রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : স্ত্রীকে পিটিয়ে অমানুষিক নির্যাতনের পর মুখে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে স্বামী। আজ মঙ্গলবার সকালে সাতক্ষীরা সদরের ঝাউডাঙা ইউনিয়নের মাধবকাটি গ্রামের বলফিল্ডের পাশ থেকে পুলিশ নিহত গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করেছে। ক্ষুব্ধ জনতা ঘাতক স্বামীকে আটক করে পুলিশে সেপার্দ করেছে।

নিহতের নাম খাদিজা খাতুন (২২)। তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নারায়নজোল গ্রামের মৃত ছিদ্দিক মালীর মেয়ে ও একই উপজেলার মাধবকাটি গ্রামের ধান ও চাউলের ব্যবসায়ি আমিরুল ইসলামের স্ত্রী।

গ্রেপ্তারকৃত আমিরুল ইসলাম (৪০) সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাধবকাটি গ্রামের এলাহী বক্সের ছেলে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নারায়নজোল গ্রামের আরিফুল ইসলাম জানান, তিনি ও খাদিজা তার বাবা ছিদ্দিক মালীর দ্বিতীয় স্ত্রী আঞ্জুয়ারা বেগমের সন্তান। বোন খাদিজার ছয় বছর আগে কলারোয়া উপজেলার বোয়ালিয়ায় বিয়ে হয়। সেখানে তাদের ফরহাদ হোসেন নামের এক সন্তান জন্মগ্রহণ করে। ফরহাদের বয়স সাড়ে তিন বছর হওয়ার পর এক বছর আগে দুলা ভাই এর সাথে বোন খাদিজার তালাক হয়ে যায়। এরপর থেকে খাদিজা সন্তানকে নিয়ে তাদের (বাপের) বাড়িতে থাকতো। সাত মাস আগে তার ফুফু গোলের ছেলে ধান ও চাল ব্যবসায়ি বলাডাঙা গ্রামের আমিরুল ইসলাম স্ত্রীকে তালাক দিয়ে মাধবকাটি বলফিল্ডের পাশে বাড়ি তৈরি করে বসবাস শুরু করে। একপর্যায়ে দুই পরিবারের মধ্যে কথা বলেই আমিরুলের সাথে খাদিজার বিয়ে হয়। বিয়ের পর খাদিজার ছেলে ফরহাদ তার মায়ের কাছেই থাকতো। আমিরুলের প্রথম পক্ষের মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।

আরিফুল ইসলাম আরো জানান, তার বোন খাদিজা মস্তিস্কের সমস্যা ছিল। এ নিয়ে খাদিজার সঙ্গে আমিরুলের মাঝে মাঝে বিরোধ হতো। মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে একটি মোবাইল থেকে মা আঞ্জুয়ারাকে বোন খাদিজার মৃত্যুর খবর দেন এক ব্যক্তি। খবর পেয়ে তিনিসহ স্বজনরা এসে খাদিজাকে ঘরের মধ্যে খাটের তলায় রক্তাক্ত অবস্থায় তার নিথর দেহ দেখতে ডান। খাদিজাকে নির্যাতনের পর বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে মর্মে জনতার হাতে আটককৃত আমিরুলের কাছ থেকে জানতে পারেন।

এ ব্যাপারে গ্রেপ্তারকৃত আমিরুলের ভাই রফিকুল ইসলাম জানান, তার ভাই আমিরুল ভাবী খাদিজাকে পিটিয়ে নির্যাতনের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছ মর্মে তিনি শুনেছেন। ভাই অপরাধ করলে শাস্তি চান তিনি।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ রাশেদুজ্জামান জানান, রাশিদার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের কারণে রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামিনুল হক জানান, মঙ্গলবার ভোরের দিকে খাদিজার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে নির্যাতনের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে মনে হলেও ময়না তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা যাবে না। এ ঘটনায় পুলিশ নিহত খাদিজার স্বামী আমিরুলেকে গ্রেপ্তার করেছ। নিহতের মা আঞ্জুয়ারা বেগম বাদি হয়ে আমিরুলের নাম উল্লেখ করে মঙ্গলবার বিকেলে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে খাদিজার লাশের ময়না তদন্ত শেষে মঙ্গলবার বিকেলে তার স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

(আরকে/এসপি/জানুয়ারি ১৪, ২০২৫)