৯ ডিসেম্বর, ১৯৭১
'ভারতীয় ব্রিগেট জামালপুরের উপর আক্রমণ চালায়'
উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : মিত্রবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান জেনারেল আরোরা কলকাতায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, আমরা এখন বড় ধরনের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। আমাদের পদাতিক সৈন্য ও রসদ পারাপারের ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছে। আর আমাাদের পিটি-৬৭ জলচর ট্যাঙ্কগুলি নদী পেরিয়ে যেতে পারবে।
মিত্রবাহিনী দ্রুত ঢাকা পৌঁছাবার লক্ষ্য নিয়ে চারদিক থেকে অগ্রসর হচ্ছে। পূর্বে একটি বাহিনী যাচ্ছে আশুগঞ্জ, দাউদকান্দি এবং চাঁদপুর। পশ্চিমে আর একটি বাহিনী পৌঁছেছে মধুমতী নদীর তীরে। আর একটি বাহিনী কুষ্টিয়া মুক্ত করে চলছে গোয়ালন্দ ঘাটের দিকে। হালুয়াঘাট থেকে এগিয়ে আসা বাহিনীও পৌঁছে গেছে ময়মনসিংহের কাছাকাছি।
জাতিসংঘের অধিবেশনে প্রতিনিধিত্বকারী পাকিস্তানী দলের নেতা মাহমুদ আলী দেশে ফিরে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দেখা করেন। সাংবাদিকদের কাছে মাহমুদ আলী সোভিয়েত ভূমিকার সমালোচনা করে বলেন, সোভিয়েতের উচিৎ বিশ্ব শান্তির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে ভারতের পাশ থেকে সরে দাঁড়ানো। চীন ও আমেরিকার সমর্থনের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, পাকিস্তান তাদের নির্ভীক ও ঐতিহাসিক সমর্থনের জন্য অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।
দুপুরের পর ভারতীয় ব্রিগেট জামালপুরের উপর আক্রমণ চালায়। এসময় মুক্তিবাহিনীর কয়েকটি কোম্পানী ও ভারতীয় বাহিনীর একটা অংশ জামালপুর থেকে ডান ও বামে অনেক দূর এসে ব্রহ্মপুত্র অতিক্রম করে দক্ষিণ পাওে আসতে সক্ষম হয়। বিকালে ভারতীয় বিমান বাহিনী জামালপুরে হানাদার ঘাঁটির উপর একঘন্টা ধরে কয়েক হাজার পাউন্ডের বোমা নিক্ষেপ করে। এর ফলে পাকসেনারা পালাতে আরম্ভ করে। জামালপুর থেকে পালিয়ে যাবার সময় ভারত-বাংলা যৌথ বাহিনীর কাছে ৬শ হানাদার সেনা ধরা পড়ে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ম্যানকশ বাংলাদেশে পাকিস্তানি সৈন্যদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তোমরা যদি বাঁচতে চাও ভারতীয় বাহিনীর কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমার্পন করো। নতুবা তোমাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হবে।
নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী নূরুল আমিন রেডিও পাকিস্তান থেকে ভাষণ দেন। জাতির উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে ‘ভারতীয় হামলা’ মোকাবেলাও ‘দুরভিসন্ধি’ নস্যাৎ করার আহ্বান জানান তিনি। মিত্রবাহিনীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, তাদের নগ্ন হামলায় অসংখ্য বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে।
তথ্যসূত্র : মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
(ওএস/এএস/ডিসেম্বর ০৯, ২০২৪)