ভুয়া হোমিও চিকিৎসকের কারণে প্রকৃত চিকিৎসকরা অবহেলিত হন
ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
বর্তমান সময়ে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা একটি জনপ্রিয় এবং কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত। এর মাধ্যমে হাজারো রোগীর রোগ নিরাময় সম্ভব হয়েছে। তবে এই পদ্ধতির নাম এবং সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে কিছু ভুয়া হোমিও চিকিৎসকের কারণে। এই ভুয়া চিকিৎসকদের কর্মকাণ্ড শুধু রোগীদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে না, বরং প্রকৃত এবং দক্ষ হোমিও চিকিৎসকদের প্রতিও সন্দেহ ও অবিশ্বাস সৃষ্টি করছে।
ভুয়া চিকিৎসকদের কার্যক্রম এবং তার প্রভাব
ভূয়া হোমিও চিকিৎসকেরা সাধারণত পর্যাপ্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা বা সনদ ছাড়াই চিকিৎসা প্রদান করে থাকেন। তারা রোগীদের ভুল পরামর্শ, অকার্যকর ওষুধ এবং ভুল ডোজ দিয়ে রোগীদের ক্ষতিগ্রস্ত করেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের ফলে রোগীরা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে।
১. রোগীদের ক্ষতি: ভুয়া চিকিৎসকের অদক্ষতা এবং অপেশাদারিত্বের কারণে রোগীরা সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হন। এতে রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। কখনো কখনো রোগী মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার হন।
২. বিশ্বাসের সংকট: ভুয়া চিকিৎসকদের কর্মকাণ্ডের কারণে রোগীরা প্রকৃত হোমিও চিকিৎসকদের প্রতিও সন্দেহপ্রবণ হয়ে ওঠেন। এমনকি প্রকৃত চিকিৎসকদের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও তারা অবহেলিত হন।
৩. হোমিওপ্যাথি পদ্ধতির সুনাম নষ্ট : হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা একটি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি। তবে ভূয়া চিকিৎসকদের কারণে অনেকেই এটিকে ভ্রান্ত ও অবৈজ্ঞানিক মনে করতে শুরু করেন।
ভালো চিকিৎসকদের সমস্যা
ভালো এবং দক্ষ হোমিও চিকিৎসকেরা এই পরিস্থিতির কারণে মারাত্মক সমস্যায় পড়ছেন। তাদের পেশাগত সুনাম এবং আয়ের উপর এর প্রভাব পড়ছে। এমনকি তারা অনেক সময় আইনি জটিলতায় পড়ছেন। রোগীদের আস্থা অর্জন করতে তাদের দ্বিগুণ পরিশ্রম করতে হচ্ছে।
ভূয়া চিকিৎসকদের শনাক্তকরণ ও প্রতিরোধের উপায়
এই সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন সতর্কতা এবং সঠিক পদক্ষেপ।
১. শিক্ষাগত যোগ্যতা যাচাই: প্রত্যেক রোগীর উচিত চিকিৎসকের শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং সনদ যাচাই করা। সরকারি নিবন্ধিত চিকিৎসকদের কাছ থেকে চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
২. জনসচেতনতা বৃদ্ধি: হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। রোগীদের জানাতে হবে সঠিক চিকিৎসকের গুরুত্ব এবং ভূয়া চিকিৎসকের ক্ষতিকর প্রভাব।
৩. আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ: ভুয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। তাদের কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৪. হোমিও চিকিৎসকদের মানোন্নয়ন: ভালো চিকিৎসকদের সুনাম বাড়াতে এবং তাদের পেশাগত মানোন্নয়ন নিশ্চিত করতে প্রশিক্ষণ ও সেমিনারের আয়োজন করা যেতে পারে।
পরিশেষে বলতে চাই, ভুয়া হোমিও চিকিৎসকদের কর্মকাণ্ড শুধু রোগীদের ক্ষতি করছে না, বরং ভালো এবং দক্ষ হোমিও চিকিৎসকদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এ সমস্যার সমাধানে জনসচেতনতা, আইনি পদক্ষেপ, এবং সঠিক চিকিৎসকের গুরুত্ব তুলে ধরা জরুরি। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার আসল গুণাবলি তুলে ধরতে এবং এর সুনাম রক্ষা করতে হলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
লেখক: চিকিৎসক, কলাম লেখক ও গবেষক, প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।