শফিকুল ইসলাম মিন্টু, গৌরীপুর : আজ ৮ ডিসেম্বর গৌরীপুর হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিকামী মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীকে পরাজিত করে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে গৌরীপুরের আকাশে উড়িয়েছিল লাল সবুজ আর মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। রক্তঝরা ৯মাসের য্দ্ধু শেষে বিজয়ের উল্লাসে মেতে উঠেছিল গৌরীপুরবাসী।

দেশকে স্বাধীন ও গৌরীপুরকে হানাদার মুক্ত করতে দেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনে শহীদ হন মতিউর রহমান, আনোয়ারুল হক, সিদ্দিকুর রহমান, আব্দুল হাই, হাতেম আলী, আফাজ উদ্দিন, জসীম উদ্দিন, আনোয়ারুল ইসলাম মঞ্জু, সিরাজুল হক, আব্দুল মতিন ও সুধীর বড়ুয়া।

১৯৭১’র ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতার ঘোষণা শুনে গৌরীপুরবাসী উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেন। স্থানীয় প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য মরহুম হাতেম আলীর নেতৃত্ব সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। গৌরীপুর কলেজ ও রাজবাড়ীতে স্থাপন করা হয় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। ছাত্র-যুবকরা ক্যাম্পে এসে প্রশিক্ষণ গ্রহণ শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণায় সারা দিয়ে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহেই শহীদ হারুন উদ্যানে ছাত্রলীগ কর্মীরা পাকিস্তানী পতাকা পুড়িয়ে উত্তোলন করে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। ২৩এপ্রিল হানাদার বাহিনী বিমান থেকে মেশিনগানের গোলা বর্ষণ ও রেলপথের ভারী অস্ত্রে হামলা চালিয়ে গৌরীপুর শহর দখল করে নেয়। হাদানার বাহিনীর ভারী অস্ত্রের মুখে টিকতে না পেরে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে যায়। শহর দখলের সময় হানাদারা কালীপুর মোড়ে স্কুল শিক্ষক নরেন্দ্র বিশ্বাসকে গুলি করে হত্যা করে। হানাদাররা শহরে ঢুকে তাদের দোসরদের সহযোগীতায় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়।

১৯৭১’র মে মাসে মুক্তিযোদ্ধারা বিস্ফোরক পদার্থ দিয়ে গৌরীপুরের টেলিফোন একচেঞ্জ, রেলস্টেশন উড়িয়ে দিয়ে হানাদাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। ৩০নভেম্বর গৌরীপুর ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম পলাশকান্দায় যুদ্ধে হানাদারদের মেশিনগানের গুলিতে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন মুক্তিযোদ্ধা জসীম। আহত অবস্থায় ধরা পড়েন সিরাজ, মঞ্জু ও মতি। হানাদাররা তাদেরকে ময়মনসিংহ ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে বেয়নেট দিয়ে চোখ উপড়ে ফেলে দিযে খুচিয়ে খুচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।

ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ। মুক্তিযোদ্ধাদের চোরাগুপ্তা হামলায় হানাদার বাহিনী তখন দিশেহারা। মুক্তিযোদ্ধারা গৌরীপুরকে হানাদার মুক্ত করতে চারদিকে থেকে ঘিরে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধাদের এ অবস্থানের খবর পেয়ে হানাদাররা তাদের শহরের ক্যাম্প গুটিয়ে রাতের আঁধারে ময়মনসিংহ শহরে পালিয়ে যায়। রেখে যায় তাদের দোসর রাজাকার ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের। ৮ ডিসেম্বর রাজাকার ও পুলিশরা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। এ সময় জয় বাংলা শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে গৌরীপুর। মুক্তিযোদ্ধারা লাল-সবুজের মাঝে মানচিত্র খচিত বাংলাদেশের পতাকা হাতে নিযে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেন।

দিবসটি পালন উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনে উদ্যোগে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।

(এসআই/এসপি/ডিসেম্বর ০৮, ২০২৪)