালের বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করেছি। ওই খালের বাঁধ দ্রুত অপসারণের জন্য দিদার হোসেনকে বলে এসেছি।’

কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা জান্নাত বলেন, খালে কোনভাবে বাঁধ কিংবা নেট দিয়ে পানিপ্রবাহ বাঁধাগ্রস্থ করা যাবে না। বাঁধ অপসারণে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(টিবি/এসপি/জানুয়ারি ৩০, ২০২৫)