তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : ৩টি সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে ৮ বছর আগে। কিন্তু  সেতুর  দু’পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। স্থানীয়দের বাঁশের সিঁড়ি বেয়ে সেতুতে উঠতে হচ্ছে । চলাচলের ক্ষেত্রে ভোগান্তি কমাতে সেতুগুলো নির্মাণ করা হয়। সেতুগুলো ভোগান্তি বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুন গুন। এ সেতু দিয়ে চলচাল করতে গিয়ে অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। 

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি ইউনিয়নের পশ্চাদপদ মাঝকান্দি-খাগড়াবাড়িয়া সড়কের ৩ টি সেতু নির্মাণে লাখ লাখ টাকার দুর্নীতি হয়েছে। পুরো কাজ শেষ না করেই বিলের সব টাকা ও জামানতের টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন ঠিকাদার।

আজ বুধবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গোপালগঞ্জ জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. সোহরাফ হোসেন সোহেলের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত দলের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র।

দুদকের ওই কর্মকর্তা বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি ইউনিয়নের আড়কান্দি সেতু হতে মাইজকান্দি হয়ে আড়ুয়াকান্দি খাল পর্যন্ত ৩টি সেতুসহ এইচবিবি রাস্তার নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। নির্মাণ কাজের প্রাক্কালিত মূল্য ছিল ৯০ লক্ষ টাকা। এ কাজ বাস্তবায়নের জন্য কাশিয়ানীর মেসার্স হাবিব এন্ড কোম্পানী নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর কার্যাদেশ দেয় জেলা পরিষদ। তবে মেসার্স হাবিব এন্ড কোম্পানী ফার্মের নামে কাজটি বাস্তবায়ন করেন গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। কিন্তু সেতুর সংযোগ সড়ক (এ্যাপ্রোচ) নির্মাণ না করে ৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা উত্তোলন করে নেন ঠিকাদার। এছাড়া কাজের বিল ও জামানতের টাকাও উত্তোলন করে নিয়েছেন ঠিকাদার। তৎকালীন জেলা পরিষদের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মনির হোসেন ও সহকারী প্রকৌশলী মো. আনিচুর রহমান কাজ বুঝে নিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে ঠিকাদারের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা উৎকোচ গ্রহণেরও অভিযোগ রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জনদুর্ভোগ লাঘবে সরকার ৯০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে সেতু নির্মাণ করলেও দুর্ভোগ কমেনি। বর্তমান একটি সেতুতে বাঁশের সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করছেন এলাকাবাসী। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটেছে। অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। অপর দুই সেতুর এ্যাপ্রোচে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ৪০দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচীর শ্রমিক দিয়ে মাটি কেটে যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

মাইজকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মো. বেল্লাল খান, আমিরুল ইসলাম, তাসলিমা বেগম বলেন, ভোগান্তি দূর করতে সেতু নির্মাণ করে আরও ভোগান্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। সিঁড়ি বেয়ে সেতুতে উঠতে হয়। শিশু ও বৃদ্ধরা মাঝে-মধ্যে সিঁড়ি থেকে হোচট খেয়ে পড়ে আহত হয়।আমাদের গ্রামের বাসিন্দা মোরাদ তালুকদার সেতু থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে। পরে তাঁর বাম পা কেটে ফেলতে হয়েছে। দ্রুত সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের দাবি জানান তারা।

ওড়াকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান বদরুল আলম বিটুল বলেন, ‘২০১৭ সালে জেলা পরিষদ আমার ইউনিয়নের মাইজকান্দি-খাগড়াবাড়িয়া সড়কে আড়কান্দি এলাকায় ৩ টি সেতু নির্মাণ করে। কিন্তু সেতুগুলোর এ্যাপ্রোচ না করেই অফিস কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ করে দিয়েছে। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এলাকাবাসী। আমি এলাকাবাসীর সুবিধার্থে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচীর শ্রমিক দিয়ে দুটি সেতুতে মাটি দিয়ে কোনো মতে চলাচলের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তবে একটিতে বাঁশের সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা করছে এলাকাবাসী। দ্রুত সেতু ৩ টিতে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হলে স্থানীয়রা দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাবে।’

জেলা পরিষদের অবসরপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মনির হোসেন উৎকোচের বিনিময় চূড়ান্ত বিলে স্বাক্ষর করার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি বিলে প্রথমে স্বাক্ষর করতে চাইনি। পরে ঠিকাদার গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম অস্ত্র ঠেকিয়ে আমার কাছ থেকে জোর করে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছেন।’

দুদকের জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমান জানান, ‘অভিযোগটি দুদকে তফসিলভূক্ত হয়েছে। তাই দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে মামলা করার জন্য সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।’

গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেছেন, আমি সরেজমিন পরিদর্শন করে জনগণের যাতায়াত সুবিধার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

(টিবি/এসপি/জানুয়ারি ০১, ২০২৫)