তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার বহুগ্রাম প্রতাপ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জন বিশ্বাস। তিনি এ বিদ্যালয়ে যোগদানের পর অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বিদ্যালয়ের জমি লীজ, শিক্ষার্থীদের সেশন ফি ও ভর্তিসহ বিভিন্ন খাতের আয়ের টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে নিজের কাছে রেখে ইচ্ছামতো ব্যয় করেন। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি সহ অন্যান্য টাকা রশিদ ছাড়া আদায় করে আসছেন। বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয় গোপন করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া বিদ্যালয়ের পুকুরের বালু বিক্রির টাকা প্রধান শিক্ষক পকেটে পুরেছেন। বিদ্যালয়ের জনবল নিয়োগে প্রধান শিক্ষক ৬ জন প্রার্থীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা উৎকোচ নেন। পছন্দের প্রার্থীরা নিয়োগ পাবে না বুঝতে পেরে প্রধান শিক্ষক তার আত্মীয়কে দিয়ে মামলা-মোকাদ্দমা করিয়ে নিয়োগ বন্ধ করে দেন। এমনকি উচ্চ আদালতের ভুয়া ‘নিষেধাজ্ঞার’ কাগজও তৈরি করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। প্রধান শিক্ষক এ কাজগুলো করেছেন বহুগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা পরিতোষ সরকারে ছত্র ছায়ায়।

পরিতোষ সরকার গোপালগঞ্জ ১ আসনের এমপি লেঃ কর্ণেল (অব) মুহম্মদ ফারুক খানের ঘনিষ্ট জন হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন। তিনি প্রধান শিক্ষকের ভগ্নিপতি। পরিতোষ সরকারের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে কেউ প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির প্রতিবাদ করতে সাহস পান নি।

এ ব্যাপারে গত ৫ নভেম্বর গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি প্রফেসর ডা. অধীর কুমার দাস সহ এলাকাবাসী।

প্রফেসর ডা. অধীর কুমার দাস অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষকের সীমাহীন দুর্নীতিতে বিদ্যালয়টি ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিকে তিনি দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত করেছেন। পরিতোষ সরকারের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে কেউ প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির প্রতিবাদ করতে সাহস পায় নি। প্রধান শিক্ষক ও তার ভগ্নিপতির স্বেচ্ছাচারিতায় বিদ্যালয়টি আজ ধ্বংসের পথে বলে তিনি অভিযোগ করেন। অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত হলে সত্যতা মিলবে। তারপর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান দিন দিন পড়ে যাচ্ছে। তাই এখানে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।

এসব অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‘স্কুলের ৬ টি শূন্য ও সৃষ্টপদে জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। এ নিয়োগকে কেন্দ্র করে স্থানীয় একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ দায়ের করছেন। এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।’

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বহুগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা পরিতোষ সরকার ঘা ঢাকা দেন। তারা মোবাইল নম্বরে ফোন করে বন্ধ পাওয়া গেছে। এ কারণে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘অভিযোগের বিষয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

(টিবি/এসপি/ডিসেম্বর ১২, ২০২৪)