স্টাফ রিপোর্টার : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কারের দাবিতে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো এখন যতই ভালো কথা বলুক না কেন, ক্ষমতায় গেলে তারা হয় তো আবার বদলে যেতে পারে।

সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে এক গোলটেবিল বৈঠকে এমন শঙ্কার কথা জানান নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান। ‘সংস্কার কমিশনের অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রতিবেদন পেশ: তারপর কী?’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ও দি হাঙ্গার প্রজেক্ট।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, অর্থনৈতিক অপরাধ করেছে, ফৌজদারি অপরাধ করেছে, তাদের ন্যায়বিচারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার।

সংস্কারের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে হবে জানিয়ে সুজন সম্পাদক বলেন, আবার যেন কখনো স্বৈরাচার ফিরে না আসে, সে জন্য সংস্কার প্রয়োজন। অনেকে ইতিমধ্যে এটি ভুলে গেছেন। কেউ কেউ মনে করছেন, সংস্কার পরে করতে হবে। কিন্তু ফ্যাসিবাদ যাতে ফিরে না আসে, সে জন্য গভীর সংস্কার দরকার। এ জন্য সংস্কারের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে হবে। সংস্কারের দাবিতে মানুষকে সোচ্চার করতে হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরানো নিয়ে উচ্চ আদালতের রায়ের প্রসঙ্গে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, একটি বিষয় স্পষ্ট হওয়া দরকার যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের জায়গায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসবে না। আগামী নির্বাচন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই হবে।

নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার না করা এবং ‘না’ ভোট ফিরিয়ে আনা- এই দুটি বিষয়ে কারও দ্বিমত নেই জানিয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা যতগুলো প্রস্তাব পেয়েছি, তার একটি তালিকা আকারে অন্তর্বর্তী সরকারকে দিয়েছি। এছাড়া প্রস্তাবগুলো কমিশন বিবেচনা করছে। পরে সরকারের কাছে সুপারিশ দেওয়া হবে।

অনেকে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের পক্ষ মত দিচ্ছেন উল্লেখ করে সভায় উপস্থিত শ্রোতাদের কাছে এ বিষয়ে মতামত জানতে চান বদিউল আলম মজুমদার। এ সময় প্রায় সবাই জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে হাত তুলে মতামত দেন।

এই বৈঠকে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে সাবেক সচিব আব্দুল আউয়াল মজুমদার বলেন, সদিচ্ছা না থাকলে যতই আইন করা হোক, সংস্কার করা হোক তাতে লাভ হবে না। রাজনৈতিক দলগুলো অনেক ভালো কথা বলছে। দলগুলো এখন যতই ভালো কথা বলুক, কিছুটা শঙ্কা থেকে যায়, তারা হয়তো ক্ষমতায় গিয়ে বদলে যাবে। আবার আগের মতো আচরণ করার চেষ্টা করবে।

অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান তোফায়েল আহমেদ বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনে সংসদীয় পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। চেয়ারম্যান বা মেয়দ পদে সরাসরি কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। সবাই সদস্য বা কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করবেন। নির্বাচিত সদস্যরা পরে তাদের একজনকে চেয়ারম্যান বা মেয়র নির্বাচন করবেন।

তিনি আরও বলেন, এ ক্ষেত্রে সদস্য হিসেবে যারা নির্বাচন করবেন, তাদের মান উন্নয়ন করতে হবে। আরেকটি আশঙ্কা থাকে যে মেয়র বা চেয়ারম্যান নির্বাচনে সদস্যদের মাথা বিক্রি হয়ে যেতে পারে। এটি ঠেকাতে আইনি বিধান থাকতে হবে। যাতে কেউ এ ধরনের অপরাধ করলে তার পদ থাকবে না।

রাজনৈতিক দল ও অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে জাতীয় সনদ বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বৈঠকে লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। এতে বলা হয়, কোন সংস্কারগুলো অন্তর্বর্তী সরকার করবে এবং কোনগুলো নির্বাচিত সরকার করবে, তা নির্ধারণ করতে হবে। নির্বাচিত সরকার যেসব সংস্কার বাস্তবায়ন করবে, সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি জাতীয় সনদ বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে হবে। যাতে যে দল সরকার গঠন করবে, তারা যেন সংস্কারের উদ্যোগ নিতে এবং বিরোধী দলগুলোও যেন তাতে সমর্থন দিতে বাধ্য হয় সেখানে এমন বিধান থাকা উচিত।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪)