শেরপুরের মাছের মেলায় এক বাঘাইড়’র দাম হাঁকা হচ্ছে সাড়ে ৩ লাখ
মো: আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : নদী মাতৃক বাংলাদেশে মেলা-পার্বন বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি চলে আসছে শতশত বছর ধরে। বিশেষ করে শীতের সময়টাতে দেশের নানা জনপদে জমে উঠে মেলা নামের এই আনন্দ উৎসবটি। এবার কুশিয়ারা নদীর লাগোয়া শেরপুরে বসেছে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা।
আজ সোমবার প্রায় দুইশত বছরের পুরনো এই মেলা বসেছে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুরের ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক সড়কের হামরকোনা এলাকার কৃষি জমির উপর। যদিও সামাজিক মাধ্যমে আগাম প্রচারণার কারণে একদিন আগেই অর্থাৎ রবিবার থেকেই মেলা জমতে শুরু করে। তবে মূল মেলা সোমবার থেকে শুরু হয়ে চলবে ১৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত।
মেলার ইজারাদার মো: কর্নেল আহমদ আহমদ জানান, মূল মেলা সোমবার থেকেই শুরু হবে। তবে সরকার কর্তৃক মেলার জন্য নির্দিষ্ট কোন জায়গা বরাদ্ধ না থাকায় আমরা জায়গা নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে আছি। তার আশা এবছর মেলায় অন্তত ১০ কোটি টাকারও বেশি ক্রয়-বিক্রয় হবে।
প্রতি বছর সনাতন ধর্মালম্বীদের পৌষ সংক্রান্তি ঘিরেই মূলত শুরু হয় এই মেলা। মেলার এই সময়টার জান্য সেরা মাছটি নিয়ে সারা বছর মুখিয়ে থাকেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শতশত সৌখিন ও পেশাদার ব্যাপারিরা। মেলায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি নজর থাকে কুশিয়ারা নদীর বিশাল আকৃতির বাঘাইর ও বোয়াল সহ হাওর-নদীর বড় মাছের প্রতি। কারণ এসব মাছ সারা বছর খুব একটা পাওয়া যায়না। স্বাদেও রয়েছে ভিন্নতা।
সরেজমিন মেলা ঘুরে দেখা যায়, সদ্য অগ্রাহয়নের ধানকাটা জমির উপর বিশাল এলাকা জুড়ে বসেছে মেলা। এতে ভাটি জেলা সুনামগঞ্জ, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, চট্রগ্রাম, ঢাকা সহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে বেপারীরা নিজেদের সংগ্রহ করা সেরা মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। হাওরের মিঠা পানির বিলুপ্ত মাছ থেকে শুরু করে গোটা সিলেট অঞ্চলের কুশিয়ারা, সুরমা সহ বড় নদী থেকে জেলেদের জালে ধরা পড়া বিশালাকৃতির বাঘাইর, বোয়াল, চিতল, কাতল সহ নানা দেশীয় প্রজাতির মাছ উঠেছে। এছাড়াও বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা ফিসারীর মাছও উঠেছে স্থানীয় আড়ৎতদারদের স্টলে। প্রতিটি স্টলের সামনে একের পর এক ট্রাকে করে বড় বড় মাছ নামানো হচ্ছে পাশাপাশি নিলামও চলছে সমানতালে।
এবারের মেলায় সবচেয়ে দৃষ্টি কেড়েছে ২ মন ওজনের বিশালাকৃতির বাঘাইর মাছ। এই মাছটি দেখতে রীতিমতো ভিড় জমেছে সেখানে। ভিড় সামলিয়ে বিক্রেতা রফিক আলীর কাছে জানতে চাওয়া হয় মাছটির ওজন ও দাম সম্পর্কে। তিনি জানান, মাছটির ওজন অন্তত ২মণ হবে। দাম জানান সাড়ে ৩ লাখ টাকা। দর্শনার্থীদেরও মধ্যে অনেক প্রবাসী ও ধনাট্যদের মাছটির দর দাম করতে দেখা যায়। বিশালাকৃতির এই বাঘাইর মাছটি দুদিন আগেই কুশিয়ারা নদীতে থেকে ধরা হয়েছে বলে জানান ওই বিক্রেতা। মেলায় এরকম আরও অনেকগুলি বাঘাইর মাছ দেখা গেছে। তবে দাম আকাশচুম্বি হওয়ার কারেণ সাধারণ মানুষের স্বাধ্যের বাহিরে।
মেলায় কুশিয়ার নদী থেকে ধরা ছোট-বড় বুয়াল ও বাঘাইড় মাছের পসরা সাজিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় থাকা বিক্রেতা মবু মিয়া জানান, গত বছরের তুলনায় এবার আশা করি বিক্রি ভাল হবে। মাছের দাম আকাশচুম্বি এমন অভিযোগ মানতে নারাজ এই বিক্রেতা।
এদিকে মাছের মেলাকে ঘিরে বসেছে খেলনা, ফলমূল, রকমারী খাবারের রেস্তুরাঁ সহ ঘরে ব্যবহারী তৈজসপত্রের দোকানও। সব মিলিয়ে উৎসবের এই আয়োজনে হাজার হাজার দর্শনার্থীর প্রচন্ড ভিড় দেখা গেছে পুরো মেলা প্রাঙ্গণ জুড়ে। পাশাপাশি মেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সহ বিভিন্ন বাহিনীর তৎপরতাও দেখা গেছে।
মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মাহবুবুর রহমান জানান, আমরা মেলাকে কেন্দ্র করে তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যাবস্থা করেছি। কোন ধরণের মাদক, জুয়া সহ অসামাজিক কোন কিছু যাতে না হয় সেদিকে আমরা দৃষ্টি রাখছি। সব মিলিয়ে উৎসব মূখর পরিবেশে যাতে মেলা হয় সে বিষয়ে আমরা সহযোগিতা করছি।
(একে/এসপি/জানুয়ারি ১৩, ২০২৫)