সরদার শুকুর আহমেদ, বাগেরহাট : জীববৈচিত্র্যে ভরপুর ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড (বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা) সুন্দরবন তীব্র শীত উপেক্ষা করে দেশী বিদেশী ইকোট্যুরিষ্টদের (প্রতিবেশ পর্যটক) ঢল নেমেছে। শুক্র থেকে আজ সোমবার (৩-৬ জানুয়ারি) বিকাল পর্যন্ত চারদিনেই এই ম্যানগ্রোভ বনের বাগেরহাটের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণ করেছে ৯ হাজার দেশি-বিদেশি প্রতিবেশ পর্যটক। একই অবস্থা চলছে সুন্দরবনের নয়াভিরাম দর্শনীয় পর্যটন স্পটগুলোতেও। চলতি পর্যটন মৌসুমে সুন্দরবনে পর্যটকদের ঢল সামাল দিতে হিমশিম থেতে হচ্ছে বন বিভাগকে।

সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার মো. আজাদ কবির এতথ্য নিশ্চিত করে জানান, পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে একটানা ৯ মাস হচ্ছে সুন্দরবনের পর্যটন মৌসুম। তবে শীত মৌসুমেই সুন্দবরে সব থেকে বেশী পর্যটক এস থেকে। সুন্দরবনের প্রায় ৯০ ভাগ পর্যটকই পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের কটকা-কচিখালীর টাইগার পয়েন্ট, হরিণের বৃহৎ বিচরণ ক্ষেত্রসহ জামতলা ও কদমতলা সীবিচ, হারবাড়িয়া, শরণখোলা, আলিবান্দা, ত্রিকোন আইল্যান্ড, দুবলা, পক্ষিরচর, ডিমের চর ও করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমন করে থাকে। গোটা সুন্দরবনের দেশী বিদেশী প্রতিবেশ পর্যটকের মধ্যে ৮০ ভাগ ভ্রমণ করে বাগেরহাটের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রে। গত চারদিন শুধুমাত্র করমজলেই দেশী বিদেশী ৯ হাজার দেশি বিদেশি প্রতিবেশ পর্যটক ভ্রমন করেছে।

মোংলা বন্দর থেকে নৌপথে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে ৫ কিলোমিটার নৌদূরত্বের পর্যটন কেন্দ্রে ঝুলন্ত ফুট ব্রীজ, ফুট ট্রেইল, ওয়াচ টাওয়ার, হরিণ, কুমির ও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির বাটাগুর বাসকা কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্র, ম্যানগ্রেভ আরবোরেটাম ও ডলফিন প্যাভিলিয়ন থাকায় প্রতিবছরই শীত মৌসুমে পর্যটকের ঢল নামে। মোংলার সাথে রেল সংযোগ ও পদ্মা সেতু চালুর পর রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে এখন সুন্দরবনের দূরত্ব মাত্র ৩ ঘন্টায় নেমে এসেছে। এসব কারণে সুন্দরবনের পর্যটন মৌসুমে পর্যটকদের জন্য নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। দিনে এস দিনে ফিরে যাওয়ার সুযোগ থাকার পাশাপাশি ২৪ ঘন্টায় ৬ বার রূপ বদলানো সুন্দরবরে প্রানপ্রকৃতি দেখতে এখন প্রতিদিনই খুলনা, মোংলা, শরণখোলা থেকে ট্যুর অপারেটররা কয়েকশত বিলাসবহুল লঞ্চ, ট্যুরিষ্ট বোটসহ জলযানে শত শত প্রতিবেশ পর্যটক সুন্দনব ভ্রমন করছে।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহম্মদ নূরুল করিম জানান, সুন্দরবনে পর্যটন মৌসুমে গত মৌসুমের চেয়ে এবার সংখ্যা দ্বিগুনের কাছাকাছি পৌছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সড়ক যোগাযোগ সহজতর হওয়ায় এখন মাত্র ৩ ঘন্টায় রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে সুন্দরবনে আসা যাচ্ছে। হোটেল-মোটেল বুকিংএর বিড়ম্বনা ছাড়াই পর্যটকরা স্বল্প সময়ে কম খরচে দিনের মধ্যেই সুন্দরবন ভ্রমন করে গন্তব্যে ফিরতে পারছে। এসব কারনে ট্যুর অপারেটর ও পর্যটকরা সুন্দরবন ভ্রমণ করতে বন বিভাগের কাছ থেকে নির্ধারিত রাজস্ব দিয়ে আগাম অনুমতিপত্র নিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে পর্যটকদের ঢল সামাল দিতে পর্যটকদের নিরাপত্তাসহ পর্যটন র্স্পটগুলোতে প্রস্তুত রয়েছে। বাঘ হরিণসহ বন্যপ্রানীদের নিরাপত্তা ও তাদের র্নিবিঘ্ন বসবাসের উপর অধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বন বিভাগের জনবল কম থাকায় পর্যটক ও বনজীবীদের সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় পর্যটকদের সহয়তা কামনা করেন এই বন কর্মকর্তা।

(এস/এসপি/জানুয়ারি ০৬, ২০২৫)