চিন্ময় প্রভুর মুক্তি ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে অস্ট্রেলিয়ার ৩ শহরে একযোগে প্রতিবাদ
বিশ্বজিৎ বসু, পার্থ থেকে : বাংলাদেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর চলমান নির্যাতন বন্ধ, নির্যাতনকারীদের বিচার, চিন্ময় প্রভুর মুক্তি এবং সনাতনীসহ সকল সংখ্যালঘু নেতৃবৃন্দের নামে মিথা মামলা প্রত্যাহারের দবিতে অস্ট্রেলিয়ার পার্থে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রবিবার প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে ‘অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেশন ফর এথনিক অ্যাণ্ড রিলিজিয়াস মাইনোরিটিস ইন বাংলাদেশ’ (এএফইআরএমবি)।
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার রাজধানীর পার্থ এর প্রাণকেন্দ্র ফরেস্ট প্লেসে অনুষ্ঠিত এ প্রতিবাদ সভায় বক্তারা ১৯৪৬ সাল থেকে এ ভুখন্ডে সংখ্যালঘু নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন। পার্থে বসবাসকারী প্রবাসী সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সব এথনিক মাইনোরিটি সম্প্রদায়ের সকল সদস্যরা প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
উপস্থিত সদস্যরা চিন্ময় প্রভুর মুক্তি, সংখ্যালঘু নির্যাতনের ছবি, আট দফা দাবির প্লাকার্ড নিয়ে প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত হন এবং সনাতনিদের অধিকার নিয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকেন।
প্রতিবাদ সভা শুরু হয় বাংলাদেশ এবং অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে। এরপর সাম্প্রতিক সংঘাতময় সময়ে বাংলাদেশে নিহত সকলের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
অস্পরী চন্দনে সঞ্চালনায় প্রথমেই বক্তব্যে রাখেন অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেশন ফর এথনিক অ্যাণ্ড রিলিজিয়াস মাইনোরিটিস ইন বাংলাদেশ (এএফইআরএমবি)-এর পরিচালক শর্মিষ্ঠা সাহা।
সভায় বক্তব্য রাখেন ডাঃ গৌতম শর্মা, ড. বিদ্যুৎ বণিক, ড. জহর চৌধুরী, বিশ্বজিৎ ঘোষ, বিশ্বজিৎ বসু, উজ্জ্বল দাস, সৌভজিৎ সরকার।
বক্তারা গত তিন মাস ধরে চলা সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন, চট্টগ্রামের হাজারী লেনে হামলা, সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারীসহ অন্যান্য ব্যক্তিদের গ্রেফতারও তাঁদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা, চিন্ময় প্রভুর জামিন নাকচ এবং তৎপরবর্তী দেশ ব্যাপী নারকীয় হামলা, মন্দিরও বাড়িঘর ভাঙচুর এবং নির্যাতনের প্রতিবাদ করেন এবং অবিলম্বে চিন্ময় প্রভূসহ সকলের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা প্রত্যাহার তার মুক্তিসহ সকল হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি।
বক্তারা বিক্ষোভে বিস্ময় প্রকাশ করে বক্তারা বলেন সনাতনীরা বাংলাদেশে অর্ধশতাব্দীর অমানুষিক নির্যাতনের অবসান ঘটাতে আট-দফা দাবির যে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালাচ্ছে, সরকার তাকে অগণতান্ত্রিক, অমানবিকও বর্বরোচিত কায়দায় দমন করার চেষ্টা করছে যা অতীতের সকল নির্যাতনের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন ছবি এবং ভিডিওগুলো ভেসে বেড়াচ্ছে। অথচ সরকার মিডিয়ায় এসব খবর প্রকাশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সরকারের প্রতিনিধিরা চরম মিথ্যাচার করে এসব ঘটনাকে অসত্য বলে প্রচার করছে। প্রতিবাদ সভায় বক্তব্যের মাঝামাঝি পরিবশেন করা হয দেশাত্মবোধক গান। গান পরিবশেন করেন তন্ময় দেবদাথ, ছোটন দাস, পৃথুল বিস্ময় এবং নিমিষা দেবনাথ।
সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নিম্নোক্ত আশু ও দীর্ঘ মেয়াদী দাবি পেশ করা হয়।
১. চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী এবং অন্যান্যদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি
২. তাঁর বিরুদ্ধে এবং অন্যান্য মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাহার
৩. সংখ্যালঘু নির্যাতন অবিলম্বে বন্ধ করে আইন শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং সংখ্যালঘুদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেয়া
৪. শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা।
৫. বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
দাবিগুলো পড়ে শোনান ড. তন্ময় দেবনাথ। প্রতিবাদ সভায় সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার চ্যাপ্টারের সভাপতি প্রভিনা মিত্তাল, হিন্দু কাউন্সিল ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক বিজু কুমার এবং অস্ট্রেলিয়ান হিন্দু এসোসিয়েশনের সহ সভাপতি সুকুমার শংকর। সভার শেষে উপস্থিত সবাইকে শুভেচ্ছা জানান অনু শর্মা।
অস্ট্রেলিয়ার পার্থ ছাড়াও একই সময়ে সিডনি, মেলবোর্নে একই দাবিতে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেশন ফর এথনিক অ্যাণ্ড রিলিজিয়াস মাইনোরিটিস ইন বাংলাদেশ (এএফইআরএমবি) অস্ট্রেলিয়ার ২৫ সংগঠনের একটি ফেডারেশন।
(বিএস/এসপি/ডিসেম্বর ০২, ২০২৪)