আঞ্চলিক প্রতিনধি, বরিশাল : বরিশালের আগৈলঝাড়ায় পৌষ সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১শ ৪৫তম বার্ষিক সংকীর্ত্তন ও গোসাই নবান্ন উদযাপন উপলক্ষে গ্রামীণ ঐতিহ্যের মারবেল খেলার মেলা। আজ মঙ্গলবার কাক ডাকা ভোরে শুরু হওয়া মেলা চলবে মধ্য রাত পর্যন্ত। বিভিন্ন বয়সের হাজারো নারী-পুরুষ মেলার প্রধান আকর্ষণ ‘মারবেল খেলায়’ অংশগ্রহণ করেন।

মেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারি অধ্যাপক ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বিধান চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘এই গ্রামে ছয় বছর বয়সী সোনাই চাঁদ নামে এক মেয়ের বিয়ের বছর না ঘুরতেই তার স্বামী মারা যায়। স্বামীর মৃত্যুর পর শ্বশুড় বাড়িতে একটি নীম গাছের নীচে মহাদেবের আরাধনা ও পূজা অর্চনা শুরু করে বিধবা কিশোরী সোনাই। সাধনার মার্গে সিদ্ধ হয়ে তার অলৌকিক কর্মকন্ড এলাকা ছাপিয়ে বাইরেও প্রচার পায়। সোনাইয়ের জীবদ্দশায় আনুমানিক ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে ‘মা সোনাই চাঁদ আউলিয়া মন্দির’ স্থাপন করা হয়। সোনাইয়ের মৃত্যুর পরেও তার স্থাপিত মন্দির আঙিনায় চলে নাম সংকীর্ত্তন ও নবান্ন উৎসব। স্থানীয়দের উদ্যোগে ২০১২ সালে ওই মন্দিরটি পুনঃনির্মাণ করা হয়।

পঞ্জিকা মতে, প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তিরর দিন নাম সংকীর্ত্তন ও গোসাই নবান্ন মহাউৎসবের মাধ্যমে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে প্রায় অ২শ ৪৫ বছর যাবত। আর এই উৎসবকে ঘিরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে মারবেল খেলার মেলা।

মারবেল খেলার রহস্য সম্পর্কে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, শীতকালে মাঠ-ঘাট শুকিয়ে যাওয়ায় তাদের পূর্ব পুরুষেরা মেলার এই দিনে মারবেল খেলার প্রচলন শুরু করেন, যা আজও অব্যাহত আছে। তাদের উত্তরসূরী হিসেবে এখন গ্রামীণ ঐতিহ্যের মারবেল খেলা ধরে রেখেছেন। এ দিনটিকে ঘিরে রামানন্দেরআঁক গ্রামে কয়েকদিন থাকে উৎসবের আমেজ।

স্থানীয়রা তাদের মেয়ে-জামাইসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের এই মার্বেল খেলায় আমন্ত্রণ জানান। প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয়, স্বজন ও দর্শনার্থীদের ভিড়েগ্র্রামটি থাকে লোকে-লোকারণ্য। বাড়ি বাড়ি চলে চিড়া, মুড়ি, পিঠাপুলি খাওয়ার ধুম।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মন্দির এলাকার প্রায় ৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মারবেল খেলার আসর বসেছে। 'মেলাতে নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। থানা অফিসার ইন চার্জ মো. ওলিউল্লাহ বলেন, যতক্ষন মেলায় লোক সমাগম থাকবে ততক্ষন পুলিশ নিরাপত্তা প্রদান করবে।

(টিবি/এসপি/জানুয়ারি ১৪, ২০২৫)