শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমাদের ঐক্যের যুদ্ধে ব্যর্থতা রয়েছে। আমরা গণতন্ত্রের কথা বললেও গণতন্ত্র চর্চা করি না। পরপর গণতন্ত্রকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। 

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে বিরোধে লিপ্ত রয়েছে। তবে, সহনশীলতার মধ্যদিয়ে আমরা গণতন্ত্রকে চর্চা করে যদি এগিয়ে যেতে পারি, তাহলে আমরা গণতন্ত্রকে লাভ করতে পারবো, অধিকারকে অর্জন করতে পারবো। করতে পারবো একটি সত্য, সুন্দর, সুখী, সমৃদ্ধ, প্রেমময় বাংলাদেশ নির্মাণ।

আজ শুক্রবার সকালে দিনাজপুর সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের ৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি একথা বলেন।

অর্থনীতি বিভাগের প্রধান জাহেদা পারভীনের সভাপতিত্বে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এ কে এম আল আব্দুল্লাহ, জেলা বিএনপির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন দুলালসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের ব্যর্থতা আমরা ৫২-৫৩ বছরেও বাংলাদেশকে একটি সুখী, শান্তিময়, প্রেমময়, ভালোবাসাময় এক দেশ গড়তে পারলাম না। আমরা রাজনীতি নিয়ে সংকীর্ণতায় ভুগি, আমরা নৈতিকতার সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গেছি। আমরা আবার একটি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। সেই স্বপ্নটি হচ্ছে, সত্যিকার অর্থেই আমাদের স্বাধীনতার ঘোষক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেব যে স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি সুখী, সুন্দর, সমৃদ্ধ, প্রেমময় গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশকে নির্মাণ করার আমরা চেষ্টা করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ৭১ সালে যুদ্ধে ছিলাম, এরপরে গণতান্ত্রিক যুদ্ধেও ছিলাম। আজকে সেই গণতান্ত্রিক যুদ্ধ শেষ হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা ঐক্যের যে যুদ্ধ, সবাই মিলে একসঙ্গে দেশটাকে যে গঠন করবো, নির্মাণ করবো, তাকে একটা পথরেখা দেখাবো আজকে এই বয়সে এসে আমার কাছে মনে হয় এই জায়গায় আমাদের ব্যর্থতা আছে। সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, আমাদের ছেলেরা, রাজনৈতিক কর্মীরা জীবন দিয়েছে, আমাদের রাজনৈতিক কর্মীরা দীর্ঘদিন অস্বাভাবিক, অমানবিক নির্যাতন সহ্য করেছে। ৭০০-৮০০ রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে গুম করাহয়েছে। ৬০ লাখের অধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়েছে। এই একটা অবস্থা আমরা পার হয়েছি। নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কিন্তু কেন জানিনা আমরা সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠতে পারছি না। আমি সংশ্লিষ্ট সবার কাছে এই আবেদন জানাবো, আমরা উঠে দাঁড়াই। আমরা আমাদের এই সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে দাঁড়াই। দাঁড়িয়ে আমরা একটা সুস্পষ্ট, সত্য, সুন্দর একটা পথ নির্ধারণ করি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খুব আনন্দের সঙ্গে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে পারতাম, যদি দেখতাম যে বাংলাদেশটা সত্যিকার অর্থেই একটা প্রেমময় ভালোবাসার দেশ হয়েছে। আমরা গণতন্ত্রের কথা বললেও গণতন্ত্রকে চর্চা করি না। এখানে পরপর গণতন্ত্রকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। গত ১৫ বছরে আমাদের দেশের সমস্ত সম্পদকে লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র চর্চা করে দেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।আমাদের অমৃত সম্ভাবনা ময় আমাদের এই বাংলাদেশ। এদেশের ছেলেমেয়েরা তাদের দেশপ্রেম দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এবং অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ভিত তৈরি করবেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দীর্ঘদিন পর দিনাজপুর প্রাক্তন কর্মস্থল আসলে দিনাজপুর সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে প্রধান অতিথি কে লাল গালিচায় ও ফুল ছিটিয়ে বরণ করা হয় পরবর্তীতে তিনি বেলুন উড়িয়ে সুবর্ণ জয়ন্তীর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

দিনাজপুর সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর আনব গোলাম রব্বানী দিনাজপুর সরকারি মহিলা কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল জব্বার, দিনাজপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এ কে এম আল আব্দুল্লাহ সহ অন্যরা।

(এসএস/এসপি/জানুয়ারি ০৩, ২০২৫)