শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : কোনোটির মাঝবরাবর ভেঙে দেবে গেছে। কোনোটির রেলিং ভাঙা, আবার কোনোটির পাটাতন ভেঙে পড়ে আছে। বেরিয়ে এসেছে রড। পিলার-পাটাতনের পলেস্তারাও উঠে গেছে। কয়েক বছর ধরে ক্রমেই খারাপ হচ্ছে এসব সেতুর অবস্থা। কালের নিয়মে সেতুগুলোর তলায় কংক্রিটের ঢালাই ফেটে,মরচে পড়া রডের খাঁচা খুলে ঝুলছে। সরু ইটের গাঁথনির রেলিং-ও খুলে গেছে অধিকাংশ সেতুর। ভেঙে যাওয়া অংশে কাঠ ও বাঁশ বিছিয়ে ঝুঁকি নিয়ে নিত্য যাতায়াত করছেন গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দা। ঝিনাইদহের প্রায় শতাধিক সেতুর অবস্থা এমন ‘বেহাল’। এত বছর সেতুগুলো ভেঙে থাকলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। সব জেনেও তারা যেন চোখে লাগিয়েছে ‘কাঠের চশমা’ কানে গুজেছে ‘তুলা’। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের আওতায় ঝিনাইদহে প্রধান, সেকেন্ডারী ও টারশিয়ারী ৫’শ ২০ কিলোমিটার খালের উপর ১৯৬৫ সালে সেতুগুলো নির্মাণ করা হয়। এরমধ্যে প্রায় শতাধিক সেতু চলাচলের অনুপযোগী। নির্মাণের পর আর সংস্কার না করায় এ বেহাল দশা সেতুগুলোর। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দা ও কৃষকরা। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। দ্রুত এসব সেতুগুলো সংস্কার বা নতুন করে নির্মাণের দাবী স্থানীয়দের। আর কর্তৃপক্ষ বলছে,সমস্য সমাধানে কাজ করছেন তারা।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হরিণাকুন্ডু উপজেলার বেলতলা গ্রামের সেচ খালের উপর নির্মিত সেতুটি ভেঙেছে প্রায় ১৫ বছর আগে। স্থানীয় বাসিন্দা ও কৃষকরা কাঠ ও বাঁশ দিয়ে মেরামত করে কোনমতে চলাচল করে। তবে মাঠ থেকে ফসল আনতে হলে ঘুরতে হয় প্রায় ৫ কিলোমিটার। তাতে বাড়ে ব্যয়, নষ্ট হয় সময়। জোড়াদহ ও ফসলি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ এদিক দিয়ে চলাচল করলেও সেতুটি সংস্কারে নেই কোন উদ্যোগ।

পাশের ফুলবাড়িয়া গ্রামের সেতুটি ভেঙ্গেছে দেড় বছর আগে। সেতুর মাঝখানে বড় ছিদ্র হওয়ায় পারাপার হচ্ছে না কোন যানবাহন। কোনমত ভ্যান, মোটরসাইকেল পার হলেও প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। হরিণাকুন্ডুর মত পার্শ্ববর্তী উপজেলা শৈলকুপা ও সদরের অধিকাংশ সেতুর একই দশা। সেতুগুলো ভেঙ্গে যাওয়ায় ভোগান্তিতে রয়েছে স্থানীয়রা। তাই দ্রুত সেতুগলোগুলো সংস্কার বা নতুন করে নির্মাণের দাবী তাদের।

হরিণাকুণ্ডুর বেলতলা গ্রামের কৃষক মনোয়ার বলেন, ‘এই সেতু ১৫ বছর ধরে ভেঙে পড়ে আছে। মাঝে মাঝে কিছু লোক এসে আমাদের আশ্বাস দিয়ে যায়, তবে কাজের কাজ কিছুই হয় না। মাঠ থেকে ফসল আনতে হলে ৫ কিলোমিটার ঘুরতে হয়। তাতে টাকা লাগে বেশি, কষ্টও বেশি হয়।’

স্থানীয় রোজদার মন্ডল বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত সেতুটির বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে অনেক আগেই জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যেকোনো মুহূর্তে সেতুটি ভেঙে যেতে পারে।’

গৃহিনী আমেনা খাতুন বলেন, ‘সেতু দিয়ে বৃদ্ধ ও শিশুদের মারাত্বক ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয়। সেতু দিয়ে পারাপারের সময় অনেকে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। স্কুলে ছেলে-মেয়েদের পাঠিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় তাদের।’

ফুলবাড়িয়া এলাকার কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রতিদিন এই ভাঙা সেতু দিয়ে আমাদের বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে হয়। ভয়ে অনেকে স্কুলে যেতে চায় না। আমরা চায় অতিদ্রুত এখানে একটি সেতু নির্মাণ হোক।’

ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-প্রধান সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল মোত্তালেব বলেন, ‘সেতু সংস্কার ও নির্মাণের বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কাজের অনুমোদন ও বাজেট আসলেই কাজ শুরু হবে।’

(এসআই/এসপি/ডিসেম্বর ০৪, ২০২৪)