দিলীপ কুমার চন্দ, ফরিদপুর : “একটি বাড়ি নিয়েই একটি গ্রাম” শুনে অবাক লাগলেও এমনই এক অদ্ভুত গ্রামের সন্ধান মিলেছে ফরিদপুরে। যেখানে বসবাস করে মাত্র একটি পরিবার, গ্রামের সংজ্ঞায় না পড়লেও এই গ্রামটি এখন সারাদেশে আলোচিত। 

মাত্র ৬০ শতাংশ জমির উপরে আনুমানিক ২০০ বছর আগে গড়ে ওঠা গ্রামটির নাম বিষ্ণুপুর। ছোট্ট এই গ্রামটিকে স্থানীয়রা বেষ্টপুর নামেও ডেকে থাকেন।

গ্রামের সংজ্ঞায় না পড়লেও বিষ্ণুপুর এখন সারাদেশের আলোচিত গ্রাম। এই গ্রামের সবুজ প্রকৃতি আর হিমেল বাতাসে দোল খাওয়া ফসলি মাঠ নজর কাড়বে যে কারো।

আগে থেকেই গ্রামটি ছোট্ট, লোকসংখ্যা কমতে কমতে এখন একেবারে ছোট গ্রামে পরিণত হয়েছে বিষ্ণুপুর। সম্পূর্ণ কৃষি নির্ভর গ্রামটিতে আছে মাত্র একটি বাড়ি। যেখানে ছেলে সন্তান নিযে ১০ পরিবারের মোট ৩২ সদস্যের বসবাস।

চারিদিকে সবুজ ফসলী মাঠে ঘেরা গ্রামটির অবস্থান ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার রুপাপাত ইউনিয়নে। উপজেলা সদর থেকে যার দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। বিষ্ণুপুর গ্রামের দক্ষিণে রয়েছে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার জয়নগর গ্রাম এবং উত্তরে বোয়ালমারীর টোংরাইল গ্রাম। কাগজপত্র অনুযায়ী গ্রামটির নামও লেখা বিষ্ণুপুর।

এই গ্রামের একমাত্র প্রবীণ নারী বাসিন্দা আনোয়ারা বেগম জানালেন, গ্রামের নানা ইতিহাস। ছোট্ট গ্রামটিতে মুক্তিযুদ্ধকালে আশ্রয় ও নিয়েছিলো শত শত মুক্তিযোদ্ধা।

গ্রামটিতে বিদ্যুৎ থাকলেও নেই চলাচলের কোন রাস্তা। জমির আইল ধরে কাদামাটি মাড়িয়ে চলে যাওয়া-আসা। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়তে হয় বর্ষাকালে, তখন ভরসা শুধুই নৌকা।

গ্রামটিতে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। এমনকি নেই কোন মসজিদ ও। ফলে পায়ে হেটে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূওে পাশের গ্রামের স্কুলে যেতে হয় শিক্ষার্থীদের। এতে পিছিয়ে পড়ছে গ্রামের শিশুরা।

গ্রামের আরেক বাসিন্দা জাহাঙ্গীর মোল্লা জানালেন, এক সময় গ্রামটিতে মোট পাঁচটি পরিবারের বসবাস ছিলো। নানা বঞ্চনা, দুর্ভোগ ও যোগাযোগের রাস্তাঘাট না থাকায় অনেকেই গ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন। এখন শুধু তাদের পরিবারই গ্রামটিকে টিকিয়ে রেখেছেন।

তথ্য অনুযায়ী সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার “শ্রীমুখ” গ্রামটি এশিয়ার সবচেয়ে ছোট গ্রাম। সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চি ইউপিতে অবস্থিত শ্রীমুখ গ্রামটির। সরকারি তালিকাভুক্ত ফরিদপুরের বিষ্ণুপুর গ্রামটিতে স্বাধীনতার আগে থেকেই বসবাস করে আসছে মাত্র একটি পরিবার। সেই হিসেবে দ্বিতীয় ছোট গ্রাম ফরিদপুরের বিষ্ণুপুর। গ্রামের সংজ্ঞায় না পড়লেও বিষ্ণুপুর এখন সারাদেশের আলোচিত গ্রাম।

(ডিসি/এসপি/জানুয়ারি ১৬, ২০২৫)