মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : গ্রীষ্মের এই সময়টাতে হাওর খালবিল আর ছড়াগুলো শুকিয়ে চৌচির। পানির উৎসগুলোও প্রায় বন্ধ বলা চলে। এমন পরিস্থিতিতে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ও গিয়াসনগর ইউনিয়নের কৃষকদের মাঝে। এই দুই ইউনিয়ের ১২ থেকে ১৪টি গ্রামের কয়েক হাজার কৃষকদের বুরো চাষাবাদে পানির প্রধান উৎস হলো কুদালীছড়ার উপর। এমনিতেই ছড়ায় পানির প্রবাহ কম, তারপরও ছড়ায় যেটুকু পানি আছে তারও নায্যতা পাচ্ছেনা সব পর্যায়ের কৃষক।

কুদালীছড়ার সাথে মনু নদীর সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় এই সঙ্কট বলে মনে করছে স্থানীয় কৃষকরা। এমনিতে কুদালীছড়ার পানির স্থর কম। এর মাঝে ছড়ার উজানের অংশের কয়েকটি স্থানে বাঁধ দেয়ায় নিম্নাঞ্চলের কয়েক কিলোমিটার এলাকা সম্পুর্ণ শুকিয়ে গেছে। ব্যাহত হচ্ছে বুরো চাষাবাদ। পানির জন্য কৃষকদের মাঝেও ক্ষোভ আর হাহাকার বিরাজ করছে। পানির অভাবে চলতি মৌসুমে বুরো চাষাবাদ না করতে পারলে কয়েকহাজার কৃষক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। বুরো মৌসুমে হাওর আর খালবিল শুকিয়ে যাওয়ার কারণে প্রতি বছরই কৃষকদের সেচের জন্য এমন দুর্ভোগে পড়তে হয়।

সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, গিয়াসনগর ইউনিয়নের গ্রাম শ্রীমঙ্গল, নোয়াগাঁও, করিমনগর, সুনগইর,মাড়কোনা, সিকরাইল, আক্তাভাড়া, ভুজবল, রাধাকান্তপুর, ফাজিলপুর, জগন্নাথপুর এলাকার একাংশ, গোমড়া, নিতেশ্বর সহ অন্তত ১২ থেকে ১৪ টি গ্রামের প্রায় ৮শ হেক্টর জমিতে সেচ সঙ্কটের কারণে বুরো চাষাবাদ করতে পারছেননা কৃষকরা। অনেক জায়গায় পানির অভাবে জমিতে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। তবে এসব এলাকার কিছু কিছু স্থানে কোন কোন কৃষক নিজস্ব গভীর নলকুপ স্থাপনের মাধ্যমে নিজেদের সেচ চাহিদা কিছুটা পুরণ হলেও অনেক কৃষকের পক্ষে সেটাও সম্ভব হচ্ছে না।

বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরে কৃষকদের পক্ষে আবেদন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে কৃষকরা বুরো মৌসুমে সেচের স্থায়ী সমাধানে কুদালীছড়া দিয়ে মনুনদী থেকে সুইচগেটের মাধ্যমে সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি উদ্যেগের উপর জোর দিয়ে বলেন এটি বাস্তবায়ন হলেই সেচ সুবিধার স্থায়ী সমাধান হবে। কারণ বুরো মৌসুমে কুদালীছড়ার পানির যে স্থর থাকে তা এই অঞ্চলের কৃষকদের চাহিদার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল।

এ কারণে এখানকার কৃষকদের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে মনু নদীর মাধ্যমে সুইচগেট স্থাপন করে কুদালীছড়া দিয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিকল্প পানির উৎস নিশ্চিত করার। এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হলে খাইঞ্জার হাওর,বিন্নার হাওর সহ আশপাশের এলাকার অনাবাদী কৃষি জমিগুলো সম্পুর্ণ চাষাবাদের আওতায় আসবে। স্থায়ী সমাধান হবে পানি সমস্যার।

গ্রাম শ্রীমঙ্গল এলাকার কৃষক রাখাল সরকার বলেন, পানির অভাবে বুরো চাষাবাদের সব জায়গা পতিত আছে, কোথাও পানি পাওয়া যাচ্ছেনা। কৃষক গিয়াস মিয়া ও ইসমাইল মিয়া বলেন, অনেকে ঋণ হিসেবে অগ্রিম ধানের দাম নিয়ে এসেছেন বুরো ক্ষেতের আশায়। এখন পানির অভাবে বুরো চাষাবাদ সম্ভব হচ্ছেনা। অনেক জায়গা জমিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পানি সঙ্কটে বুরো ধানের চারাগুলোও নষ্ট হচ্ছে। যদি মনু নদী থেকে পানির স্থায়ী ব্যবস্থা করা হয় তাহলে আমরা প্রত্যেক কৃষক বাঁচব।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপপরিচালক মো: সামছুদ্দিন আহমদ বলেন, এ বিষয়ে পানি বোর্ড এগিয়ে না আসলে আমরা কী করতে পারি। তার পরও কুষকদের এই সমস্যা নিয়ে দেখছি কী করা যায়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন ওয়ালিদ জানান, বিষয়টি নিয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে সমীক্ষা হবে, সমীক্ষা শেষে বলা যাবে। আর বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী প্রভাত শাহা জানান, চলতি জানুয়ারি মাসের ৮ তারিখে প্রকল্প পাশ হয়েছে এবং খালটি খনন তালিকায় আছে। টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কুদালীছড়া খননের ব্যবস্থা আমরা নেবো। আর ছড়ায় পানি না থাকার বিষয়টি পানি বোর্ড বলতে পারবে।

(একে/এএস/জানুয়ারি ২৬, ২০২৫)