বাগেরহাটে লবণাক্ত অনাবাদি হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ, কৃষকের মুখে হাসি
সরদার শুকুর আহমেদ, বাগেরহাট : বাগেরহাট সদর, শরণখোলা ও রামপাল উপজেলায় মাঠে সারি সারি চিংড়ি ঘের। লবণাক্ত এই এলাকায় ফসল উৎপাদনের বিষয়টি একসময় ছিল কল্পনাও বাইরে। আর এখন সেই লবণাক্ত জমিতেই ফলছে রেড বীট, ফুলকপি, টমেটাসহ নানা সবজি। কোস্টস প্রকল্পের আওতায় জেলা কৃষি বিভাগ বিনামূল্যে লবন সহিষ্ণু সবজির বীজ, ফেরমন ফাঁদসহ নানা উপকরন সরবারহ করায় চলতি শীত মৌসুমে লবণাক্ত প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে কৃষকরা ফলিয়েছে রেড বীট, ফুলকপি, টমেটাসহ নানা সবজি। হয়েছে বাম্পার ফলন। হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে।
রামপাল উপজেলার বাসেরহুলা গ্রামের কৃষাণি উমা রায় (৩০) জানান, তাদের এলাকায় তীব্র লবণাক্ততার কারনে চিংড়ি চাষ ছাড়া কিছুই হত না। উচু জমিও লবণাক্ততার জন্য বছরের পর বছর ধরে অনাবাদি হিসেবে পড়ে থাকতো। কৃষি বিভাগ বিনামূল্যে লবন সহিষ্ণু সবজির বীজ, ফেরমন ফাঁদসহ নানা উপকরন সরবারহ করায় চলতি শীত মৌসুসে তার ৭০ শতাংস জমিতে রেড বীট, ফুলকপি বাঁধা কপি, টমেটাসহ নানা ধরনের সবজির চাষ করে তিনি বাম্পার ফলন পেয়েছেন। আমি ১৫ হাজার টাকা ব্যায় করে ৮৫ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছি। ক্ষেতে আরো সবজি রয়েছে। তারমত এই গ্রামের অনেক নারী ও পুরুষ তাদের অনাবাদি জমিতে এখন বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করে নিজেদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি হাট-বাজারে সবজি বিক্রি করে নিজেদের ভাগ্য ফিরেছে।
সদরের বেমরতা বাসিন্দা তুষার ইমরান (৫৫) জানান, পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য দুই বছর আগেও আমাদের বাজার থেকে সবজি কিনে খেতে হতো। এখন আর সেই দিন নেই, এখন আমরা নিজেরা সবজি উৎপাদনের পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করছি। আমাদের গ্রামের অধিকাংশ কৃষক এখন চিংড়ির পাশাপাশি সবজি চাষ করছে।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শংকর কুমার মজুমদার জানান, বাংলাদেশ মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউটের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী বাগেরহাটসহ উপকূলের ১৮টি জেলার ৯৩টি উপজেলায় লবণাক্ত জমির পরিমাণ ২৩ হাজার হেক্টর। বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা একটি লবনাক্ত এলাকা। এখানে মাটির লবনাক্ততার পরিমান ১০ ডিএস হয়ে যায়। জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সাগরের লোনাপানি উপকূলীয় এলাকার কৃষি জমিকে আরও লবণাক্ত করে তুলছে। ফলে এ অঞ্চলের উর্বর জমি লবণাক্ত হয়ে চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। জেলার অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনতে বাগেরহাট সদর, শরণখোলা ও রামপাল উপজেলায় ২ হাজার ৫০০ কৃষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
কোস্টস প্রকল্পের আওতায় কৃষি বিভাগ বিনামূল্যে লবন সহিষ্ণু সবজির বীজ, ফেরমন ফাঁদসহ নানা উপকরন সরবারহ করায় চলতি শীত মৌসুমে লবণাক্ত প্রায় এক হাজার হেক্টর অনাবাদি জমিতে কৃষকরা সবজি উৎপাদন করে বাম্পার ফলন পেয়েছে। আগামীতে এই জেলায় মোংলা, মোরেলগঞ্জ উপজেলার লবনাক্ত উচু অনাবাদি জমিতে সবধরনের সবজি উৎপাদনে কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ বিনামূল্যে লবন সহিষ্ণু সবজির বীজ, ফেরমন ফাঁদ ও উপকরন সরবারহ করা হবে বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।
(এস/এসপি/জানুয়ারি ১৪, ২০২৫)