শ্রীনগর প্রতিনিধি : শ্রীনগরে দখল হয়ে যাচ্ছে মন্দিরের প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের একাধিক জমি। শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর-বীরতারা সড়কের দক্ষিণ পাশে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে চলছে ভড়াট ও বাড়িঘর নির্মাণ। এর মধ্যে সড়কটির সালেপুরে বনায়ণের গাছ নষ্ট করে জমিটি (দৃশ্যমান জলাশয়) ভরাট কাজ চলছে। রাতের আধারে ড্রাম ট্রাকে করে বালু আনা হচ্ছে এখানে। এসব বালুবাহী ড্রাম ট্রাকে সরকারের গুরুপূর্ণ সড়কটি বেহাল করা হচ্ছে।

জানা গেছে, সালেপুর মৌজার আরএস ১৭৮ নং খতিয়ানের ৫নং দাগের ৭৩ শতাংশ ও একই খতিয়ানের ৪৬নং দাগের ৫৫ শতাংশ জমি দখল হচ্ছে। এর মধ্যে ৫নং দাগের জমিটির প্রায় অর্ধেক ভড়াট করে ঘরবাড়ি উত্তোলন করা হয়েছে এবং ৪৬ নং দাগের জমিটি রাতের আধারে ড্রাম ট্রাকে বালু এনে ভড়াট চলমান রয়েছে। জমি দুটির মালিক ষোলঘরের শ্রী শ্রী লক্ষী নারায়ণ জিউর মন্দিরের পক্ষে সেবায়াতে শশী মোহন সাহার তিন ছেলে দেবেন্দ্র চন্দ্র সাহা, যোগেশ চন্দ্র সাহা ও হারান চন্দ্র সাহা এবং বিজয় কৃষ্ণ সাহার স্ত্রী নয়নতারা সাহা।

সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, মন্দিরের নামে এই খতিয়ানে (১৭৮ নং খতিয়ান) ২ একর ৫১ শতাংশ জমি রয়েছে। এর মধ্যে ৫নং দাগের ৭৩ শতাংশ জমিটি খৈয়াগাঁও এলাকার আইয়ূব আলী ও মাশাখোলা গ্রামের আমজাদ শেখের ছেলে মোহসীন মিলে মাটি ভড়াট করে বাড়ি তৈরি করেছে। আইয়ূব আলী ঘর তুলে তা বেড়া দিয়ে রেখেছে। মহসীনের ঘর তোলার কাজ চলমান রয়েছে। অপরদদিকে ৪৬ দাগের ৫৫ শতাংশের জমিটি সোমবার রাত থেকে ড্রাম ট্রাক দিয়ে বালু এনে ভড়াট শুরু হয়েছে।

সরজমিনে গেলে মাখাখোলা গ্রামের অহিদুল ইসলাম বলেন, দুই বছর ধরে জমিটি তিনি একজনের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে লীজ নিয়ে খাচ্ছেন। এখন কে ভড়াট করছে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি তাদের নাম বলতে অস্বীকৃতি জানান।

এই বিষয়ে দুলাল সাহার চাচাতো ভাই কালী সাহা বলেন, মন্দিরের পক্ষে সেবায়েত হিসাবে আমাদের বাবা-চাচাদের নামে রেকর্ড হয়েছে। আমার চাচাতো ভাই দুলাল সাহা তা বিক্রি করেছে। সে মারা গেছে।

ষোলঘর এলাকার হরে কৃষ্ণ দাস বলেন, রাস্তার পাশের মন্দিরের যে জমি দুটি দখল হয়ে যাচ্ছে সেখানে জমির প্রতি শতাংশের দাম প্রায় ৪ লাখ টাকা। সেই হিসাবে জমি দুটির মূল্য ৫ কোটি টাকার অধিক। জমিদুটি দখল হয়ে গেলে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আরো ভীতি তৈরি হবে।

ঘর উত্তোলনকারী মোহসীন জানান, টাকা দিয়ে কিনেই তিনি জমির মাটি কেটে বাড়ি তৈরি করেছেন। এখন ঘর তুলছেন। তাকে উচ্ছেদ করে এমন কেই নেই। অপর দখলদার আইয়ূব আলীকে বাড়িতে না পাওয়ায় তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

মুন্সীগঞ্জ জেলা পুজা উদযাপন পরিষদের আহবায়ক ও শ্রীনগর উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি স্বপন মোদক বলেন, মন্দিরের জায়গা সেবায়েতরা কোন ভাবেই বিক্রি করতে পারেনা। যদি বিক্রি করে থাকে তা পুরোপুরি অবৈধ। প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শ্রীনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জোবায়ের হাবিব বলেন, ভড়াট বন্ধে এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি।

(এম/এসপি/জানুয়ারি ২৮, ২০২৫)