বোয়ালমারীতে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা, নেপথ্যে বিএনপি নেতা নাসিরুল
রিয়াজুল রিয়াজ, ফরিদপুর : ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানায় স্থানীয় এক সার ব্যবসায়ীকে দিয়ে একই এলাকার এক সাংবাদিকের নামে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা করানোর অভিযোগ উঠেছে ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহ সভাপতি খন্দকার নাসিরুলের বিরুদ্ধে। অভিযোগটি করেছেন মিথ্যা মামলার শিকার রাজধানী টিভির প্রতিনিধি সাংবাদিক খন্দকার আব্দুল্লাহ।
ওই সাংবাদিকের দাবি অবৈধ ভাবে উপজেলা ব্যাপি সার ব্যবসার প্রতিবাদ ও ফেসবুকে বিভিন্ন সময় ষ্ট্যাটাস দেওয়ায় বোয়ালমারী থানাতে তার নামে খন্দকার নাসিরুল এক ব্যবসায়ীকে দিয়ে ওই মামলাটি করান। গত বুধবার (২৭ নভেম্বর) ওই সাংবাদিকের নামে মিথ্যা মামলাটি করেন উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের মৃত হালিম শেখ এর ছেলে ও স্থানীয় সার ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান মিজান। এর কিছুদিন আগে (১২ নভেম্বর) সাংবাদিক আব্দুল্লাহ'র বাড়ীতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় বিএনপি নেতা নাসির খন্দকারের লোকজন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিক। ওই দিন দিবাগত রাতেই (১২ নভেম্বর) বিএনপি নেতা নাসিরুল ইসলামকে হুকুমের আসামী করে সাংবাদিক আব্দুল্লাহ বোয়ালমারী থানায় একটি অভিযোগ দিলেও তার অভিযোগটি এখনও আমলে নেননি বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম রসুল। এরপর ওই ব্যবসায়ীকে দিয়ে চাঁদাবাজির মামলা করান স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ওই বিএনপি নেতা। এর আগে 'সাংবাদিক আব্দুল্লাহকে ফোনে গালাগালি করা, তার পা ভেঙে বাড়ি ছাড়া করা ও মামলা দিয়ে পুলিশকে দিয়ে ধরিয়ে নিবেন বলে হুমকি-ধামকি দেওয়া বিএনপি নেতা খন্দকার নাসিরুল ইসলাম' কণ্ঠ সাদৃশ্য একটি অডিও রেকর্ড ফেসবুক সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস করেন সাংবাদিক আব্দুল্লাহ। যা মুহুর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
এদিকে, অনতিবিলম্বে মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন ফরিদপুর জেলায় কর্মরত বেশ কিছু সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
আব্দুল্লাহ জানান, ৫ আগস্টের পর সাতৈর বাজারে নাসিরুলের লোকজন বিশাল শোডাউন দিয়ে আতঙ্ক ছড়ায়। ওই মিছিলে অংশগ্রহণকারী সবার হাতে রাম'দা, চাপাতি ও পিস্তল ছিলো, যা দিয়ে বাজারের সবাইকে আতংকিত করে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি ও একাধিক ব্যক্তিকে মারধর করারও অভিযোগ আছে।
তিনি আরো জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের ওই কর্মকর্তা নিজের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপকর্ম ঢাকতে খন্দকার নাসিরুলকে পক্ষে নিয়ে নেন। এর পর নাসিরুল সাংবাদিক আব্দুল্লাহকে মুঠোফোনে গালিগালাজ, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে ফেলা এবং হাত-পা ভেঙ্গে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয়ার হুমকি-ধমকি দেন। পরে ওই কল রেকর্ড বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ফেসবুকে প্রকাশিত হলে আরো ক্ষিপ্ত হন খন্দকার নাসিরুল। লোকজন দিয়ে ১২ নভেম্বর আব্দুল্লাহর বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করে। ওই রাত্রে সাংবাদিক খন্দকার আব্দুল্লাহ বাদি হয়ে খন্দকার নাসিরুল ইসলামসহ সহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে বোয়ালমারী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন বলে জানান আব্দুল্লাহ। নাসিরুলের ইন্দনে অবৈধ সার ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানকে দিয়ে একটি মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ সম্মেলন করে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয় বলেও জানান তিনি। বোয়ালমারী থানার ওসি মো. গোলাম রসুল ওই সাংবাদিকের করা অভিযোগটি আমলে না নিলেও ব্যবসায়ী মিজানুরের অভিযোগটি দ্রুতই আমলে নিয়ে ওসি বৈষম্যের পরিচয় দিয়েছেন বলেও দাবি করেন আব্দুল্লাহ।
