স্বাধীন বাংলাদেশ হয়েছে, কিন্তু ধর্মীয় সংখ্যালঘুর অবস্থান পরিবর্তন হয়নি
শিতাংশু গুহ
কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মোহাম্মদ খান, ইসলাম ধর্ম নিয়ে তাঁর ব্যাখ্যা উদার। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আবুল কালাম সবার নমস্য। এদের কথা শুনলে বা মানলে ধর্ম নিয়ে ‘সভ্যতার সংঘাত’ অনেকটা কমে যেতো। নেতাজী সুভাষ বসু-র বিরুদ্ধে কোন মুসলমানকে কথা বলতে শুনিনি। এপিজে আবুল কালাম-কে নিয়ে কোন হিন্দুকে বিরূপ মন্তব্য করতে দেখিনি। তাহলে একথা কি বলা যায় যে, হিন্দু হও তো সুভাষ বসু হও; মুসলমান হও তো এপিজে আবুল কালাম হও? বড় কথা হচ্ছে, সুভাষ বসু বা এপিজে আবুল কালাম মানুষের মত মানুষ ছিলেন, ‘সবার ওপরে মানুষ সত্য’; হিন্দু-মুসলমান হওয়ার আগে একজন ভালো মানুষ হও, সেটা হলেই কেবলমাত্র একজন ভাল হিন্দু বা ভালো মুসলমান হওয়া সম্ভব?
ভারত-পাকিস্তান নিয়ে উপমহাদেশে তর্কের শেষ নেই? স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন মওলানা আবুল কালাম আজাদ, তিনি সসম্মানে আমৃত্যু মন্ত্রিত্ব করে গেছেন। একই সময়ে পাকিস্তানে আইনমন্ত্রী ছিলেন যোগেন মন্ডল, পূর্ব-বাংলাকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তিতে তিনি ব্যাপক সহায়তা করেছিলেন। অথচ মন্ত্রী থাকা অবস্থায় তাঁকে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে কলকাতা গিয়ে প্রাণ বাঁচাতে হয়েছে। এ দু’টি ঘটনা বিশ্লেষণ করলে ভারত-পাকিস্তানে ধর্মীয় সংখ্যালঘু’র মর্যাদা বা অবস্থান বোঝা কি সহজ হয়না? সেই পূর্ব-বাংলা পরে পূর্ব-পাকিস্তান হয়েছে, আরো পরে তা স্বাধীন বাংলাদেশ হয়েছে, কিন্তু ধর্মীয় সংখ্যালঘু’র অবস্থান পরিবর্তন হয়নি, আজো তাঁরা অত্যাচারীর আমানত, নিজদেশে পরবাসী?
ভারতে চারজন মুসলমান রাষ্ট্রপতি হয়েছেন, জাকির হোসেন, ফখরুদ্দিন আলী আহমদ, মোহাম্মদ হিদায়েতুল্ল্যাহ এবং এপিজে আবুল কালাম। ভারতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিমান বাহিনী প্রধান, এবং অন্য অসংখ্য পদ মুসলমানরা অলংকৃত করেছেন। একদা পশ্চিমবঙ্গের স্পীকার মুসলিম ছিলেন, কলকাতার মেয়র এখন ফিরহাদ হেকিম। বাংলাদেশে সুরেন্দ্র কুমার সিন্হা সামান্য সময় প্রধান বিচারপতি ছিলেন, তিনি দেশছাড়া হয়েছেন। বিচারপতি দেবেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য্য প্রধান বিচারপতি হতে পারতেন; মেজর জেনারেল চিত্ত রঞ্জন দত্ত সেনাপ্রধান হতে পারতেন; এ,কে, গাঙ্গুলী বাংলাদেশে ব্যাঙ্কের গভর্নর হতে পারতেন, অজ্ঞাত কারণে কেউ কিছু হ’ননি! যারা ভারতে মুশকান-আরুশা বিতর্কে হাততালি দিয়েছেন, তারা কিন্তু নিজের ঘরের দিকে তাকিয়ে দেখেননি।
লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।