আধুনিক যুগেও টিকে আছে সে-কালের সেলুন
বিকাশ স্বর্ণকার, সোনাতলা : আধুনিক যুগেও টিকিয়ে আছে সে-কালের সেলুন। মাত্র ৩০/৩৫ বছর আগের কথা, সে সময়ে শীল (নাপিত) সম্প্রদায়ের লোকজন সকালে বেড়িয়ে যেতেন কাজের সন্ধানে। উদ্দেশ্য গ্ৰামে গ্ৰামে যাবার পালা তবে বিশেষ করে একটু বয়স্ক হলে ধুতি, পাঞ্জাবি পরিহিত হাতে থাকতো ব্যাগ অথবা ছোট বাক্সে প্রয়োজনীয় কাজের উপকরণ আবার অনেকেই সঙ্গে নিতেন রেডিও। ফলে আশপাশের লোকজন শীল মশাইয়ের রেডিও'র খরব নাটক এর পাশাপাশি চলচ্চিত্রের গান শুনতে ভীর জমাতেন। তবে সেসময় শীল মশাইয়ের মুখেও কিন্তু মজার মজার কথা বা কিচ্চা শুনতে উৎসুক মানুষের ভিড় পরে যেতো। শীল মশাই নিজে বসতেন টুলে আর খরিদ্দারকে বসাতেন পিড়াই এবার দু-হাটুর ফাকে মাথা রেখে চলে চুল দাড়ি কাটার পালা। যদিও সে সময়ে চুল দাড়ি কাটতে গুনতে হতো ৩ থেকে ৫ টাকা।
ধীরে ধীরে সবকিছুই পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে গ্ৰামের নিকটবর্তী বাজারে আয়না সেই সাথে আলোর ঝলকানিতে ও চেয়ারে সাজানো শীল সম্প্রদায়ের সেলুন মানুষের নজর কেরে নায়। এসব নামীদামী সেলুনে এসে মানুষ চেয়ারে বসে চুল দাড়ি কাটা সহ অনেকেই শরীর ম্যাসাজ করে। ফলে এসব সেলুনে শরীর ম্যাসাজ চুলদাড়ি কাটা সব মিলিয়ে খদ্দেরকে গুনতে হয় দের'শ, দু'শ থেকে পাঁচ'শ টাকা পর্যন্ত। তবে বর্তমান যুগে নামি দামি সেলুনের মাঝেও টিকিয়ে আছে সেই পুরোনো দিনের সেলুন। উপজেলা বালুয়া হাঁটে গিয়ে দেখা মিললো সেকালের মানুষ তিনি নামিদামি সেলুনে নয় রাস্তার ধারে ফাঁকা জায়গায় টুলে বসে চুল দাড়ি কাটাচ্ছেন।
কথা প্রসঙ্গে সে কালের সেলুন মালিক বাসুদেব শীল বলেন, এ যুগের ছেলেপেলেরা আর আমাদের কাছে চুল দাড়ি কাটাতে আসেনা। তারা বাজারের নামিদামি সেলুনে গিয়ে নানা ডিজাইনের চুল দাড়ি কাটেন।তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আধুনিক যুগে আমরা বড় বেমানান হয়ে গেছি।
নাছির উদ্দিন নামের ষাটোর্ধ্ব বয়সের তিনি জানান, সেলুনে চুল দাড়ি কাটতে মন চায়না। সেই সময় আমরা শীল (নাপিতেরা) বাড়িতে আসলে চুল দাড়ি কেটে নিতাম। তাই পুরানো দিনের স্মৃতি এ বয়সেও ভুলতে পারিনা বলেই বিকেলে বাজারে এসেছি চুল দাড়ি কাটাতে। তিনি আরো বলেন, শীল দাদাকে চুল দাড়ি কাটিয়ে কুড়ি টাকা দিলেই তিনি সন্তুষ্ট হয়।
(বিএস/এসপি/ডিসেম্বর ১০, ২০২৪)