‘ওরা আমার মেয়েকে ডাক্তার হতে দিল না’
স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল : ‘ওরা আমার মেয়েকে ডাক্তার হতে দিল না। ওরা আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছে। আমি তাদের শাস্তি চাই। মধুপুরে বেড়াতে নিয়ে গিয়ে সহপাঠীরা পরিকল্পিতভাবে তাকে খুন করেছে।’ -এভাবেই বিলাপ করছিলেন টাঙ্গাইল শহরের কুমুদিনী সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী অথৈ মনির মা আলেয়া বেগম।
বিলাপের ফাঁকে ফাঁকে তিনি বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) বিকালে অথৈ মনির গ্রামের বাড়ি জেলার মির্জাপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।
কলেজছাত্রী অথৈ মনির মা আলেয়া বেগম অভিযোগ করেন, পানির সঙ্গে তার মেয়েকে নেশার ওষুধ খাইয়ে খুন করা হয়েছে। কলেজ ছাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর শুনে আশপাশের লোকজন তাদের বাড়িতে ভিড় করছে। এদিকে প্রাইভেট পড়ার কথা বলে ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ায় মধুপুরে বেড়াতে যাওয়া আটজন ছাত্রীকে কুমুদিনী সরকারি কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
নিহত কলেজছাত্রী অথৈ মনির সহপাঠী ঐশী ও তন্নী জানায়, ঘটনার দিন অথৈ মনি সহপাঠী সুমাইয়া মোস্তফা অপির ভাই আবিরের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে বাসযোগে মধুপুর বেড়াতে যান। মধুপুরে গিয়ে আবিরের সহযোগিতায় একটি ঘরে গিয়ে তারা ফ্রেস হয়। ঘোরাঘুরি (বেড়ানো) শেষে তারা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় মধুপুর বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশে যাত্রা করে। জাকারিয়া নামের ওই কলেজছাত্রও তাদের সঙ্গে মধুপুর বনে বেড়াতে যান। পথিমধ্যে অথৈ মনি অটোরিকশা থেকে নেমে জাকারিয়ার মোটরসাইকেলে উঠে।তারা জানায়, তারা দুর্ঘটনার খবর পেয়ে মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যায়। সেখান থেকে আহতাবস্থায় অথৈ মনিকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে।
পরিবারের লোকজন
খবর পেয়ে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল থেকে অথৈ মনিকে ঢাকার পপুলার ডায়াগনস্টিক সেণ্টার ও হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তার অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত সোমবার (১৩ জানুয়ারি) তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (সাবেক পিজি হাসপাতাল) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার(১৪ জানুয়ারি) রাতে কলেজছাত্রী অথৈ মনি মারা যান। কলেজছাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর শুনে আশপাশের লোকজন তাদের বাড়িতে ভিড় করছে।
অথৈ মনির খালা রুমি আক্তার বলেন, দুর্ঘটনার রাতে অথৈ মনির মুঠোফোন ঐশীর কাছে ছিল। সারারাত অথৈ মনির ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপ সচল ছিল। দুই দিন পর তারা (সহপাঠীরা) মুঠোফোন ফেরত দিয়েছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসক উজ্জ্বল মল্লিক এবং কনক কান্তি তাদের জানিয়েছেন, ‘অথৈ মনিকে নেশার ট্যাবলেট খাইয়ে খুন করা হয়েছে।
অথৈ মনির সহপাঠী সুমাইয়া মোস্তফা অপির বাবা গোলাম মোস্তফা জানান, অথৈ মনি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিল বলে তিনি জানতে পেরেছেন।
নিহত কলেজছাত্রী অথৈ মনির মা আলেয়া বেগম বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘আমার মেয়েকে ফুঁসলিয়ে মধুপুরে বেড়াতে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। ওরা আমার মেয়েকে ডাক্তার হতে দিল না। সহপাঠী ঐশী ও তন্নী একেক সময় একেক কথা বলছে। আমি দোষীদের শাস্তি চাই।’
মধুপুর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মো. এমরানুল কবীর জানান, কলেজছাত্রী অথৈ মনির মৃত্যুর বিষয়টি তিনি বুধবার (১৫ জানুয়ারি) বিকালের দিকে জানতে পেরেছেন।
তিনি জানান, কয়েকদিন আগে কয়েকজন কলেজছাত্রী তিনটি মোটরসাইকেলে মধুপুরে বেড়াতে আসে। ওই সময় একটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হয়। পরে আহত মেয়েটিকে ফেলে অজ্ঞাতপরিচয় ছেলেটি মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল তিনি এমন খবর পেয়েছেন। তবে সঠিক তথ্য উদঘাটনে পুলিশ কাজ করছে। যেকোন মূল্যে এ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে বলেও তিনি জানান।
টাঙ্গাইল শহরের কুমুদিনী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. খলিলুর রহমান জানান, আগের অধ্যক্ষ মেয়েদের বাইরে প্রাইভেট পড়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। সেই সুযোগ বহাল থাকায় আটজন মেয়ে গত ৮ জানুয়ারি ক্যাম্পাস থেকে বের হয়। তারা প্রাইভেট পড়ার কথা বলে মধুপুরে বেড়াতে গেছে এমন খবর জানতে পেরে তাদেরকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, কলেজের মেয়েদের ক্যাম্পাসের বাইরে প্রাইভেট পড়ার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
(এসএম/এসপি/জানুয়ারি ১৬, ২০২৫)