রহিম আব্দুর রহিম


ঘন কুয়াশা, শিরশিরে বাতাস ফজরের আযান ভেসে আসছে মাইকে, শহরের বিভিন্ন সড়ক জুড়ে সাইকেলের টিনটিন শব্দ। গ্রাম শহরের শিশু-কিশোররা শহরে প্রবেশ করছে; হাড় কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে পথ চলা ওরা কারা?কোথায় যাবে তারা? গন্তব্য পঞ্চগড়ের যানবাহন চত্বরে এখান থেকেই শুরু 'এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই' শিরোনামে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত তারুণ্যের উৎসবের ইভেন্ট-ছয়ের প্রারম্ভিক কার্যক্রম উদ্বোধন। এখানে হাজির হয়েছে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত শত শত ছেলে মেয়ে, পায়ে প্যাডেল, হাতে হ্যান্ডল সাইকেলে বসে এক পায়ে দাঁড়িয়ে উৎসব ভোগের মৃদু হাসি, এক অপূর্ব মূহুর্ত! এই পরিবেশ ১৮ জানুয়ারি পঞ্চগড় যানবাহন চত্ত্বরের।

হ্যাঁ, আজ পঞ্চগড় তারুণ্যের উৎসবের 'মাদক ও দুর্নীতি বিরোধী সচেতনতা'য় ৭টায় ছেলেদের, ও একই দিনের সকাল সাড়ে সাতটায় মেয়েদের বাইসাইকেল রেইস।ঘড়ির কাটায় সকাল আটটা পয়তাল্লিশ শোভাযাত্রার প্রারম্ভিক কার্যের উদ্বোধন করেন মন্ত্রী পরিষদের জেলা ও মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীম, জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলীর সভাপতিত্বে ইভেন্ট কার্যক্রমে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের জেলা ও মাঠ প্রশাসন অধিশাখার যু্গ্মসচিব মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পঞ্চগড় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মুন্সী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক)এস এম ইমাম রাজী টুলু। পঞ্চগড় ১৮ বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মনিরুল ইসলাম, ২৯ বীর পঞ্চগড় সেনা ক্যাম্পের এর মেজর মেহেদী হাসান। সম্মিলিত স্বেচ্ছাসেবী ফোরামের পঞ্চগড় জেলা সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট আহসান হাবিব, স্কেটিং ক্লাবের পরিচালক মো.হাবিবুর রহমানসহ বিভিন্ন সংগঠনের অর্ধ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী।

রেইসে অংশ নিতে ভোরের কুয়াশা ঠেলে ১২ কিলোমিটার দূর গলেহা গ্রাম থেকে এসেছে ৯ম শ্রেণি'র আরমান হোসেন আদিব। সে জানালো, সারারাত ঘুমাতে পারেনি আনন্দের চিন্তায়, ভোর হলেই প্রতিযোগিতা। আমলাহার থেকে এসেছে জুলফিকার আলী এই ছেলে বোদা সরকারি পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের ৮ম শ্রেণি'র ছাত্র, তার চোখে মুখে আনন্দের ছাঁপ। এক্ষেত্রে মেয়েরা পিছিয়ে নেই, মোছা. এলিনা আকতার আটোয়ারি রাধানগর গার্লস স্কুল থেকে এবছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করবে।জানতে চেয়েছিলাম এতদূর থেকে কখন, কিভাবে এসেছো? মেয়ের জবাব হাস্যোজ্জ্বল, ভোর সাড়ে চারটায় রওনা হয়েছি, মা ও চাচা আমার সাথে এসেছেন। ভোর সাড়ে পাঁচটায় যানবাহন চত্ত্বরে পৌঁছেছি। আটোয়ারির ছোটদাপ গ্রামের মিনি, এই মেয়ে এবার ১০ শ্রেণির শিক্ষার্থী। সেও এসেছে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে। ডক্টর আবেদা হাফিজ গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের সাল সাবিল জাহান সিফা, তার কথা জিতা -হারা নয়, সাইকেল চালাবো ইচ্ছা মতো। অষ্টম শ্রেণি'র সোহানুর রহমান সোহানও এসেছে ধনিপাড়া থেকে, পড়ালেখা করে বোদা সরকারি পাইলট স্কুল এন্ড কলেজে। ভোর ৬টায় যানবাহন চত্বরে উপস্থিত। ওর কথা একটাই, সাইকেল কেনার পর কোন দিন প্রতিযোগিতায় আসতে পারেনি। এবার আসতে পেরে খুবই খুশি।

পঞ্চগড় বিদ্রোহী শিশু-কিশোর থিয়েটারের নাট্যকর্মী, বিতার্কিক ও পঞ্চগড় বিষ্ণু প্রসাদ (বিপি) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণি'র ছাত্র ফাহমিদ ইসাম সরকার বলেন, 'চমৎকার এক অভিজ্ঞতা, সাইক্লিং ও অবস্টাকল, স্কেটিং উৎসব সব কিছু মিলিয়ে আমার জন্য স্মরণীয় দিন।" সত্যই তাই, ১৮ জানয়ারি শনিবার দিনটি শিশু-কিশোর তরণ -তরণীদের মাঝে শৈশবের ভরা মৌসুমে ফিরিয়ে আনে। শুধু কি শিশু কিশোর? জেলার সিভিল, পুলিশ এবং সেনা সদস্যদের মাঝে প্রাণ চাঞ্চল্য পরিলক্ষিত হয়েছে। রেইস ইভেন্টে স্পন্সর করেছে রানার অটো মোবাইলস পিএলসি। পরে বিকাল সাড়ে তিনটায় পঞ্চগড় সদর উপজেলা টেনিস গ্রাউন্ডে পঞ্চগড় রোলার স্কেটিং পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান হাবিবের পরিচালনায় রোলার স্কেটিং উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ক্রীড়া বিনোদন যে ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজ সংসারে হতাশ, দুশ্চিন্তামুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং মানুষের মন ধ্যান চিন্তা -চেতনায় তারুণ্যের আলোক ছটা প্রজ্জ্বলিত তার বাস্তব ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন।

লেখক : কলামিস্ট, নাট্যকার ও গবেষক।