তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : জীবনের জন্য নিরাপদ পানি অপরিহায্য। পরিবেশ দূষনে পথে প্রান্তরে নিরাপদ পানির উৎস কমছে। কাজের সময় ও চলার পথে ছোট বোতলজাত পানি কিনে পান করার সামর্থ বিশাল জনগোষ্ঠির নেই। এ শ্রেণির মানুষের জন্য গোপালগঞ্জ থেকে দেশের প্রথম পলি ব্যাগে পানি উৎপাদন করে নামমাত্র মূল্যে বাজারজাত করছে জেকে পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজ। পানি থেকে আয়ের সব টাকা ধর্মীয় ও আর্তমানবতার কল্যাণে ব্যয় করা হয় বলে উৎপাদনকারী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছ। 

জেকে পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজর ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম সরদার বলেন, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার তারগ্রামে আমাদের জেকে পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজে ৩ বছর আগে পানির প্লান্ট স্থাপন করা হয়। এই প্লান্ট থেকে আমরা আল খিদমাহ নামে সব সাইজের বোতলজাত পানি উৎপাদন শুরু করি । আমাদের বোতলজাত পানি ভাল মার্কেট পায়। এরপর আমরা পলিব্যাগে পানি উৎপাদনের পরিকল্পনা করি। গত নভেম্বর থেকে আমরা দেশে প্রথম ৫০০ মিলি লিটার ও ২০০ মিলি লিটারে পলি প্যাকে পানি উৎপাদন করছি । প্রতিদিন এখান থেকে হাজার হাজার লিটার পানি বাজারজাত করা হচ্ছে। ভোক্তার কাছে ২০০ মিলি লিটার পানি ৩ টাকা ও ৫০০ মিলি লিটারের পানি ৪ টাকা দামে বিক্রি করা হচ্ছে। দিন মজুর থেকে সব শ্রেণি পেশার মানুষ এই পানি কিনে পান করতে পারছেন।

ফ্যাক্টরী ম্যানেজার জিয়াউর রহমান বলেন, আগে চলার পথে ও কাজের ফাঁকে মানুষ পুকুর, নদী, টিউবওয়েল, ট্যাপ থেকে পানি পান করতেন। পানিতে বিভিন্ন কারণে দূষনের মাত্রা বেড়েছে। এতে ওই সব উৎসের পানি অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। আবার বোতলজাত পানি বেশি দামে কিনে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মানুষ পান করতে পারে না। তাই আমরা এসব মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মুল্যে নতুন পানি বাজারে এনেছি। এ পানি সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক অনুষ্ঠানে গুনগত মান সম্পন্ন এ পানি সহজে সরবরাহ করা যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে অল খিদমাহ পলি ব্যাগের পানি ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। এটি আমরা সারাদেশে ছড়িয়ে দেব। এতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠি সুপেয় পানি পান করে স্বাস্থ্য রক্ষা করতে পারবে।

পানির ভোক্তা গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উলপুর গ্রামের মাও.জাহিদুল ইসলাম সরদার বলেন, বাজারে প্রচলিত যে কোন বোতলজাত পানির চেয়ে আল খিদমাহ পানির মান ও স্বাদ খুব ভাল। স্বল্পমূল্যে পলি ব্যাগের নিরাপদ পানি পান করে পানি বাহিত রোগ প্রতিরোধ করতে পারছি। এত কমদামে সুপেয় পানির প্রাপ্যতা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি। প্রান্তিক মানুষের জন্য এ সুযোগ করে দেওয়ায় আমি জেকে পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।

জেকে পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজের এম.ডি মোঃ কামরুজ্জমান সিকদার বলেন, পানি মানুষের বাঁচার জন্য একটি প্রয়োজনীয় উপদান। দেশের বিশাল জনগোষ্ঠি সুপেয় পানি কিনে পান করতে পারে না। তাই স্বল্প আয়ের মানুষের কথা বিবেচনা করে আমরা পলিব্যাগে পানি উৎপাদন করছি। এ থেকে আয়ের সব টাকা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, এতিম, দুঃস্থ, অসহায় মানুষ ও আর্তমানবতার কল্যাণে ব্যয় করছি।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ডি.পি.এইচ.ই) গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী রতন কুমার সাহা বলেন, জেকে পলিমারের এ উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। এতে বিশাল জনগোষ্ঠির স্বল্পমূল্যে সুপেয় পানি পানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ পানি পান করলে পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার হ্রাস পাবে বলে আমি আশা করছি।

(টিবি/এসপি/ডিসেম্বর ০৮, ২০২৪)