রূপক মুখার্জি, নড়াইল : ভারতে গিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে মিথ্যা-ভিত্তিহীন বক্তব্য দিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করা নড়াইলের ঊষা রানী রায় এবার বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি দাবি করছেন, 'তাকে ভারতীয় সাংবাদিকরা চার ঘণ্টা আটকে রেখে জোর করে এসব বক্তব্য আদায় করেছেন। তিনি এসব নিজ ইচ্ছায় বলেননি। বাংলাদেশে তারা ভালো আছেন।  

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার নলদী ইউনিয়নের চাকুলিয়া গ্রামের সুবাস বাবু রায়ের স্ত্রী ঊষা রানী রায় গত ৬ ডিসেম্বর ভারত যান। ভারতীয় এবিপি আনন্দ টিভিতে তিনি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি বক্তব্য দেন। যা ভারতীয় গণমাধ্যমে বেশ ফলাও করে প্রচার করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতোমধ্যে তার বক্তব্যটি ঝড় তুলেছে। সেখানে ওই নারী দাবি করেন, গত ৫ আগস্টের পর বোরকা ছাড়া মহিলারা বাইরে বের হতে পারছে না। এছাড়া বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তোলেন এই নারী।

তবে এবার সেই নারী বলছেন উল্টো কথা। ভারতেই অবস্থান করা ওই নারীর সঙ্গে নড়াইলের স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক ভিডিও কলে কথা বলেছেন। সেখানে তিনি দাবি করেছেন, তার কাছ থেকে জোর-জবরদস্তি করে এই বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। আর এ কাজটি করেছে ভারতীয় সাংবাদিকরা।

ঊষা রানী রায় বলেন, ‘বর্ডার থেকে ভারতীয় সাংবাদিকরা আমাকে চার ঘণ্টা আটকিয়ে রেখে জোর করে এসব কথা বলিয়েছে। আমি একা ছিলাম, ভয়তে পড়ে কী যেন কী বলেছি। আমাকে এসব কথা বলাইছে। ভয়তে পড়ে ওখানে এসব কথা বলতি হয়ছিলো।’

এই নারী বলেন, ‘আমরা তো বাংলাদেশে ভালো আছি। বাংলাদেশে আমাদের কোনো সমস্যা নাই। আমি যে এলাকায় বাস করি ওখানে কোনো সমস্যা নাই। আমি তো সামাজিক মানুষ। আমি সবার সাথে মিলে চলি। আমি এই দেশে (ভারতে) এসে যে এইসব বলতে হবে, ভাবতে পারিনি।’

ঊষা রানী রায় বলেন, ‘আমাকে জোর করে বলাইছে। আমি খুব দুঃখ পেয়েছি। কষ্ট পেয়েছি। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। ওরা শিখাই দেছে যে কথাগুলো বলছি।’

গত সোমবার (৯ ডিসেম্বর) ভিডিওটি ভাইরাল হয়। পরে ওই এলাকায় গিয়ে ঊষা রানী রায়ের পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি।

ঊষা রানী রায়ের স্বামী সুবাস বাবু রায় বলেন, ‘আমার স্ত্রী নলদী ইউনিয়নের ১৮ বছর ধরে মহিলা মেম্বার ছিলেন। এই জীবনে এত বড় যে একটা ভুল করে ফেলিছে। সে বাধ্যতামূলক ভুল করে ফেলিছে। ওপার (ভারত) নিয়ে তাকে ভারতীয় সাংবাদিকরা ও বিভিন্ন রকম লোকের চাপে পড়ে এ ধরনের কথা বলেছে।’

কী বলেছিলেন ঊষা রানী

ভারতীয় এবিপি আনন্দ টিভিতে ঊষা রানী বলেন, ‘আমার বাড়ি বাংলাদেশের নড়াইলে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধ দেখেছি। তখন বয়স ১৫বছর। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ যখন হয়ছিল, তখন সামনে কেউ পড়েনি। কীভাবে কীভাবে হয়েছে, পাকিস্তানিদেরও দেখছিলাম না, রাজাকারদেরও দেখছিলাম না। তা এবার দেখছি এই যে জামায়াত-বিএনপি-শিবিররা, এসব সামনে দিয়ে করতিছে, কথাগুলো তো সমস্ত বলা যাবে না। আবার ফিরে তো বাংলাদেশে যেতে হবে। এখন এই পরিস্থিতির পরে আমরা আছি যা, তা আমাদের মনে হয় না যে, আমরা কোথায় যাবো, কী করবো। না আমাদের ওই দেশের থেকে জীবন শেষ হবে, তা আমরা বুঝতে পারি না।’

‘তার কারণ আমরা ভারতে আসিনি। এখানে ভারতে আমাদের জায়গা জমি নাই, ঘর বাড়ি নাই। বাড়ি ঘর যা আছে, ছোট একটা ব্যবসা করি, ছেলে মেয়ে নিয়ে খাই। তা এখন শিবির-বিএনপিরা যা করতিছে না। এই আমাদের হলো, এই মিশিল করার জননি তো ওরা আরো বেশি ক্ষেপে গেছে। সোনার দোকান টুকান বড়বড় দোকান টুকান আছে, মাগুরা টাগুরা দিয়ে এসব দোকান খুলতে পারতিছে না। লুটপাট তো করে নিয়ে গেছে। আরো চাঁদা ধরিছে তাদের।’

ঊষা রানী বলেন, ‘এই যে আপনার মাগুরা এক পাড়া থেকে ৫ লাখ টাকা দিয়ে সে লুটপাট বন্ধ করিছে। পালিয়ে থাকতে হচ্ছে। না হলি লুটপাট করে নিয়ে যাবে। অত্যাচার করবে। কী করে থাকবো। এডাই তো আমাদের, তো আর কোনো আশা ভরসা নাই। ভাসমান অবস্থায় আছি। বাড়ির মধ্যে ভাঙচুর হয়নি। ওই বড় বড় শহরে যে সব মন্দির আছে ওসব মন্দিরে সমস্যা হচ্ছে। গ্রামে বাড়ি টারি ডোকে না। আতঙ্কে আছি আমরা। বাইরে বের হইনে, ওই দিনে যা ঘুরেটুরে বেড়াই। আমাদের নড়াইলের ভিতর ওইখানে মেয়েদের অত্যাচার হচ্ছে না। কথা বলা বারণ। আর ওই মাঝে মধ্যে শুনি বোরকা মুড়ি দিয়ে যাতি হবে। মেয়েরা বোরকা মুড়ি দিয়ে স্কুলে যাবি এই সব। মেয়েরা ওই যে কী যেন হিজাব দেয় মুসলমানরা, ওইভাবে চলতি হবে।’

(আরএম/এসপি/ডিসেম্বর ১১, ২০২৪)