ফরিদপুরে ডাকাতি মামলার ৭ আসামী গ্রেফতার
রিয়াজুল রিয়াজ, ফরিদপুর : ফরিদপুর জেলার ভাংগা থানার চাঞ্চল্যকর একটি ডাকাতি মামলার মূল রহস্য উদঘাটনসহ ৭ জন আসামিকে গ্রেফতার ও ৪ টি পিকআপ উদ্ধার করেছে ভাঙ্গা থানা পুলিশ।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এণ্ড অবস) শৈলেন চাকমা গণমাধ্যমকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ওই মামলার বাদী মো. নজরুল ইসলাম (৪৪) গত ৫ নভেম্বর ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানায় হাজির হয়ে অবহিত করেন যে, তিনি একজন গরু ব্যবসায়ী। তার নজরুল এগ্রো এন্ড ডেইরী ফার্ম নামে গরুর খামার আছে। গত ১ নভেম্বর রাতে তিনি যশোর জেলার বাঘারপাড়া থানাধীন চারাভিটা সাকিনস্থ সেলিম এর বাড়ী হতে বাচ্চাসহ একটি গাভী এবং ৯ মাসের গর্ভবতী অপর দুটি গাভী গরু কিনে তার ব্যক্তি মালিকানাধীন অশোক লিলেন্ড পিকআপে করে বাদী ও তার গাড়ীর চালক মিন্টু মাতুব্বর(৩৬)সহ বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দেন। ওইদিন রাত অনুমানিক ১১ টা ৫০ মিনিটের দিকে বাদী ভাংগা থানাধীন হামিরদী ইউনিয়নের মাধবপুর সাকিনস্থ মাধবপুর টেকনিক্যাল কলেজের সামনে ফরিদপুর-ঢাকা মহাসড়কের পাকা রাস্তায় পৌছালে, অজ্ঞাতনামা ১৩/১৪ জন ডাকাত একটি সাদা রংয়ের মাহিন্দ্রা পিক-আপ যোগে ভাংগার দিক হতে বাদীর ব্যবহৃত রেডমি নোট-১৩ এন্ড্রোয়েড মোবাইল ফোন, নগদ তিন হাজার টাকা, বাদীর মোটর সাইকেলের স্মার্টকার্ড, কয়েকটি ব্যাংকের চেক বহির পাতা, এনআইডি এর মূল কার্ড এবং চালকের নিকট থাকা নগদ এক হাজার সাত শত টাকা, ড্রাইভিং লাইসেন্স, রেডমি ১০ এন্ড্রোয়েড মোবাইল ফোন এবং পিকআপ গাড়ীসহ ৩টি গরু লুন্ঠন করে নিয়ে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ নভেম্বর ভাঙ্গা থানায় একটি মামলা ( নং-০৫ ধারা: ৩৯৫/৩৯৭ পেনাল কোড) রুজু করা হয়। ওই থানার উপপরিদর্শক (এসআই)/(নিঃ) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান (পিপিএম) এর ওপর মামলার তদন্তভার অর্পণ করেন ভাংগা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোকছেদুর রহমান।
এই ঘটনায় ফরিদপুর জেলার পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল (পিপিএম-সেবা) এর দিক নির্দেশনায় ভাংগা থানার একটি চৌকসদল তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা ও গুপ্তচর নিয়োগ, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা ও সিসি টিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে আসামী সনাক্ত, আসামী গ্রেফতার এবং গরু, মাছ ও লুন্ঠিত পিকআপ উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান শুরু করে।
গত ২০ ডিসেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ১১ টার দিকে রাজধানীর কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন নজরগঞ্জ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ডাকাতি ঘটনার সহিত জড়িত আসামী মো. পারভেজ মুন্সি(২৭) ও মো. আরাফাত হোসেন(২৬)কে গ্রেফতার করে আসামীদের নিকট হতে একটি পিকআপ উদ্ধার করে পুলিশ। এবং সাথে সাথে আসামীদ্বয় ঘটনার বিষয় স্বীকার করে বলেও জানায় পুলিশ। পরবর্তীতে আসামীরা ফৌজদারি কার্য বিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়ের দেওয়া তথ্য যাচাই বাচাই করে পুনরায় অভিযান চালিয়ে ২২ডিসেম্বর দিবাগত রাত আড়াইটার সময় ভাঙ্গা দক্ষিণপাড় বাসষ্ট্যান্ড হতে সোহেল কাজী (২৩), জুয়েল কাজী(২২), মিন্টূ শেখ (৫৫) ও মো. সাগর(২৫) কে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধারকৃত গাড়ীর ড্রাইভার মিন্টু এর একটি রেডমি-১০ মোবাইল আসামী মো. সাগর(২৫) এর দখল হতে উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদের মধ্যে মো. সাগর(২৫) কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় এবং ওপর ৩ (তিন) জনকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়। মামলার তদন্ত কার্যক্রম এখনো অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃত ডাকাতদের থেকে এখন পর্যন্ত পুলিশ উদ্ধার করেছে একটি হলুদ রংয়ের অশোক লিলেন্ড পিকআপ (রেজিঃ নং-ঢাকা মেট্রো-ন-১৯-৪১৯৮), নীল রংয়ের একটি টাটা এসিই ব্র্যান্ডের এক্সটু পিক-আপ গাড়ী (রেজিঃ নং-ঢাকা মেট্রো-ন-১২-৩৪৬৯), সাদা রংয়ের দুইটি পিকআপ (রেজিঃ নং-বরিশাল মেট্রো-ন-১১-০৫২১ ও খুলনা মেট্রো-ন-১১-২০৪৬), লুন্ঠিত গরু বিক্রয়ের নগদ দশ হাজার টাকা, ভিকটিমের একটি অ্যান্ডোয়েট মোবাইল ফোন প্রভৃতি। এছাড়াও ডাকাতদের নিকট থেকে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র ও সরঞ্জামাদী যথাক্রমে- একটি স্টীলের সাদা চাকু লম্বা অনুমান এক ফুট, একটি প্লাষ্টিকের বাট যুক্ত চাপাতি (বাটসহ লম্বা অনুমান এক ফুট), একটি কাঠের হাতলযুক্ত হাতুড়ী (বাটসহ লম্বা অনুমান এক ফুট), একটি কাঠের হাতলযুক্ত ছোরা (হাতলসহ লম্বা অনুমান দুই ফুট) ও দুইটি রামদা কাঠের বাটযুক্ত (বাটসহ লম্বা অনুমান ৩.৫ ফুট) উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
(আরআর/এএস/ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪)