তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে ১৬ দিন ধরে বন্ধ কয়লা-পাথর আমদানি
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে ১৬ দিন ধরে কয়লা-পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। পাথরবাহী ট্রাকে কাদামাটি ও আবর্জনা এবং ওয়েট স্কেলে ওজন জটিলতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা আমদানি বন্ধ রেখেছেন।
এতে স্থবিরতা নেমে এসেছে শুল্ক বন্দরটিতে। বিশেষ করে এ কয়দিন আমদানি বন্ধ থাকায় সরকার কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পাথরবাহী ট্রাকে কাদামাটি, আবর্জনা থাকলেও ওয়েট স্কেলে কড়াকড়ি ওজন নির্ণয়ের কারণে কয়লা-পাথর আমদানি থেকে বিরত রয়েছেন তারা। এ অবস্থায় আমদানি অব্যাহত রাখলে পাথরবাহী প্রতি ট্রাকে ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা করে লোকসান গুনতে হবে। বিষয়টি নিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললেও কোনো সুরাহা পাচ্ছেন না আমদানিকারকরা। যে কারণে বাধ্য হয়ে আমদানি বন্ধ রেখেছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের রাজস্ব আয়ে অন্যতম সিলেটের ব্যস্ততম তামাবিল স্থলবন্দর।
কিন্তু গত ১৬ দিন ধরে নেই কোনো ব্যস্ততা। ক্ষতির সম্মুখীন ব্যবসায়ীরা কাদামাটি মিশ্রিত কয়লা-পাথর আমদানি বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানালেও ভ্রূক্ষেপ নেই কাস্টমস কর্মকর্তাদের। এতোদিন সুরাহার জন্য কাস্টম কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপে যাননি। কিংবা ওয়েট স্কেলে কড়াকড়ি ওজন নির্ণয় জটিলতায় অবসান ঘটাননি। এরকম বিদ্যমান পরিস্থিতিতে স্থানীয় কয়েক শতাধিক বিনিয়োগকারী আমদানি বন্ধ রাখায় দিনে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আমদানিকারকরা বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি।
তামাবিল স্থলবন্দরের আমদানিকারক মেসার্স মিসবাহ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মিসবাহউল আম্বিয়া বলেন, আমরা সাধারণ ব্যবসায়ীরা স্থলবন্দরের ওজন জটিলতায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এ অবস্থায় আমাদের ব্যবসা দূরে থাক, বাড়ি থেকে এনে লোকসানের টাকা দিতে হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সুরাহা পাইনি।
মেসার্স রেজা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ইলিয়াস উদ্দিন লিপু জানান, ওজন জটিলতায় আমরা পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছি। লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেও পাথর আমদানি করতে গিয়ে আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। ওপারে ভারতে কয়লা-পাথরবাহী শত শত ট্রাক লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। রপ্তানিকারকরা আমাদের কাছে পণ্যবাহী ট্রাকের ক্ষতিপূরণ দাবি করছে।
তামাবিল কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা তানভির হোসেন জানান, আমাদের কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে। ব্যবসায়ীরা পাথর আমদানি বন্ধ রাখায় এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
তামাবিল স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কয়লা-পাথর আমদানি বন্ধ থাকলেও অন্যান্য পথ আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে। মিডিয়ান পেপার, চাল, মিথানল এসব পণ্য সামগ্রী আমদানি অব্যাহত রয়েছে। অবশ্য এখানকার মূল পণ্য পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। শুনেছি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আশঙ্কায় কয়লা-পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। আমরা কয়লা-পাথর ব্যবসায়ীদের সমস্যার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবেন।
এদিকে, সিলেটের সুতারকান্দি, জকিগঞ্জ ও জুড়ি শুল্ক স্টেশন দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। ভারতের করিমগঞ্জ (বর্তমান শ্রীভূমি) সনাতনী ঐক্য মঞ্চের নেতাকর্মীরাসহ সব ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে, সংশ্লিষ্ট সূত্র এমনটি জানা গেছে।
সিলেটের বিয়ানীবাজারের সুতারকান্দি শুল্ক স্টেশনের কয়লা পাথর ব্যবসায়ী মেসার্স হুসাম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. কমর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ভারতের আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ (বর্তমান শ্রীভূমি) থেকে হিন্দু ঐক্যমঞ্চের নেতাকর্মীরা সুতারকান্দি স্থলবন্দরের ওপারে বিক্ষোভ করেছে, জানতে পারি। বিক্ষোভের কারণে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের এলসি করা মালামালের গাড়ি ফেরত আসে।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও চিত্র দেখা যায়, রোববার কয়েকশ’ নেতাকর্মী মার্চ করে সুতারকান্দি সীমান্তের কাছাকাছি ওপারে চলে আসে। তারা বাংলাদেশে প্রবেশেরও চেষ্টা চালায়। বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময়কে মুক্তির দাবিতে তারা মার্চ করে, সূত্র জানায়। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ও করিমগঞ্জ পুলিশের সদস্যরা কাঁটাতারের ব্যারিকেড দিয়ে বাধার কারণে বিক্ষোভকারীরা সুতারকান্দি স্থলবন্দর পর্যন্ত আসতে পারেনি। তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
(ওএস/এএস/ডিসেম্বর ০৪, ২০২৪)