সোনারগাঁয়ে কিশোরী ধর্ষণ, গ্রাম্য সালিশে ১৩ লাখ টাকায় রফাদফা
স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানাধীন বারদী ইউনিয়নের নুনেরটেক মধ্যপাড়া গ্রামে সৌদি প্রবাসীর ধর্ষণে ১৬ বছর বয়সী ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উক্ত ঘটনা ধামাচাপা দিতে গ্রাম্য সালিশ করে ১৩ লাখ টাকার বিনিময়ে রফাদফা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় গ্রামবাসী। অন্যদিকে এ ঘটনা রফাদফা করে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে বারদী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের দুই বিএনপি নেতার নাম উঠে আসছে বলে জানান স্থানীয়রা এবং এ টাকা থেকে তারা দু’জন তিনলাখ টাকা আত্মসাত করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এলাকাবাসীর তথ্য মতে জানা যায়, সোনারগাঁও উপজেলার বারদী ইউনিয়নের নুনেরটেক মধ্যপাড়া গ্রামের সুলতান মিয়ার সৌদি প্রবাসী ছেলে আব্দুর রব পাশ্ববর্তী বাড়ির আহম্মদ মিয়ার মাদ্রাসায় ৮ম শ্রেণীতে পড়ুয়া ১৬ বছর বয়সী মেয়েকে বাসায় একা পেয়ে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের শিকারী ওই কিশোরীরএখন ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। বিষয়টি জানা জানি হলে গ্রামে গত সোমবার সন্ধ্যায় গ্রাম্য সালিশ বসে।
উক্ত সালিশে বারদী ইউনিয়ন ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারন সম্পাদক মো: শাহজাহান মিয়া ও বারদী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ও স্বপন সহ তাদের লোকজন ঘটনা ধামাচাপা দিতে উঠে পড়ে লাগে। সালিশে প্রবাসী আব্দুর রবকে ১৩ লাখ দিয়ে ঘটনা রফাদফা করার জন্য বলে দেয়। উক্ত বৈঠক শেষে বিএনপি নেতা শাহজাহানের কাছে নগদ ৩ লাখ টাকা দেয় বলে জানা যায়। কিন্তু ওই টাকা এখন পযর্ন্ত ভুক্তভুগী কিশোরীর পরিবার পাননি বলে দাবি করেছেন। স্থানীয়দের দাবী সালিশে আদায়কৃত টাকা এখনো ওই বিএনপি নেতার নিকট গচ্ছিত রয়েছে বলে জানান তারা। ধর্ষনের জরিমানার বাকি ১০ লাখ টাকা আগামী ২০ জানুয়ারী দেওয়ার কথা রয়েছে।
বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, ১৩ লাখ টাকায় রফাদফা করার পরও বিএনপির দুই নেতাকে আরো ৩ লাখ টাকা দেওয়ারপ্রতিশ্রুতি দিয়ে এ সালিশ বৈঠক হয় ও টাকা ভাগবাটোয়ারা করার জন্যই বিচারে এ রায় প্রদান করে তারা।
ভুক্তভোগী কিশোরীর ভাবি বলেন, আব্দুর রবের মেয়ের সাথে আমার ননদ প্রতিদিন রাতে ঘুমাতো। সেই সুযোগে সে তাকে ধর্ষণকরে। বিষয়টি জানা জানি হলে তাদের পরিবারকে জানানো হয়। তারা সমাধানের আশ্বাস দেন। তাদের ঘড়িমসি করার কারনে আমার ননদ এখন ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। তিনি আরো জানান তারা সমাধান না করার কারনে সালিশ ডাকা হয়েছে। সেখানে ধর্ষককে ১৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় এবং ৩ লাখ টাকা নগদ দেওয়ার পরও আমাদের পরিবার এক টাকাও পায়নি। এবং সন্তান জন্ম দেয়ার পর আব্দুর রবকে দিয়ে দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
ধর্ষক আব্দুর রবের সাথে এই ব্যাপারে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী জোহরা বেগমের সাথে কথা বললে তিনি দাবি করেন তার স্বামী এ অপরাধের সাথে জড়িত নয়। তবে ৩ লাখ টাকা কেন দিয়েছেন এমন প্রশ্ন জিজ্ঞেসা করলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেন নি।
টাকা আত্মসাতের ব্যাপারে বারদী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো: শাহজাহান মিয়া বলেন, ধর্ষণের অভিযোগে সালিশী বৈঠক হয়েছে। অভিযোগকারী কিশোরী ও অভিযুক্তদের কথা শুনে বৈঠকে এলাকাবাসী ১৩ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। তবে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি সঠিক নয়।
সোনারগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল বারী বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
(এমএস/এএস/ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪)