সাতক্ষীরায় ব্যবসায়ীর ২৩ লাখ টাকা ছিনতাই, গ্রেপ্তার ২
রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা-ভোমরা মহাসড়কের আলীপুর ঢালীপাড়ায় এক ব্যবসায়ীর ২৩ লক্ষাধিক টাকা ছিনতাইয়ের মূল মাস্টারমাইন্ড আলিমুদ্দীন গাজিকে ও রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত রবিবার রাতে সদর উপজেলার কুচপুকুর ও সোমবার সকালে সদর উপজেলার লক্ষীদাঁড়ি থেকে যথাক্রমে রফিকুল ও আলিমুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আলিমুদ্দিন লক্ষীদাঁড়ি মৃত আনারউদ্দিন গাজির ছেলে ও রফিকুল ইসলাম সরদার থানাঘাটা এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক।
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম সোমবার দুপুরে তার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং এ জানান, ভোমরা বন্দরের“ মা ট্রেডার্সের” স্বত্বাধিকারী জিএম আমির হামজার কর্মচারী (ভাড়ায় চালিত মটর সাইকেল চালক) শওকত আলী ও ওবায়দুল্লাহ ব্যবসায়ীক কাজে গত ২৯ ডিসেম্বর বিকেলে সাতক্ষীরার দুটি ব্যাংক থেকে উত্তোলনকৃত ও দুইজন ব্যবসায়ির কাছ থেকে আদায়কৃত বকেয়াসহ মোট ২৩ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে মটর সাইকেলে ভোমরায় ফিরছিলেন। একপর্যাযায়ে বিকাল পাঁচটার দিকে আলিপুর ঢালীপুর ঢালীপাড়া এলাকায় পৌঁছালে দুটি মটর সাইকেলে পাঁচজন ছিনতাইকারি শওকত হোসেনের মটর সাইকেলের গতিরোধ করে। পরে শওকতের মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করলে তারা দুজন রাস্তার উপর পড়ে যায়।
এসময় ছিনতাইকারীরা ওবায়দুল্লার কাছে থাকা টাকার ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় সদর উপজেলার নলকুড়া গ্রামের মেহেদী হাসান মুন্না নামের একজন ছিনতাইকারীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। বাকি ৪ ছিনতাইকারী টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় আমীর হামজা বাদি হয়ে মুন্না, এজাজুল, আরাফাত ও আলীমুদ্দীন গাজীকে আসামি করে সাতক্ষীরা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। তবে মুন্না ২০ ডিসেম্বর আদালতে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে রফিকুজ্জামানসহ এজাহারভুক্ত পাঁচজনের নাম বলে।
পুলিশ সুপার আরও জানান,মুন্না ইতোমধ্যে ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী দিয়েছে। গত রবিবার মামলার অন্যতম আসামি রফিককে সদর থানার কুচপুকুর এলাকা থেকে লুণ্ঠিত প্রায় ৪ লাখ টাকাসহ গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। অপরদিকে অপর আসামি আরাফাত হোসেন গত রোববার আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে। সোমবার গ্রেপ্তারকৃত আসামী আলিমুদ্দীন গাজীকে আদালতে প্রেরণ ও রিমান্ডে নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক আহম্মদ কবীরের সাথে বারবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে না পারায় ওই অফিসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গ্রেপ্তারকৃত আলিমউদ্দিন ও রফিকুজ্জামানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোমবার আদালতে সাত তিন করে রিমাণ্ড আবেদন জানানো হয়। সাতক্ষীরার জ্যেষ্ট বিচারিক হাকিম প্রথম আদালতের বিচারক নয়ন কুমার বড়াল শুনানী শেষে তাদের প্রত্যেককে দুই দিন করে রিমাণ্ড মঞ্জুর করেন। তাদেরকে আদালত থেকে সোমবার বিকেল পুলিশ হেফাজতে আনা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এজাহারভুক্ত আসামি নলকুড়া গ্রামের এজাজুল হক ধরা না পড়লেও তার বাবা গ্রাম পুলিশ সাঈদুল হক তার ছেলের রেখে যাওয়া ছিনতাইয়ের এক লাখ টাকা মামলার প্রথম তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক মেহেদী হাাসানের কাছে গত ২৪ ডিসেম্বর দিয়ে দেন। এর পরদিন তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মামলার বাদি জিএম আমীর হামজা ১৯ ডিসেম্বর রাতে গ্রেপ্তারকৃত মেহেদী হাসানের স্বীকারোক্তি অনুযায়ীস্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা রফিকুজ্জামানসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ গ্রেপ্তারকৃত মেহেদী হাসানসহ কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করার জন্য বলেন। একপর্যায়ে রফিকুজ্জামানকে বাদ দিয়ে এজাহার দিতে বলা হয়। যদিও গ্রেপ্তারকৃত মেহেদী হাসান ঘটনার সঙ্গে জড়িত রফিকুজ্জামানসহ পাঁচজনের নাম ২০ ডিসেম্বর বিচারক সুজাতা আমিনের কাছে স্বীকার করে।
(আরকে/এসপি/জানুয়ারি ২১, ২০২৫)