স্টাফ রিপোর্টার : দেশে এ বছর শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। তারা বলছেন, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এবার ঘন কুয়াশার সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহের সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে ‘লা নিনা’র কথা।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) তথ্য অনুযায়ী, ‘লা নিনা’ হলো একটি আবহাওয়া পরিস্থিতি, যেখানে প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব অংশের পানি স্বাভাবিকের তুলনায় ঠান্ডা হয়ে যায়। এর ফলে বাতাসের চাপ ও তাপমাত্রার ভারসাম্যে পরিবর্তন ঘটে।

ডব্লিউএমও বলছে, আগামী তিন মাসে ‘লা নিনা’র প্রভাব বাড়তে পারে। তবে এই পরিস্থিতি খুব বেশি সময় স্থায়ী হবে না।

সাধারণত ‘লা নিনা’র প্রভাব বাড়লে দক্ষিণ এশিয়ায় শীতকালে ঠান্ডা বায়ুর প্রবাহ বেড়ে যায়। এতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি শীত অনুভূত হয় এই অঞ্চলে। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশ হিসেবে বাংলাদেশেও পড়ে এই প্রভাব।

ডব্লিউএমওর পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী তিন মাসে অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ‘লা নিনা’র প্রভাব বাড়লে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ঠান্ডা অনুভূত হতে পারে।

একই আভাস মিলল বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুকের কথায়। তিনি বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার শীত বেশি থাকতে পারে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন থেকে আটটি পর্যন্ত শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে।

ওমর ফারুক বলেন, “লা নিনার প্রভাবে শীত বেশি থাকে, এল নিনোর প্রভাবে গরম থাকে। এ বছর বর্ষার শেষের দিকে অর্থাৎ গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বৃষ্টিপাত বেশি ছিল। এতেও ছিল ‘লা নিনা’র প্রভাব।”

এবার শীতের তীব্রতা বাড়াতে বৃষ্টি ও কুয়াশাও ভূমিকা রাখতে পারে বলে জানালেন এই আবহাওয়াবিদ।তিনি জানান, বাতাস অস্বাস্থ্যকর। গত কয়েকদিন ধরেই অনেক ধুলা। ধুলাবালি বেশি থাকার কারণে কুয়াশাও বেশি থাকবে। ১৩ ডিসেম্বরেই মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তর-উত্তর পূর্বাংশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।

এবারের শীত মৌসুমে দেশের ওপর দিয়ে তিন থেকে আটটি পর্যন্ত শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে জানিয়ে ওমর ফারুক বলেন, এর মধ্যে ডিসেম্বরেই হতে পারে এক অথবা দুইটা। আর জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে হবে বাকিগুলো। তবে তিন থেকে চারটির মতো শৈত্যপ্রবাহ তীব্র হবে দেশের উত্তরপশ্চিমাঞ্চল, উত্তরপূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে। তবে এ সময়ে বৃষ্টিপাতের অবস্থা স্বাভাবিক থাকবে।

ওমর ফারুক জানালেন, কোনও অঞ্চলে তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেখানে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে বলে ধরা হয়। আর তাপমাত্রা আরও কমে ৬ ডিগ্রি থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে নামলে মাঝারি, ৪ ডিগ্রি থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে নামলে তীব্র এবং ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তা নিচে নামলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হিসাবে গণ্য করা হয়।

তবে শৈত্যপ্রবাহ হিসাবে ধরতে হলে এই তাপমাত্রার স্থায়িত্বকাল অন্তত তিনদিন হতে হবে বলে জানালেন ওমর ফারুক। অর্থাৎ, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলেও সে অবস্থা থাকতে হবে কমপক্ষে তিনদিন।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন এই তাপমাত্রা রেকর্ড হয়।

শুক্রবারও দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে এই তেঁতুলিয়াতেই, ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পঞ্চগড় ছাড়াও এদিন রাজশাহী ও চুয়াডাঙ্গাতেও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ১৩, ২০২৪)