বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর লুটপাট
ভৈরবে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক
-.jpg)
সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক লোকজন আহত হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের ১১টি বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার সকালে পৌর শহরের পঞ্চবটি কাঠেরপুল এলাকার সাথে জগন্নাথপুর গাইনহাটি এলাকার মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ভৈরব থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনী ক্যাম্পের সদস্যরা উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতরা ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছে। গুরুত্বর আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বেলা ১২টার দিকে গাইনহাটির লোকজন নাদিম নামে এক ব্যক্তির মুরগির খামার লুটপাট করে। এতে খামার মালিক নাদিমের প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি দাবী করেছেন।
স্থানীয়রা ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দুই সপ্তাহ আগে গাইন হাটি এলাকার যুবকদের সাথে পঞ্চবটি এলাকার যুবকদের মধ্যে ফুটবল খেলা নিয়ে বাকবিতণ্ডার এক ফাঁকে মারামারি হয়। পরে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বিষয়টি মিমাংসা করে দেই। দ্বিতীয় দফায় তিনদিন আগে আবারও একই বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে হট্টগোল সৃষ্টি হয়। ৬ ডিসেম্বর শুক্রবার শহরের চক বাজারে শান্ত ও এমাদাদুলকে মারধোর করে গাইনহাটির লোকজন। ওই দিন রাতে দুই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করে।
উভয় পক্ষের নেতৃবৃন্দ শনিবার সকাল ১০টায় বিষয়টি মিমাংসা করতে সময় দিলেও পরে গাইনহাটির পক্ষ থেকে মিমাংসা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেই। সকাল ১১টায় উভয় পক্ষের লোকজন দা, বল্লম, টেটা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক লোকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ সময় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ১১টি বাড়িঘর ভাঙচুর করে। ভাঙচুরে দুইটি অটো গ্যারেজ লুটপাট করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করা হয়।
এ বিষয়ে ক্ষয়ক্ষতি হওয়া ভূক্তভোগী লিটন মিয়া ও চায়না বেগম জানান, এক বছরে ৩ বার ঝগড়া করেছে এ দুই এলাকার মানুষ। কাঠেরপুল এলাকায় আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দুই ঝগড়ার মধ্যে পড়ে এর আগেও আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুট করেছে এবারও আমাদের প্রতিষ্ঠান লুট হয়েছে। আমাদের পথে বসিয়ে দিয়েছে। আমরা এর বিচার কার কাছে চাইব।
এ বিষয়ে গাইন হাটি এলাকার নন্দন আলী ও ইকবাল মিয়া জানান, তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ছোট ছেলেরা ঝগড়া করেছে। আমরা কিছুটা অপরাধী বলে শালিশী দরবারের মধ্যে বিষয়টি শেষ করতে চেয়েছিলাম। রাতে আমাদের এলাকার একজন মারা যাওয়ায় সকালে জানাজা হওয়ায় আমরা ১০টায় মিমাংসায় বসতে পারিনি। সকাল ১১টার দিকে দা, বল্লম, লাঠি নিয়ে আমাদের গাইন হাটির বাড়িঘর, দোকান পাট ও লোকজনের উপর হামলা করে। এ ঘটনায় আমাদের ২০/২৫ জন আহত হয়েছে।
এ বিষয়ে পঞ্চবটি এলাকার ফারুক মিয়া ও ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি ওমর মোহাম্মদ অপু জানান, ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে ছোট ছেলেদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় ভৈরব বাজারেও তারা আমাদের লোকজনের উপর হামলা করে আহত করেছে। গাইনহাটির মানুষজন আমাদের কাছে ক্ষমা চাইতে আসে। আমরা শালিশী দরবারের মাধ্যমে বিষয়টি শেষ করতে চেয়েছিলাম। তারা হঠাৎ করেই আজ শনিবার সকালে দরবার হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেই। হঠাৎ তারা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বেলা ১১টার দিকে লাঠি-সোটা, দা, বল্লম ও ককটেল নিয়ে আমাদের এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও লোকজনের উপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় আমাদের ২০/২৫ জন আহত হয়েছে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ভৈরব থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিন জানান, কি নিয়ে ঝগড়া হয়েছে আমরা জানিনা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে এসেছি। সেনাবাহিনীসহ পুলিশ ফোর্স নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। উভয় পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
(এসএস/এসপি/ডিসেম্বর ০৭, ২০২৪)