এ বিষয়ে একাধিক মাধ্যমে খন্দকার নাসিরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব যায়নি। তবে সাতৈরের তার এক ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, 'আমাদের নেতা খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও সাংবাদিক খন্দকার আব্দুল্লাহ পরস্পরের আত্মীয়। কেনো এমনটি হচ্ছে আমার জানা নাই। তবে এতে আমাদের প্রিয় নেতা খন্দকার নাসিরুল সাহেব রাজনৈতিকভাবে কিছুটা হলেও খতিগ্রস্থ হচ্ছেন বলেও জানান তিনি।’
সাংবাদিক আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে ওই ব্যবসায়ীর করা মামলাটি ৪/৫ দিন আগেই বোয়ালমারী থানা পুলিশ আমলে নিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন ওই মামলাটির রেকর্ডিং কর্মকর্তা ও বোয়ামারী থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মজিবর রহমান।
এসব বিষয়ে বোয়ালমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম রাশেদুল হাসান জানান, ‘সাংবাদিক আব্দুল্লাহ'র অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমাদের ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকলে সেগুলো আপনারা তদন্ত করে সঠিক তথ্য তুলে ধরুন, আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো।’
মামলার বাদী ব্যবসায়ী মো. মিজানুর রহমান এজাহারে ১০ হাজার টাকা চাঁদা চেয়েছিলো সাংবাদিক আব্দুল্লাহ এবং অস্বীকৃতি জানালে তাকে গালাগালির করেছেন বলে মামলার অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেছেন ব্যবসায়ী মিজান।
এসব বিষয়ে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম রসুল মুঠোফোনে জানান, 'খন্দকার আব্দুল্লাহ যে সাংবাদিক এসব তো এলাকার কেউ বলে না ভাই। তিনি কোন পত্রিকার কাজ করেন? 'আমার কাছে এক ব্যবসায়ীর করা চাঁদাবাজীর মামলার আসামী আব্দুল্লাহ এবং এই মুহুর্তে আসামী আব্দুল্লাহ পলাতক রয়েছে' বলেও জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম রসুল।
এদিকে, খন্দকার আব্দুল্লাহ সম্পর্কে জানতে রাজধানী টিভি বার্তা সম্পাদক রাশেদ স্বপনকে ফোন করা হলে তিনি জানান, 'খন্দকার আব্দুল্লাহ ফরিদপুরে কর্মরত রাজধানী টিভি'র একজন সুনামধন্য স্টাফ রিপোর্টার। কিছুদিন আগে ওর বাসায় হামলা ও লুটপাট হয়েছে, এখন আবার চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে, শুনে খারাপ লাগলো। আমার জানা মতে, ও যে পরিবারের সন্তান এবং যেমন প্রকৃতির মানুষ ওর নামে মামলা হওয়াটা দুঃখজনক।’
তিনি আরো বলেন, আমি মনে করি আব্দুল্লাহ বিরুদ্ধে চাঁদা দাবি করার ব্যাপারটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক ছাড়া আর কিছুই নয়। এভাবে সাংবাদিক নিপিড়ন হতে থাকলে দেশে স্বাধীন ও মুক্ত সাংবাদিকতার জন্য প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবে'। আমি আমাদের গণমাধ্যম (রাজধানী টিভি)-এর সকল সংবাদকর্মীর পক্ষ থেকে এই মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি এবং সাংবাদিক আব্দুল্লাহ'র বিরুদ্ধে হওয়া এমন নেক্কারজনক, হয়রানীমূলক, মিথ্যা মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি বলেও জানান রাশেদ স্বপন।
(আরআর/এসপি/ডিসেম্বর ০২, ২০২৪)