স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, যশোর : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই বীর প্রতীককে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্চনার প্রতিবাদে স্মারকলিপি দিয়েছেন যশোর জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ। জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে এসময় বিক্ষোভ মিছিল করেন শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক মো. আজহারুল ইসলামের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর এই স্মারকলিপি দেওয়া হয়। তবে, জেলা প্রশাসকের পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক রফিকুল হাসান।

স্মারকলিপি প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন, বৃহত্তর যশোরের বিএলএফ বাহিনীর প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন মনি, উপ-প্রধান রবিউল আলম, সাবেক জেলা কমান্ডার এ.এইচ.এম. মুযহারুল ইসলাম মন্টু, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার প্রকৌশলী আবুল হোসেন, নজরুল ইসলাম চাকলাদার, ইসমাইল হোসেন, আব্দুল মান্নান, সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার নজরুল ইসলাম সরদার ও সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আফজাল হোসেন দোদুল প্রমুখ।

স্মারকলিপিতে মুক্তিযোদ্ধারা উল্লেখ করেন, গত ২২ ডিসেম্বর দুপুরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কুলিয়ারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনা আব্দুল হাই কানু বীর প্রতীককে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করার মত ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনাটি দেশ ও জাতির জন্য লজ্জাকর। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ বাঙালি বুকের তাজা রক্ত ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে জাতি হিসেবে বাঙালিরা একটি স্বাধীন দেশ উপহার পেয়েছে। মুষ্টিমেয় রাজাকার, আল বদর, আল শামস ছাড়া বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা রাখেন। তার ফলে ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে কাঙ্ক্ষিত বিজয় অর্জিত হয়। সেই ডিসেম্বর মাসে জাতির সূর্য সন্তানকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। এই লজ্জাজনক ঘটনা জাতির কপালে কলঙ্ক এঁকে দিয়েছে। এটা একাত্তরের চেতনার উল্টো দিকে হাঁটা।

যশোরের মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে তারা স্মারকলিপির মাধ্যমে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। জড়িতদের বের করে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

স্মারকলিপি প্রদানের সময় মুক্তিযুদ্ধের লঘু সম্বলিত পতাকা ও জাতীয় পতাকা হাতে মিছিল করেন মুক্তিযোদ্ধারা।

এসময় মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, একটা চক্র যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাসী না তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের লাঞ্চিত করছে। বঙ্গবন্ধুকে তারা মজিবর বলে বঙ্গবন্ধু বলে না। সারাদেশে বঙ্গবন্ধুর ছবি, ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হচ্ছে। আপনাদের পকেটে থাকা টাকায় তো বঙ্গবন্ধুর ছবি। বঙ্গবন্ধুর ছবি থাকা টাকা তাহলে আমাদের দিয়ে দেন।

বক্তারা আরও বলেন, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামসহ সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের লাঞ্চনার ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন মুক্তিযোদ্ধারা থাকবে, তাদের সন্তানরা থাকবে। এছাড়া, গত সপ্তাহে যশোর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদে থাকা বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করার ঘটনায়ও তারা নিন্দা ও ক্ষোভ জানান।

(এসএমএ/এএস/ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪)