সার নিয়ে কারসাজি, ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা
শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : পেঁয়াজ আবাদের ভরা মৌসুমে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে রাসায়নিক সারের। চাহিদার তুলনায় নির্ধারিত ডিলারের কাছে পাওয়া যাচ্ছে না সার। বাইরের দোকানে মিলছে, তাও চড়া দামে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। এদিকে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা খোঁজ খবর নিচ্ছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় উৎপাদন ব্যহত হবার শঙ্কায় কৃষকেরা। তবে ডিলাররা বলছেন, তারা যা বরাদ্দ পাচ্ছেন তাতে পুরণ হচ্ছে না চাহিদা।
উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের কৃষক ইউসুফ আলী। বুকভরা আশা নিয়ে ৫ বিঘা জমিতে রোপন করেছেন পেঁয়াজ। ভালো ফলনের আশায় করছেন পরিচর্যার কাজ। কিন্তু সার সংকটে ফলন বিপর্যয়ের আশংকায় চিন্তার ভাজ চোখে মুখে। সঠিক সময়ে পেঁয়াজ ক্ষেতে সার প্রয়োগ করতে না পারলে ফলন বিপর্যয়ে পুঁজি হারানোর চিন্তা তার। এদিকে ডিলারদের মাধ্যমে চাহিদা মত সার পাচ্ছেন না। তবে অতিরিক্ত টাকায় খোলা বাজারে মিলছে সার,এমন অভিযোগ এই কৃষকের।
শুধু ইউসুফ আলী-ই নয়, তার মতো শত শত কৃষকদের অভিযোগের তীর ডিলারদের দিকে। ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়োগপ্রাপ্ত ডিলাররা থাকেন না স্ব-স্ব স্থানে। দোকান খুলে বসেছেন পৌর এলাকায়। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে চড়া দাম দিলে খোলা বাজারে অল্প পরিমানে পাওয়া যাচ্ছে এই সার। পেঁয়াজ আবাদের ভরা মৌসুমে সার সঙ্কটে হতাশ হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। দ্রুত সার সঙ্কট নিরসনের দাবি তাদের।
আফজাল হোসেন নামে এক কৃষক বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত দামে ডিলারের কাছে সার আনতে গেলে সার দিচ্ছে না ডিলার। বলছে সার নেই। আবার খোলা বাজারে গেলে সার মিলছে,তবে দাম বস্তাপ্রতি ৩ থেকে ৪ শত টাকা বেশি।’
আবুল নামে আরেক কৃষক বলেন, ‘সার প্রয়োজন ৫ বস্তা,কাজ ফেলে রেখে ডিলারের কাছে গিয়ে সারাদিন দাঁড়িয়ে থেকে পাওয়া যাচ্ছে এক বস্তা। একবস্তা সার নিয়ে কি করবো?’
ইসমালই নামে আরেক কৃষক বলেন, ‘সময়মতো জমিতে সার প্রয়োগ না করতে পারলে ফলন ভাল হবে না। তাতে পুঁজি হারাতে হবে। এমন হলে পরের বছর থেকে পেঁয়াজ চাষ করবো না।’
এদিকে ডিলারদের দাবি, চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্ধ নেই,সেকারণেই এ সংকট দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান বলেন, ‘কৃষকরা সার ঘরে মজুদ করে রাখায় এ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তা না হলে চাহিদা অনুযায়ী প্রতি কৃষক সার পেত। তবুও চেষ্টা করছি সব কৃষককেই পরিমাণমত সার দিতে। ভালো ফলনের জন্য কৃষকদের নানারকম পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, শৈলকুপা উপজেলায় পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ হাজার হেক্টর জমি। যেখানে, ইউরিয়া, টিএসপি, ডিওপিসহ রাসায়নিক সারের চাহিদা ধরা হয়েছিল ৮ হাজার মেট্টিক টন।
(এসআই/এসপি/জানুয়ারি ১৬, ২০২৫)