স্টাফ রিপোর্টার : গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন প্রধান কামাল আহমেদ বলেছেন, আমরা অংশীজনদের মতামত গ্রহণ করছি। সবচেয়ে বড় অংশীজন হচ্ছে গণমাধ্যমের পাঠক-দর্শক-শ্রোতা তথা ভোক্তা।

ঢাকায় পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। ঢাকার বাইরে আপনাদের (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী) সঙ্গে বসেছি। আপনারা সাংবাদিকতা শেখাচ্ছেন, কিন্তু শিক্ষার্থীরা এ খাতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না বা টিকে থাকছে না। তিনি এ থেকে পরিত্রাণের জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পরামর্শ আহ্বান করেন।

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে রাজশাহী সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন প্রধান কামাল আহমেদ ও অন্যান্য সদস্যরা। সেখানে তিনি এসব কথা বলেন।

সভায় কমিশন প্রধান কামাল আহমেদকে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শিক্ষকরা তাদের বস্তুনিষ্ঠ হতে শেখান। কিন্তু তারা দেখেন কোনো কোনো মিডিয়া হাউজ তাদের নিয়োগ দিয়ে কোনো বেতনই দেয় না। তারা এমন ভাব করেন যেন নিয়োগ দিয়েই করুণা করেছেন। কখনও কখনও ক্যাম্পাস সংবাদদাতাদের ওপর এমন চাপ দেওয়া হয়, তাদের অনেক সময় পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হয়।

সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক প্রতিনিধিরা জানান, বাংলাদেশের জনসংখ্যা অধিক হলেও অর্থনৈতিক আকার কিন্তু বড় নয়। তাই আমাদের দেশে এত মিডিয়া হাউজ প্রয়োজন আছে কিনা। সেটি ভেবে দেখার আহ্বান জানান তারা। যেসব মিডিয়া হাউজ সাংবাদিকদের বেতন দিতে পারে না সেগুলো থাকার দরকার নেই বলেও তারা মন্তব্য করেন।

এ সময় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের মতো বাংলাদেশের মিডিয়া হাউজগুলোর গাইডলাইন থাকা প্রয়োজন বলেও গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন প্রধানের সামনে মতামত ব্যক্ত করেন উপস্থিত শিক্ষকবৃন্দ।

এর আগে মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) সকালে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন প্রধানের সঙ্গে রাজশাহী বিভাগের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের মতবিনিময় হয়। সেখানে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেন, আর্থিক নিরাপত্তা ছাড়া গণমাধ্যমের সংস্কার হবে না। আর্থিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত না হলে ভালো গণমাধ্যম আশা করা যায় না। এর মধ্যে শৃঙ্খলা আনা দরকার। সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া খুবই প্রয়োজন। আর এটি করতে তাদেরকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। দলীয় বিভাজন ভুলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

মতবিনিময়কালে গণমাধ্যম সংস্কার বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে প্রস্তাব আহ্বান করলে তারা পরীক্ষার মাধ্যমে গণমাধ্যমকর্মী বাছাই, সাংবাদিকতা পেশায় যোগদানে জাতীয় পর্যায়ে নীতিমালা তৈরি, চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, আর্থিক সুরক্ষা, নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো, শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ, সাংবাদিক নিয়োগে ডোপ টেস্ট, সংবাদপত্রে দলীয়করণ না করা, ওয়েজ বোর্ডের একটি নতুন কাঠামো তৈরি করা, টেলিভিশন সাংবাদিকদের জন্য ওয়েজবোর্ড চালু ও নীতিমালা প্রণয়ন, ফেসবুক এবং অনলাইন পোর্টালের দৌরাত্ম্য দূরীকরণ, প্রেস কাউন্সিলকে বার কাউন্সিলের মডেলে উন্নীতকরণ, সাংবাদিকদের জন্য একটি গণতান্ত্রিক কমিশন গঠন করা, জীবনবীমা ও পেনশনের ব্যবস্থা করা, সরকারি ক্রোড়পত্র বণ্টনে বৈষম্য দূর করা, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা সামগ্রীর ব্যবস্থা করা, রাজনৈতিক প্রভাব দূর করে গণমাধ্যমের সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলা, আমলাতান্ত্রিক প্রভাব দূর করা, নিউজপ্রিন্টের দাম কমানো, গণমাধ্যমকর্মীদের দায়িত্বশীলতা বাড়ানো, সাংবাদিকতা বিষয়ক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট সকলের বার্ষিক সম্পদের হিসাব প্রকাশের ব্যবস্থা করাসহ নানা প্রস্তাব তুলে ধরেন।

সাংবাদিকদের প্রস্তাবের জবাবে কমিশন প্রধান বলেন, আমরা বিভাগীয় পর্যায়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মী ও অংশীজনের সাথে মতবিনিময় করেছি। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে গণমাধ্যম সংস্কার বিষয়ে প্রস্তাব আহ্বান করেছি। ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো থেকে কিছু প্রস্তাব পাওয়া গেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে আরও যেসব প্রস্তাব পাওয়া যাবে সেগুলো পর্যালোচনা করে সরকারের নিকট একটি গ্রহণযোগ্য সুপারিশ পেশ করবো।

গত ১৫ বছরের সাংবাদিকতা পেশার অনিয়মের কথা উল্লেখ করে এ সময় কামাল আহমেদ বলেন, এত গণমাধ্যমের পাঠক-শ্রোতা আছে কিনা তা ভাবনার বিষয়। যে পত্রিকা হকারদের নিকট আসে না সে পত্রিকা কীভাবে অনুমোদন পায় এটা সরকার তদারকি করবে। গণমাধ্যমের সমস্যাগুলো আমাদের সবার, এটির সমাধান আমাদেরকেই করতে হবে।

মতবিনিময় সভায় গণমাধ্যম কমিশনের সদস্য ড. গীতিআরা নাসরীন, শামসুল হক জাহিদ, আখতার হোসেন খান, বেগম কামরুন্নেসা হাসান, মোস্তফা সবুজ ও জিমি আমির উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় রাজশাহী বিভাগের আট জেলার প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার শতাধিক সাংবাদিক অংশ নেন।

(ওএস/এএস/জানুয়ারি ২২, ২০২৫)