আসামে প্রকাশ্যে গরুর মাংস খাওয়া ও পরিবেশন নিষিদ্ধ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে প্রকাশ্যে গরুর মাংস খাওয়া ও পরিবেশন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বুধবার রাজ্যের হোটেল, রেস্তোরাঁ ও প্রকাশ্য স্থানে গরুর মাংস পরিবেশন ও খাওয়ার ওপর পূর্ণাঙ্গ নিষেধাজ্ঞার এই ঘোষণা দেন।
এক সংবাদ সম্মেলনে বিজেপিদলীয় এই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এটি আগের একটি নিষেধাজ্ঞারই সম্প্রসারণ।”
আগের নিষেধাজ্ঞায় কিছু ধর্মীয় স্থান, যেমন মন্দিরের কাছাকাছি গরুর মাংস বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
নতুন এই নিষেধাজ্ঞায় কেবল প্রকাশ্যে গরুর মাংস খাওয়া ও পরিবেশন নিষিদ্ধ করা হলেও দোকান থেকে গরুর মাংস কেনা যাবে এবং নিজের ঘরের ভেতরে অথবা ব্যক্তিগত স্থানে তা খাওয়াও যাবে।
হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, রাজ্য মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে।
গরুর মাংস খাওয়াসংক্রান্ত বিদ্যমান আইন সংশোধন করে নতুন বিধান যুক্ত করার জন্যই বৈঠকটি করা হয়।
তিনি বলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আসামে কোনও রেস্টুরেন্ট বা হোটেলে গরুর মাংস পরিবেশন করা হবে না এবং এটি কোনও জনঅনুষ্ঠান বা জনসমাগমস্থলেও পরিবেশন করা হবে না। তাই আজ থেকে আমরা সম্পূর্ণভাবে হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও জনসমাগমস্থলে গরুর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
বিজেপির এই নেতা আরও বলেন, “আগে মন্দিরের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে গরুর মাংস পরিবেশন বা খাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার বিধান ছিল। কিন্তু এখন এই নিষেধাজ্ঞার পরিসর বাড়ানো হয়েছে। এখন প্রকাশ্যে, হোটেল বা রেস্তোরাঁয়ও গরুর মাংস খাওয়া যাবে না।”
আসামে গরুর মাংস খাওয়া বেআইনি ছিল না। তবে আসাম গবাদিপশু সংরক্ষণ আইন-২০২১ অনুযায়ী, হিন্দু, জৈন ও শিখ সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় গরু জবাই ও গরুর মাংস বিক্রি নিষিদ্ধ। এছাড়া মন্দিরের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে গরু জবাই ও গরুর মাংস বিক্রিও নিষিদ্ধ ছিল।
এখন রাজ্যজুড়ে হোটেল, রেস্তোরাঁ ও প্রকাশ্য স্থানে গরুর মাংস পরিবেশন ও খাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলো।
হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, “আগের আইনে মন্দিরের ৫ কিলোমিটারের কথা বলা থাকলেও এখন সেটা অন্যান্য এলাকায় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আইন লঙ্ঘন করলে তিন থেকে আট বছরের কারাদণ্ড এবং ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ রুপি পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।”
হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ভারতের যে কয়টি রাজ্যে শাসন করছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী আসামও রয়েছে। গত কয়েক বছরে এই রাজ্যগুলোর বেশিরভাগই গরু হত্যা নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।
ভারতের ২৮টি রাজ্যের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ রাজ্যে গরু হত্যা এবং গরুর মাংস খাওয়া আংশিক বা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে (যদিও কিছু রাজ্যে ভেড়ার মাংস খাওয়া বৈধ)। এই রাজ্যগুলোর বেশিরভাগই বিজেপিশাসিত।
ভারতের অনেক অঞ্চলে গরু পাহারাদার গ্রুপগুলো এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে সহিংস বলপ্রয়োগ করে। তারা প্রায়ই মুসলিম মাংস বিক্রেতা, গবাদিপশু ব্যবসায়ী এবং দলিত (পূর্বে অস্পৃশ্য) জনগণের উপর হামলা চালায়। দলিতদের জন্য গরুর মাংস প্রোটিনের একটি সস্তা উৎস এবং তাদের খাদ্যতালিকার একটি প্রধান উপাদান।
কয়েকদিন আগেই ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস দাবি করেছিল, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত শর্মা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাগুড়ি এলাকায় একটি উপনির্বাচনে জয়ী হতে গরুর মাংস বিলিয়েছেন। এই অভিযোগ ওঠার কয়েকদিন পরই নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি হলো, যার ঘোষণা দিলেন হিমন্তই।
যদিও শুরু থেকেই কংগ্রেসের ওই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে বিজেপি।
সেসময় কংগ্রেসের বিধায়ক রাকিবুল হোসেন বলেছিলেন, “ভোটারদের মাঝে গরুর মাংস বিলিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তার দলের হিন্দু জাতীয়তাবাদী মূল্যবোধের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।”
এই মন্তব্য রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্ক সৃষ্টি করে এবং হিমন্ত শর্মা বলেন, যদি কংগ্রেস চায়, তবে তিনি রাজ্যজুড়ে গরুর মাংসের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে প্রস্তুত।
এদিকে, অন্যান্য রাজনৈতিক দল এই নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেছে। তাদের মতে এই নিষেধাজ্ঞা মানুষের খাদ্য নির্বাচনের স্বাধীনতায় অযাচিত হস্তক্ষেপ করছে।
অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সদস্য হাফিজ রফিকুল ইসলাম বলেছেন, “যদি গোয়া বা অন্যান্য উত্তর-পূর্ব রাজ্যে গরুর মাংস নিষিদ্ধ করা না যায়, তাহলে আসামে কেন?”
গোয়া এবং অরুণাচল প্রদেশসহ বিজেপিশাসিত কিছু রাজ্যেও গরুর মাংস কেনা-বেচা ও খাওয়া বৈধ।
আসামের জনসংখ্যার প্রায় ৩৫ শতাংশ মুসলমান। এ ছাড়া প্রদেশটিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীও রয়েছেন। খ্রিস্টানরা আসামের জনসংখ্যার প্রায় ৪ শতাংশ।
তথ্যসূত্র : বিবিসি, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান টাইমস
(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ০৫, ২০২৪)