রিয়াজুল রিয়াজ, ফরিদপুর : ফরিদপুরের কানাইপুরে এক স্কুলছাত্রকে রাতের আঁধারে ধরে নিয়ে মারপিটের পর স্থানীয় একটি কবরস্থানে নিয়ে মাটি খুঁড়ে জ্যান্ত পুঁতে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করেছেন তার পরিবার। এ বিষয়ে থানার একটি অভিযোগও দায়ের করেছেন তারা।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে ফরিদপুর শহরের আলীপুরে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ওই ঘটনার বর্ণনা দেন ওই ছাত্রের পরিবার।

পরিবারের বক্তব্য ও ফরিদপুর কোতয়ালি থানায় তাদের করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ওই স্কুলছাত্রের নাম জিহাদ মাতুব্বর (১৩)। সে স্থানীয় মো. মোস্তাক মাতুব্বরের ছেলে। জিহাদ ফরিদপুর সদরের কানাইপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। গত শনিবার রাতে ওয়াজ শুনতে যাওয়ার সময় এলাকার কিছু যুবক-কিশোর জিহাদকে ধরে নিয়ে মারপিট করে। পরে স্থানীয় একটি কবরস্থানে নিয়ে কবর খুঁড়ে জিহাদকে জ্যান্ত পুঁতে হত্যার চেষ্টা করে। এসময় তারা জিহাদকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে আসতে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে, ওই ঘটনার একটি ভিডিও স্থানীয় কিছু ফেসবুক আইডি থেকে শেয়ার করা হয়েছে, যাতে দেখা যায়- কয়েকজন তরুণ একটি ছেলেকে মারতে মারতে জামার কলার ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় একটি কবরস্থানে। কবরস্থানে পৌঁছে আবারও তাকে মারতে দেখা যায়। এসময় এক তরুণকে কোদাল দিয়ে গর্ত খুঁড়তেও দেখা যায়। জিহাদের বাবা-মা'য়ের দাবি ভিডিওটি তাদের ছেলেকে হত্যা চেষ্টার ভিডিও এবং ওই ঘটনার সময় কেউ একজন পিছন থেকে ভিডিওটি করে। পর্যাপ্ত লাইট না থাকায় ওই ভিডিওটি সম্পূর্ণ স্পষ্ট নয়। তবে, সাউন্ড, মুভমেন্ট এবং ক্ষেত্রবিশেষে কারো কারো চেহারাও দেখা গেছে ওই ভিডিওতে।

স্কুলছাত্র জিহাদের মা মারিয়া আক্তার গণমাধ্যমকে বলেন, 'ওইদিন রাতে আমার ছেলে বাড়ি ফিরলে জিহাদকে ভীতসন্ত্রস্ত ও অসহায় দেখাচ্ছিলো। তার একটু পরেই সে ভয়ে বমি করে দেয় এবং অসুস্থ হয়ে যায়। ওই রাতেই তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি'। এখন মোটামুটি কথা বলতে পারলেও সে ভয়ংকর স্মৃতির ট্রমায় আক্রান্ত রয়েছে, বর্তমানে জিহাদ চিকিৎসাধীন রয়েছে বলেও জানান মা মারিয়া।

এদিকে, সোমবার সংবাদ সম্মেলনে সশরীরে উপস্থিত থেকে ভুক্তভোগী জিহাদ জানান, 'কয়েকদিন আগে তার চাচাতো ভাইদের বাড়ির পেছনে নদীর পাড়ে জড়ো হয়ে একদল কিশোর বয়সের লোকজন উচ্চস্বরে শোরগোল করতেছিলো। আমি কাছাকাছি গিয়ে সেখানে কারা উচ্চ স্বরে কথা বলছে জানতে চাই। এজন্যই শনিবার সন্ধ্যায় প্রথমে আমাকে মারপিট ও পরে জ্যান্ত কবর দেওয়ার চেষ্টা করে তারা'।

এ ঘটনায় জিহাদের বাবা মোস্তাক মাতুব্বর বাদী হয়ে গত রবিবার রাতে ফরিদপুর কোতয়ালি থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় সিফাত (২৪), মাসুম (২৩), মারুফ (২০), আরাফাত (২০), সজল (২২), সাকিল (১৯) নামের ৬ যুবকের নাম উল্লেখ করে এবং আরও চার-পাঁচজন অজ্ঞাতনামা রেখে মোট ১০/১১ জনের নামে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

ফরিদপুর কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদউজ্জামান অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, 'স্কুল ছাত্রকে জ্যান্ত কবর দেওয়ার মতো একটি লোমহর্ষক লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে'। এছাড়া জড়িতদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ বলেও জানান ওসি আসাদ।

(আরআর/এসপি/ডিসেম্বর ১০, ২০২৪)