‘সময় যত গড়াচ্ছে হিন্দুর ওপর অত্যাচার তত তীব্র হচ্ছে’
শিতাংশু গুহ
বাংলাদেশের হিন্দুরা এখন কঠিন সময় পার করছে। এর মানে এই নয় যে তাঁরা আগে খুব ভালো সময়ে ছিলো। তবে এখনকার সময়টা বড্ড কঠিন। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৫৩ বছর, এই পুরো সময়টাই হিন্দুরা কমবেশি নির্যাতিত হয়েছে এবং এটি সব সরকারের আমলে। সময় যত গড়াচ্ছে, অত্যাচারের ষ্টীমরোলার ততটা তীব্র হচ্ছে। এ সময়ে পরিষ্কারভাবে বলা যায়, ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর এতদাঞ্চলে হিন্দুদের ভোগান্তি শুরু। এ অঞ্চলের হিন্দু একটি উপেক্ষিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত জনগোষ্ঠী।
বাঙ্গালী হিন্দু আত্মভোলা জাতি। বর্তমান সময়ে নির্যাতনে এঁরা চিৎকার করছে। সদ্য অতীতে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের আমলের চরম নির্যাতনের কথা ভুলে গেছে। খালেদা জিয়া ও বিএনপি আমলের নির্যাতনের কথা এদের স্মরণে নেই! রামমন্দির ইস্যুতে সন্ত্রাস, এরশাদ-জিয়ার আমলে নির্যাতন কিচ্ছু এদের মনে নেই? এমনকি নোয়াখালী হত্যাযজ্ঞ, খুলনায় সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ বা বরিশালে ভয়াবহ হিন্দু হত্যার কাহিনী বেমালুম ভুলে বসে আছে।
২০২৪-এ হিন্দু নির্যাতন, এবং হিন্দুর ওপর সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তীব্র হয়েছে, এটি সত্য। এটিও সত্য যে, এই প্রথম বাংলাদেশের হিন্দু প্রতিবাদী হয়েছে, রাস্তায় নেমেছে, রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি ছেড়ে ধর্মীয় পরিচয়ে মাঠে নেমেছে। এটি শুভ লক্ষ্মণ। অন্ধকার তীব্র হলে আলোর ঝলকানি দেখা যায়; রাত গভীর হলেই ভোরের সূর্য্যের উদয় হয়। হিন্দু জাগছে, জেগেছে। সামনের দিনগুলোতে হিন্দুদের আর দাবিয়ে রাখা যাবেনা। হিন্দু মরতে শিখেছে, তাই বাঁচার অধিকার অর্জন করেছে।
শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বব্যাপী হিন্দু জাগছে। তিনহাজার বছর হিন্দু ঘুমিয়ে ছিলো। খরগোশ ঘুমিয়ে ছিলো বলেই কচ্ছপ রেসে জিতেছিলো। হিন্দু সজাগ থাকলে অন্যরা জেতে সাধ্য কার? তিন হাজার বছর পর ঘুম ভেঙ্গে হিন্দু নুতন করে ভাবতে শুরু করেছে যে, তাদের একটি চমৎকার ধর্ম, সংস্কৃতি, সভ্যতা ছিলো, আছে। নুতন করে শোনা যাচ্ছে, ‘কুরুক্ষেত্রের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আর একবার’। সমগ্র বিশ্ব যখন অন্ধকারে নিমজ্জ্বিত ছিলো, ভারতবর্ষে বৈদিক সভ্যতার আলো তখন জ্বলজ্বল করছিলো।
বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের কথা এখন বিশ্ব জানে। এই প্রথম ভারত, তথা পশ্চিমবঙ্গ কথা বলছে। মমতা ব্যানার্জি’র মত কট্টর হিন্দু-বিরোধী নেত্রীও বলতে বাধ্য হয়েছেন যে, দিল্লির উচিত জাতিসংঘের সাথে দরবার করে বাংলাদেশে হিন্দুদের রক্ষায় ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী’ পাঠানোর ব্যবস্থা নিতে। এতবড় কথা ভারতের কোন রাজনৈতিক ইতোপূর্বে বলেননি। বাংলাদেশ এ সময়ে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। সংখ্যালঘুর ওপর সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস বন্ধের উপায় বিশ্ব এখন ভাবছে।
সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই মতামত দিচ্ছেন। হিন্দুর ওপর অত্যাচার বাড়লে কথা আরো উঠবে। জিন্নাহ বলেছিলেন, হিন্দুদের সাথে থাকা যায়না। এখনকার পরিস্থিতি তখনকার চেয়ে অনেক বেশি খারাপ। হিন্দুরাও ভাবছে, ঐসব উগ্র মুসলমানের সাথে কি থাকা যাবে? কেউ কেউ সংখ্যালঘু নিরাপত্তা জোনের কথা বলছেন। অন্যরা ১৯৪৭-এ ‘জনসংখ্যা বিনিময়’ না হওয়ার বিষয়টি সামনে আনতে চাইছেন। বাংলাদেশকে সংখ্যালঘু সমস্যা সমাধানে আন্তরিক হতে হবে, নইলে সমস্যা বাড়বে তা বলা বাহুল্য।
লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।