প্রতিদিন কোটি টাকার শিম বিক্রি হচ্ছে ঈশ্বরদীতে
ঈশ্বরদী প্রতিনিধি : পাবনার ঈশ্বরদীতে জনপ্রিয় রূপবান ও অটো জাতের শিম। ভালো ফলন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হওয়ায় কৃষকরা শিম চাষে হয়ে উঠেছেন আগ্রহী। শিম চাষে খরচের তুলনায় এবারে দাম বেশি পেয়ে কৃষকের মুখে সাফল্যের হাসি। মুলাডুলিতে কাঁচামালের আড়তে প্রতিদিন প্রায় দেড় কোটি টাকার শিম বেচাকেনা হচ্ছে। এছাড়াও আওতাপাড়া, সিলিমপুর, নতুনহাট, জয়নগর বোর্ড ঘর এলাকায় ট্রাক ট্রাক শিম বিক্রি হচ্ছে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতা ও আড়তদারদের পদচারণায় মূখরিত এসব আড়ত। বিগত বছরগুলোতে আগাম শিমের ভরা মৌসুমে আড়তে প্রতিদিন ২-৩ কোটি টাকার শিম বেচাকেনা হলেও এবারে প্রবল বর্ষণের কারণে আগাম শিমের ফলনে বিপর্যয় ঘটেছে। শিমের উৎপাদন এবারে কম হলেও দাম বেশী থাকায় প্রতিদিন বিক্রি কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মুলাডুলিসহ বিভিন্ন এলাকার আড়তদার ও কৃষি কর্মকর্তার সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
মুলাডুলি সবজি আড়তে রবিবার (২২ ডিসেম্বর) দেখা যায়, শিম বেচাকেনার মহাকর্মযজ্ঞ চলছে। পাওয়ার ট্রলি, অটোরিকশা, শত শত ভ্যান, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে কৃষকরা শিম নিয়ে আসছেন। ব্যাপারী, আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা চাষিদের সাথে শিমের দরদাম করে কেনাবেচা করছেন। প্রতিটি আড়তেই শিমের স্তুপ। স্থান সংকুলান না হওয়ায় বস্তায় ভরে আড়তের আশপাশে রাখছেন। শ্রমিকরা ওজন করে ভরছেন বস্তায়। আবার কেউ শিমের বস্তা ট্রাকে তুলছেন।
আড়তদাররা জানালেন, বিগত বছরগুলোতে মৌসুমে প্রতিদিন ১০০-১২০ ট্রাক শিম এখানে বাজারজাত হতো। এবারে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ফলন কম হওয়ায় ৭০-৮০ ট্রাক শিম রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। মৌসুমের শুরুতে আগাম শিম এখানে ৩৪০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হয়েছে। বর্তমান বাজারদর ৪০-৫০ টাকা কেজি। তবে দীর্ঘসময় শিমের দাম ১০০-১৫০ টাকা দামে কেনাবেচা হয়েছে। আমদানি বেড়ে যাওয়ায় ১৫ দিন আগে দাম কমতে শুরু করেছে। শিমের ফলন এবারে কম হলেও দাম ভালো পাওয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় কৃষকরা বেশি লাভবান হয়েছেন।
মুলাডুলি আড়তের প্রতিষ্ঠাতা আলম ট্রেডার্সের স্বত্তাধিকারী সুজন শেখ জানান, ঈশ্বরদীতে শিমের উৎপাদন এবছর কম হলেও প্রতিদিন কমপক্ষে এক থেকে দেড় লাখ টাকার শিম এখানে বেচাকেনা হচ্ছে। পনেরদিন ধরে শিমের দাম প্রায় ৪০ টাকা কেজিতে বেচাকেনা হচ্ছে। এখানকার আড়তে প্রতিদিন কমপক্ষে ১,৫০০ টন শিম আমদানি হয়।
শিম ব্যবসায়ী আবু বক্কর বলেন, অন্যবারের তুলনায় এবার আড়তে শিমের আমদানি কম হলেও এখন প্রতিদিন কমপে ১,২০০-১,৫০০ টন শিম আমদানি হয়। ৭০ থেকে ৮০ ট্রাকবোঝাই শিম দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। আমদানি কম হলেও দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা খুশি। কারণ শুরুতেই কৃষকরা ৩৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছে, এখন বাজারদর ৪০-৫০ টাকা। অন্যান্য বছর এ সময় শিমের দাম থাকে সর্বোচ্চ ১০-১৫ টাকা কেজি।
আড়তদার সমিতির উপদেষ্টা ও চাষি আমিনুর রহমান বাবু ওরফে শিম বাবু জানান, শিম কেনা-বেচার কাজে মূলাডুলি আড়তে প্রায় সহস্রাধিক শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, মৌসুমের শুরু থেকে আগাম শিম চাষিরা বাজারজাত করছেন। শুরুতেই তারা ২৫০-৩৫০ টাকা কেজি দরে দাম পেয়েছেন। মাঝে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে শিমের ক্ষতি হলেও কৃষকরা এখন আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় এবারে শিমের দাম বেশি পাওয়ায় আমাদের কৃষকরা হয়েছেন লাভবান।
(এসকেকে/এসপি/ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪)