গোপালগঞ্জ শহরে জেলা বিএনপির ৩টি অফিস
তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে জেলা বিএনপির ২টি কার্যালয় নিয়ে আলোচনা সমালোচনার মধ্যে আরো একটি কার্যালয়ের উদ্বোধন করা হয়েছে। এ নিয়ে জেলা শহরে জেলা বিএনপির ৩টি কার্যালয় যাত্রা শুরু করেছে।
গতকাল রবিবার সন্ধ্যা শহরের বড় বাজারের পৌর সুপার মার্কেটের নতুন ভবনের ২য় তলায় জেলা বিএনপির নতুন এ কায্যালয় উদ্বোধন করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিকুজ্জামান।
এর আগে জেলা বিএনপির সাবেক সাভাপতি এম এইচ খান মঞ্জু শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় তার বাস ভবনে জেলা বিএনপি’র সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন। এছাড়া অপর সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ গত ১৩ ডিসেম্বর শহরের গেটপাড়ায় বিএনপির অফিস উদ্বোধন করেছেন। সেখানেও জেলা বিএনপির সাইনেবোর্ড টাঙানো হয়েছে।
জেলা বিএনপির ওই দুই কায্যালয় নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যান তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এরই মধ্যে ৩য় কার্যালয় উদ্বোধন করা হয়। তবে বিএনপির নেতারা বলছে রবিবার (২২ ডিসেম্বর) উদ্বোধন করা অফিসটিই জেলা বিএনপির মূল কায্যালয়। সকল নেতাকর্মীকে এ কায্যালয়ে এসে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য আহবান জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে জেলা বিএনপি ৫ ভাগে বিভক্ত হয়েছে পড়েছে। এতে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকান্ডে প্রভাব পড়েছে। এতে জনমনে সৃষ্টি হচ্ছে বিভ্রান্তি।
জানা গেছে, ২০১৯ সালে গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এরপর থেকে সেই আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই চলছে গোপালগঞ্জ জেলার বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। আর ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই গোপালগঞ্জ থেকে বিএপির অফিস গুটিয়ে নেওয়া হয়।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারে পতনের পর রাজনীতিতে আবারো সক্রিয় হয়ে ওঠেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এইচ খান মঞ্জু। গোপালগঞ্জ জেলা শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের লঞ্চঘাট এলাকায় তার বাড়ির ৩ তলা ভবনে জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সাইবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছেন। এখান থেকেই তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন।
গত ১৩ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জ শহরের গেটপাড়ায় একটি টিনের ঘরে অফিস উদ্বোধন করেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ। সেখানোও জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সাইনেবোর্ড টাঙানো হয়েছে। জেলা বিএনপির কার্যালয় কোনটি সেই প্রশ্ন সারাক্ষণ ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে।
এদিকে, শেখ হাসিনার পতনের পর জেলা বিএনপির বিভক্তি পষ্ট হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম ও কেন্দ্রীয় সেচ্ছাস্বেক দলের সভাপতি এস.এম জিলানী জেলা বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেসবাহ্, জেলা বিএনপির সাবেক সাপতি এম এইচ খান মঞ্জু, সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, সাবেক সভাপতি এফ.ই শরফু্জামান জাহাঙ্গীর আরো চারটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিভেদ।
এ ব্যাপারে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক সাজ্জাদ হোসেন হিরা বলেন, যারা অফিস খুলে বসেছেন এগুলো তাদের ব্যক্তিগত অফিস। যা কোন ভাবেই বিএনপির কায্যালয় নয়। তারা বিএনপিতে জায়গা নিতে অফিসের নামে দ্বিধাবিভক্তি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। রোবাবার যে অফিসের উদ্বোধন হয়েছে, এটা বিএনপির মূল কার্যালয়।
জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য এ্যাভোকেট তৌফিকুল ইসলাম তৌফিক বলেন, কোন অফিস করতে হলে দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ তৃণমূলের নেতাকর্মীদের থাকতে হবে। কিন্তু ওই দুটি অফিসে কোন নেতাকর্মী যায় না। জেলা বিএনপির আহবায়ক যে অফিস উদ্বোধন করেছেন এটাই বিএনপির মূল কায্যালয়। কেউ ব্যক্তিগত অফিস খুলে বসলে সেটা বিএনপির কায্যালয় হবার কোন সুযোগ নেই। তাই নেতাকর্মীদের দ্বিধায় না পড়ে মুল অফিসে আসার আহবান জানান তিনি।
দলীয় গ্রুপিং এর বিষয়ে তিনি বলেন, গোপালগঞ্জে কোন গ্রুপিং বা কোন্দল নেই। এখানে আহবায়ক কমিটি রয়েছে। এ কমিটির নিদের্শনায় রাজনৈতিক কর্মকান্ড চলছে। কেউ যদি বলে থাকে তিনি একটি গ্রুপ পরিচালনা করছে তবে সেটা ভুল।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিকুজ্জামান বলেন, দলের সুবিধা নিতে ও আওয়ামী লীগ নেতাদের পুনর্বাসিত করতেই বিএনপির ব্যানার ব্যবহার করে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএইচ খান মঞ্জু ও সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ব্যক্তিগত অফিস খুলে জেলা কার্যালয় দাবি করছে, এটা ঠিক নয়। জেলা বিএনপির নতুন অফিস উদ্বোধন করা হয়েছে। এখন থেকে এটাই জেলা বিএনপির মুল অফিস। বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দলসহ সকল অঙ্গসংগঠনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড এখান থেকে পরিচালিত হবে।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এইচ খান মঞ্জুর বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে এ বিষয় জেলা বিএনপি সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ বলেন, আমি বিগত দুইবারের বিএনপির মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলাম। জেলা বিএনপির সভাপতিও ছিলাম। তবে বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি আমার পছন্দ হয়নি, যার কারণে আমি ওই কমিটি নিয়ে অনাস্থা দিয়েছি। তবে পদত্যাগ করিনি। আর বিগত কয়েক বছরে মামলা হামলার জন্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গোপালগঞ্জে জেলা বিএনপির কোনো কার্যালয় রাখা সম্ভব হয়নি। গত ১৬ বছর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে নেতাকর্মীদের হয়রানি ও নির্যাতন করা হয়েছে। এই কার্যালয় উদ্বোধনের মাধ্যমে গোপালগঞ্জে বিএনপির দলীয় কর্মকাণ্ড আরো বেগবান হয়েছে। আগামী দিনে আবারো আমি সভাপতি হবো। এটি দলের হাইকমান্ড থেকে আমাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। তখন আর এ অফিস নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকবে না।
(টিবি/এসপি/ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪)